ভাই-বোনের এই সম্পর্কটি আমি নিজে পাতাতে চাই নি কিংবা বানাতে চাই নি। সাংবাদিক পীর হাবিবের একটি লেখা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই সম্পর্কটি পাতিয়েছি। পীর সাহেব তার একটি লেখায় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, জো বাইডেন শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে অতি শীঘ্রই বাংলাদেশে আসবেন। কমলা হ্যারিসকে সাক্ষাত মাত্রই শেখ হাসিনা নাকি নিজের বোন বানিয়ে ফেলবেন। বিষয়টি খুবই ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে।
ভিন্ন মতাবলম্বীদের সাথে আচরণ, প্রতিপক্ষকে আক্রমণের সময় চোখের ও মুখের মাংসপেশির সংকোচন-প্রসারণ, ক্ষমতার প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আকর্ষণ, এরকম অনেক ব্যাপারে মিল-অমিল টেনে মনে প্রশ্ন জাগে, বোনটি আসলে কার, কমলার নাকি ট্রাম্পের?
বিশ্বের নানা দেশের নেতৃবর্গকে আবেগে লেপটিয়ে ভাই-বোন বা স্বামী বানানোর এ চিকনা ও অদ্ভুত কৌশলটি একমাত্র ইন্ডিয়া ছাড়া আর কোথায়ও কাজে লাগে নাই। ইন্ডিয়ার মতলববাজ নেতা-নেত্রীরা এই বালিকাসুলভ উচ্ছ্বাস বিশেষ কারণে উপভোগ করে। গ্লোবাল ভিলেইজের এই বিস্ময় বালিকা তাদেরকে যা দিয়েছে তা কোনোদিন ভুলতে পারবে না। আপনাদের হয়তোবা স্মরণ আছে যে যুক্তরাজ্যের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শপথ নেয়ার পর শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে দেশ থেকে আনা আমের ঝুড়ি উপহার হিসাবে পাঠানো হয়েছিল। অদ্ভুত এই উপহারটি নিয়ে দশ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট অত্যন্ত বিব্রত অবস্থায় পড়ে গিয়েছিল। যাইহোক, কমলা হ্যারিসের ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স পীর হাবিবদের কল্পিত মানের থাকলে তিনি কখনোই আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন না।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো যখন শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ান, তখন নাকি পীর হাবিবের কাছে মনে হয়- দুই প্রধানমন্ত্রী নহেন, মমতাময়ী বড় বোনের পাশে স্নেহের ছোটভাই দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
কপালপোড়া দেশবাসীকে (রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে) এই আবেগগত উপদ্রবসমূহ অনেক সইতে হয়। পশ্চিম বাংলার গুণীজনদের নিজ বাসায় এনে এদেশের গুণীজন ভক্তরা কী করবে না করবে ভেবে পায় না। কলকাতায় সেই গুণীজনদের বাসায় গিয়ে খালি পেট ও এক বুক জ্বালা নিয়ে ফিরতে হয়। অনেকেই লজ্জায় সেই গোপন বেদনার কথা প্রকাশ করেন না।
বাংলাদেশের এক নায়িকা বোম্বে গিয়ে রাণী মুখার্জীকে দেখে নাকি পাগলপারা হয়ে যায়। ঘটনাটি হুমায়ূন আহমেদ পরবর্তীতে তার এক লেখায় বর্ণনা করেছেন। রাণীকে দেখে নাকি বলে, ওহ্ মাই গড, রাণী তুমি আমার সামনে। আমি কি স্বপ্ন দেখছি না কি? আমি কি তোমাকে একটু ছুঁয়ে দেখতে পারি? ব্রাহ্মণ কন্যা রাণী একটু সরে গিয়ে স্পষ্ট ইংরেজিতে বলেন, “ডোন্ট টাচ মি”। বাংলাদেশী নায়িকার এই ন্যাকামি/ছ্যাঁচড়ামি দেখে অত্যন্ত মর্মাহত হয়ে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে এই ধরণের ট্যুরে তিনি আর জীবনেও যাবেন না।
একই মহল থেকে অন্য আরেকটি লেখাও দৃষ্টিতে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, “বারাক ওবামার রানিং মেট থাকাকালে বিভিন্ন ফোরামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা হয়েছিল সে সময়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। দুই নেতার এই আগাম জানাশোনা আগামী দিনের কূটনৈতিক সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা বিশ্লেষকদের।”
বিভিন্ন ফোরামে একটু খানি হাই হ্যালো বললেই সম্পর্ক গভীর হয়ে যায়, এই হলো মারাত্মক বিশ্লেষকদের এই বিশ্লেষণ!
