আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ষোড়শতম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন গেটিস বার্গের বক্তৃতায় গণতন্ত্রের একটি চমৎকার সংজ্ঞা দিয়েছিলেন –Government of the people, by the people, and for the people shall not perish from the earth.
কিন্তু এদেশে হাছিনা , খাইরুল হক , নুরুল হুদা , ওবায়দুল কাদেররা মিলে যে গণতন্ত্র দেখাচ্ছে তাতে নির্বিঘ্নে বলা যায় যে এই সরকার বাটপারদের সরকার ( Of the Batpar ) , বাটপার কর্তৃক গঠিত সরকার (By the Batpar) এবং বাটপারদের জন্যে নিবেদিত সরকার (For the Batpar) । এই সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে খাইরুল হক , নুরুল হুদা এবং গোপালী পুলিশ । এই সরকার গঠিত হয়েছে শাহেদ -সাবরীনাদের গড ফাদারদের নিয়ে । এই সরকার নিবেদিত পাপিয়া ও সম্রাটদের উন্নয়ণ ও কল্যাণের জন্যে । এই দেশটি সিঙ্গাপুর , সুইজারল্যান্ড হয়েছে শাহেদ , সাবরীনা , পাপিয়া , পাপলু, পি কে হালদার, জি কে শামীম ও সম্রাটদের জন্যে ।
এ প্রসঙ্গে বিচারপতি হাবিবুর রহমানের কথাটিই বার বার মনে পড়ে । আওয়ামী বলয়ের সেই সুশীল ঘরানার বিচারপতি ২০১৩ সালেই বলে গেছেন , দেশটি পড়ে গেছে বাজিকরদের হাতে । শিরোনামটি তার সেই কথাটিরই প্রতিধ্বনী । বাটপারদের পরিধি ও প্রভাব বিস্তৃত হচ্ছে ।
ওবায়দুল কাদের , হাসান মাহমুদ , হানিফ , মোজাম্মেল বাবু , মরহুম গোলাম সারওয়ারদের মিনি এবং মাইক্রো ভার্সনও বেরিয়ে পড়েছে । ছোট্ট বাচ্চারাও বড়দের এই আর্ট রপ্ত করে ফেলেছে । এক ছোট্ট বাচ্চা প্রেস ক্লাবে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছে । ৭ই মার্চের ভাষণ প্রাইমারি পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভূক্ত করার জন্যে ও ‘ দেশরত্ন শেখ হাসিনার নিকট আবেদন জানিয়েছে। এতে করে দেশের সকল শিশু ছোট থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর ভালোবাসা ও দেশপ্রেম বোধে জাগ্রত হবে ।’
সঙ্গত কারণেই এই দেশটি ধীরে ধীরে বাটপারদের দেশ বলে পরিচিতি পেয়ে যাচ্ছে । ইন্টারনেট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে ছোটখাটো সংবাদও ভাইরাল হয়ে বিশ্বের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ে । নির্বাচনের নামে এদেশে আসলে কী হয়েছে বা হচ্ছে তা পুরো বিশ্বই জেনে গেছে । ২০১৮ সালের তামাশার সেই নির্বাচনকে ওয়াশিংটন পোষ্ট , নিউইয়র্ক টাইমস , দা গার্ডিয়ান , আলজাজিরা সহ বিশ্বের নামীদামী সকল মিডিয়া ঠাট্টা করে উত্তর কোরিয়ার নির্বাচনের সাথে তুলনা করেছিল । এরা আসলেই কাউয়া , খড় দিয়ে খাবার লুকিয়ে আত্মতৃপ্তিতে ভুগছে ,ভাবছে কেউ দেখছে না !