আজব এই দেশটিতে তাজব কিসিমের কিছু সাংবাদিকের জন্ম হয়েছে। এদের মগজসহ গিলা কলিজা ঠিকঠাক আছে কি না তা গবেষণার বিষয়। কেউ নোবেল প্রাইজের জন্যে চাতক পাখির মত চেয়ে থাকা নেত্রীকে জনসমক্ষে লবিংয়ের জন্যে পরামর্শ দেয়। কেউ নেত্রীকে বিশ্ব মিডিয়া তাদের কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছে বলে বিলাপ করে। এরকম বিলাপের সেই দিন থেকে এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। গত এক বছরে নেত্রী বিশ্ব মিডিয়ার কারো সঙ্গে এক মিনিট কথা বলেছেন বলে জানা যায় নি।
এরা এই সব নির্লজ্জ মোসাহেবি এমন সময়ে করেছে, যখন পুরো বিশ্বটি ফকফকা হয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে। হাতে থাকা মোবাইল সেটটি থেকে মুহুর্তেই সকলে জেনে যাচ্ছে, কোথায় কী হচ্ছে।
৯/১১ এর পরে পশ্চিমাবিশ্বে যে ইসলামোফোবিয়ার স্রোত সৃষ্টি হয়েছিল তারই প্রত্যক্ষ ফসল এই ট্রাম্প। বিশ্বের প্রায় দুইশ কোটি মানুষকে এভাবে মার্জিনালাইজ করে ফেলার প্রত্যক্ষ ফলাফল পশ্চিমা গণতান্ত্রিক বিশ্ব উপলব্ধি করতে শুরু করেছে। এই প্রবণতা বিশ্বটিকে কেমন অস্থিতিশীল ও অনিরাপদ বানিয়ে ফেলতে পারে সেই বোধ ও ভাবনাটি নতুন করে জায়গা পাচ্ছে বিশ্ব নেতৃত্বের মনে। সেই উপলব্ধির ফল একদা ওবামার সহচর জো বাইডেনের মুসলমানদের উদ্দেশ্যে কিছু বিশেষ ঘোষণা।
অনেকেই যুক্তি দেখাচ্ছে যে বারাক ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাবস্থাতেও এদেশের গণতন্ত্র ও মুসলমানদের স্বার্থবিরোধী সকল কর্মের সহযোগী ছিলেন এই জো বাইডেন। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ধ্বসটিকে ওবামা প্রশাসন অত্যন্ত সহজ ভাবেই মেনে নিয়েছিল কিংবা তা করতে প্রকারান্তরে সহযোগিতা করেছিল। তাদের পুরো দুই টার্ম সময়ে ওয়াশিংটন ঢাকাকে দেখেছে দিল্লীর চোখ দিয়ে।
তবে এই অভিজ্ঞতা আমেরিকার জন্যে সুখকর হয় নাই, ফলাফল পেতেও যুক্তরাষ্ট্রের খুব বেশি সময় লাগেনি। এসময় অনেক গোপন মাইর সহ্য করতে হয়েছে। তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে ওদের এম্বাসেডরকে ডাকা হয়েছে কাজের মেয়ে মর্জিনা। সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে ডাকা হয়েছে দুই আনার মন্ত্রী। রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে আক্রমণও করা হয়েছে নিজেদের গুণ্ডা বাহিনী দিয়ে। এগুলি ফরগিভ করলেও যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত ফরগেট করে নাই। এসবের বদলা নেয়ার সেই সুযোগটি এসেছে কি না বলা যাবে না। কমলার ইন্ডিয়ান যোগসূত্র দেখে পীর হাবিবরা উচ্ছ্বসিত। কিন্তু দুই আনার মন্ত্রী বলে যাকে উপহাস করা হয়েছিল সেই নিশা দেশাই ও ছিলেন একজন ইন্ডিয়ান আমেরিকান। কাজেই শেখ হাসিনা বোন বলে ডাক দিলেই কমলা গলে পড়বেন, পীর হাবিবদের সেই আশায় গুড়েবালি হতে পারে।
একটি সুন্দর সিস্টেম থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্পের মত রং-হেডেড মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের সর্বোচ্চ নির্বাহীর অফিসে ঢুকে পড়েছিল। আবার পুরো সিস্টেম বা মেকানিজমটি ঠিকঠাক ছিল বলেই এই রং-হেডেড ব্যক্তিটি সঠিক সময়ে ডিসচার্জ বা নির্গত হয়ে গেছে।
ট্রাম্পের বোন এই দেশে সেই সিস্টেমটিই ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন সেই সিস্টেমটি কিভাবে ফিরিয়ে আনা সম্ভব- সেটিই এখন বড় প্রশ্ন!
মামলা-হুমকি-ধমকি-গালি খাওয়ার পরেও লেখালেখি অব্যাহত রেখেছি সেরকম একটি সিস্টেম তৈরির লোভ থেকেই। একটি ভালো সিস্টেম একটা দুটো রংহেডেড বা ক্ষতিকর ইলিমেন্ট এবজর্ব করতে পারে। কিন্তু পুরো সিস্টেমটি নষ্ট হয়ে পড়লে সেই জাতির সমূহ বিপদ। সেই বিপদেই পড়েছে প্রিয় জন্মভূমি।
পীর হাবিবরা যেটি শেখ হাসিনার কারিশমা বলে বুঝাতে চাচ্ছেন সেটি মূলত দেশ, জাতি ও ধর্মের ক্ষতি মেনে নেয়ার তার বিস্ময়কর মানসিক শক্তি। সবার পক্ষে এটি সম্ভব নয়। ইসলামোফোবিক বিশ্ব যাতে খুশী হয় সেই কাজই তিনি করেছেন। নির্বিচারে আলেম-ওলামা হত্যা করে, ভিন্ন মতাবলম্বী আলেমদের জঙ্গি বানিয়ে তিনি ইসলামোফোবিক বিশ্বের গুডবুকে চলে গেছেন। এটি ওর কারিশমা নয়- এটি জাতির আপদ। মুসলিম জাহানের পুড়ছে ঘর, তাতে শুকিয়ে নিচ্ছে এরা এদের ভেজা কাপড়।