এমতাবস্থায় এক বাটপার যখন বলেন আমাদের নির্বাচন থেকে আমেরিকার শেখার রয়েছে । তখন বিশ্ববাসীর ঠোঁট থেকে একটি কথাই বেরিয়ে আসছে , ‘ হায় রে বাটপার ! ’ আমেরিকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ কতটুকু শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে গেছে তা সেখানকার সেনা প্রধানের সাম্প্রতিক বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট হয়েছে ।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ক্ষমতা ছাড়তে টালবাহানা করছে তখন আমেরিকার সেনাবাহিনীর জয়েন্ট চীফ অব স্টাফ জেনারেল মার্ক মিলি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন , “ আমরা কোনো রাণী , রাজা , অত্যাচারী বা স্বৈরশাসকের সেবা করার জন্যে শপথ নেই নাই । কিংবা কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্যেও নয় । আমরা শপথ নিয়েছি সংবিধান রক্ষা করার জন্যে । ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে গিয়ে আমরা আমাদের সংবিধানের মর্যাদা রক্ষা করব । ‘
যে আমেরিকা এমন সেনা প্রধান সৃষ্টি করেছে , যে আমেরিকায় গত দুই শ ত্রিশ বছর যাবত নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়ে এসেছে – একবারের জন্যেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি , ট্রাম্পের মত একটা অথরিটারিয়ান ও উন্মাদও যেখানে সেখানকার নির্বাচনী প্রতিষ্ঠানগুলির সামান্য ক্ষতি করতে পারে নাই সেই আমেরিকাকে নির্বাচন নিয়ে শেখানোর ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে এমন এক বাটপার যে একটি দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে পুরাপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে ।
২০১৩ সালের নির্বাচন নিয়ে এক বাটপারি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে । পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কাউয়া দেশে এসে প্রচার করে যে ব্রিটিশ সরকার আমাদের গত নির্বাচনকে প্রশংসা করেছে । এই বাটপারি ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতরের গোচরে চলে যায় ,সাথে সাথে প্রতিবাদ পাঠায় । ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী দৈনিক নয়া দিগন্তে এই ধরণের কয়েকটি গ্লোবাল বাটপারি এবং কাউয়াদের ধরা খাওয়া নিয়ে সে সময় একটি কলাম লিখেছিলেন ।
বুশ ব্লেয়ার শুনিয়েছে প্রি- এম্পটিভ ওয়ার । অর্থাৎ শত্রু আক্রমণের আগেই তাকে আক্রমণ করে গুড়িয়ে দেয়া । তদ্রুপ এদেশে শুরু হয়েছে প্রি-এম্পটিভ বাসে আগুন । বিরোধী দল আন্দোলন শুরু করার আগেই নিজেরাই বাসে আগুন লাগিয়ে সেই দোষ বিরোধী দলের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া । কাউয়াদের সেই একই আত্মপুলক , মনে করছে তাদের এই কাজ কেউ টের পাচ্ছে না ! এই কৌশলে বাসে আগুন দিয়ে শুধু বিরোধী দলের সম্ভাব্য আন্দোলনকেই থামানো হয় নাই – এটাকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্যে বিরোধীদলের নেতাদের তথাকথিত ফোনালাপও রেডি করে রাখা হয়েছে । স্বয়ং শয়তানও এদেরকে স্যালুট করে গুরু বলে পথ ছেড়ে দিবে বলে মনে হয় ।
গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উপকরণ চক্ষু লজ্জা । এই জিনিসটিই এই কাউয়াদের নেই । সকলেই দেখতে পাচ্ছে অত্যন্ত নির্লজ্জভাবে রাষ্ট্র যন্ত্রকে ব্যবহার করে বিরোধীদলকে দমিয়ে রাখা হয়েছে । এরপরেও এই কাউয়ার মত আত্মতৃপ্তি নিয়ে বলেন ,জনগণ বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে দিবে না , বিএনপির আন্দোলনে মরা গাঙে জোয়ার আসে না । অথচ কী কৌশলে রাজনীতির এই গাঙটিকে এই কাউয়ারা মরা বানিয়ে রেখেছে , তা সকলেরই জানা আছে । এগুলি রাজনীতি নয় , স্রেফ বাটপারি ।
দুই.
বিএনপি নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরতে তিন বাটপার ও এক ব্রাহ্মনের গল্প শুনিয়েছেন । গল্পটি ইউটিউবে শুনে খুবই প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে ।এক ব্রাহ্মণ একটি ছাগলের বাচ্চা মাথায় নিয়ে যাচ্ছেন । তিন বাটপার মিলে মতলব আঁটলো ব্রাহ্মণের এই ছাগল দিয়ে নিজেদের উদর পূর্তি করতে হবে । পরামর্শ মত ব্রাহ্মণের যাওয়ার পথের তিন জায়গায় তিন বাটপার দেখা করে।
প্রথম জন অনেক সময় ধরে ব্রাহ্মণকে প্রণাম করে উপরের দিকে তাকিয়ে আৎকে উঠে , হায় গুরুদেব , আপনার মাথায় কুকুরের ছানা কেন ? এটা শুনে ব্রাহ্মণ মশায় একটা ধমক দেয় । আবার আপন মনে চলতে থাকে । কিছুক্ষণ পর দ্বিতীয় বাটপার আরো লম্বা সময় নিয়ে প্রণাম করে এবং উল্টা দিকে রওনা দেয় । ব্রাহ্মণ পরম স্বস্তি নিয়ে এগুতে থাকে । কিন্তু এক মুহূর্ত পরেই পেছন থেকে গুরুদেব বলে চিৎকার দিয়ে উঠে , গুরুদেব !আপনার মাথায় কুকুরের বাচ্চা দেখছি কেন ? এবার ব্রাহ্মণ একটু খটকায় পড়ে যায় । ছাগলের বাচ্চাটি মাথা থেকে নামিয়ে আরেকবার দেখে এবং বাটপারের দিকে তীর্যক দৃষ্টি হেনে সামনে এগিয়ে যায় । একটু পরে তৃতীয় বাটপার সামনে আসে । সে আরও লম্বা প্রণাম দিয়ে ব্রাহ্মণের মাথার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠার ভাণ করে একই কথা বলে । এবার ব্রাহ্মণ নিজের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে । তারপরেও সামনে এগুতে থাকে ।তিন নম্বর বাটপার সাথে সাথে এগোয় , ‘ ঠিক আছে গুরুদেব ! আমি গ্রামে গিয়ে জানিয়ে দিচ্ছি । এটা শুনলে মনে হয় না গ্রামের কোনো মানুষ পূজা দিতে আপনার কাছে আসবে ! ’
শেষোক্ত কথাটি কাজে দিল ।
ব্রাহ্মণ ছাগলের বাচ্চাটি মাথা থেকে ফেলে সামনে রওনা দিল।
উৎফুল্ল তিন বাটপার সেই ছাগল জবাই দিয়ে মজা করে খেল ।
একইভাবে এদেশে বাটপারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে তিনটি ধাপ অনুসরন করা হয় ।
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রথম বাটপার গ্রুপ অব কোম্পানিজের উদয় হয় । এরা দেশবাসীকে ব্যর্থ রাষ্ট্রের ভয় দেখাতে শুরু করে ।৫০০ জায়গা থেকে পটকা ফুটিয়ে দেশকে জঙ্গীবাদী তকমা লাগিয়ে দেয় । । যুবলীগ নেতা মির্জা আজমের দুলাভাইকে দিয়ে জেএমবি এবং বাংলা ভাই তৈরি করে ।এ সংক্রান্ত আরো কিছু কাজ করে ।
তারপর ২০০৭ থেকে উদয় হয় এক- এগারোর বাটপার । জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির চিঠি জাল করে বাটপার মইন ইউ আহমেদ । জাতিসংঘের শান্তি রক্ষী বাহিনীতে নাকি আমাদের মিশনগুলি বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছিল ! এটা ছিল সেই বাটপারের স্রেফ ধাপ্পাবাজি !
এই বাটপাররাই দেশের চরম সর্বনাশ করে বর্তমান তিন নম্বর বাটপার জাতির ঘাড়ে বসিয়ে গেছে ।
এই বিশ্ববাটপাররা দেশের মানুষকে জঙ্গী বলে বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করেছে । হাজী শরীয়তুল্লাহ , তিতুমীর এবং সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন শিরাজীর উত্তরসূরি এদেশের আলেম ওলামাদের জঙ্গী বানিয়ে বিশ্ববাসীকে আতংকিত রেখে ক্ষমতার মসনদটি পাকা করেছে ।
এখন সব বাটপার মিলে ছাগল ছানা রূপী দেশটিকে ভক্ষণ করছে !