- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ৩০ জুন ২০২০
নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম বিভিন্ন ধরণের নৌযান। অন্য যোগাযোগ মাধ্যমের তুলনায় নিরাপদ এবং ব্যয়-সাশ্রয়ী হওয়ায় দেশের যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের একটি বড় অংশ এখনো নৌপথেই হয়ে থাকে।
বেসরকারি সংস্থা কোস্ট বিডির গবেষণা অনুযায়ী, গত ২০ বছরে বাংলাদেশের নৌপথে বড় ১২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, এতে দেড় হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন।
সংস্থাটির একজন যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ মুজিবুল হক মুনির বলেছেন, লঞ্চডুবির বড় ঘটনাগুলোর অনেকগুলোই ঘটেছে মেঘনা নদীতে।
প্রাণহানির হিসাবে দেশের নৌপথে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনার কয়েকটি সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক। দেশের নৌযান কর্তৃপক্ষ, নৌনিরাপত্তা এবং যাত্রী পরিবহন নিয়ে কাজ করেন এমন সংস্থার সাথে কথা বলে এই তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে।
পিনাক-৬
২০১৪ সালের ৪ অগাস্ট ২৫০’র বেশি যাত্রী নিয়ে পদ্মা নদীতে ডুবে যায় পিনাক-৬ নামের একটি লঞ্চ।
নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিএ জানিয়েছে, ওই লঞ্চটি তোলা সম্ভব হয়নি, এবং এর ধ্বংসাবশেষও কখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ডুবে যাওয়া লঞ্চ থেকে ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছিল, আর ৫০ জন যাত্রীর খোঁজ পাওয়া যায়নি। বাকীরা সাঁতরে এবং জেলেদের সহায়তায় তীরে উঠতে পেরেছিলেন।
এমভি নাসরিন-১
২০০৩ সালের ৮ জুলাই ঢাকা থেকে ভোলার লালমোহনগামী এমভি নাসরিন-১ নামের লঞ্চটি চাঁদপুরের মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মোহনায় ডুবে যায়।
বিআইডব্লিউটিএ বলছে, অতিরিক্ত যাত্রী ও মালবোঝাইয়ের কারণে লঞ্চটির তলা ফেটে গিয়েছিল।
ডুবে যাওয়ার সময় লঞ্চটিতে কত যাত্রী ছিলেন সে বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য রয়েছে। তবে ওই দুর্ঘটনায় সরকারি হিসাবে প্রায় সাড়ে ৬০০ লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলছিলেন, মৃত্যুর হিসেবে এই লঞ্চডুবিকে দেশের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা বলা হয়।
এমভি সালাউদ্দিন-২
২০০২ সালের ৩ মে চাঁদপুরের ষাটনল সংলগ্ন মেঘনা নদীতে ডুবে যায় সালাহউদ্দিন-২ নামের যাত্রীবাহী লঞ্চ। এতে ভোলা এবং পটুয়াখালীর প্রায় ৪০০ যাত্রী মারা গিয়েছিলেন।
ওই দুর্ঘটনার পর নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের করা একটি তদন্ত কমিটি নকশামতো লঞ্চ নির্মাণ না করায় মালিককে এবং অতিরিক্ত যাত্রী বহনের জন্য মাস্টারকে অভিযুক্ত করে।
এতে ওই লঞ্চের মালিককে জরিমানা এবং মাস্টারকে চাকরীচ্যুত করা হলেও অন্যদের শাস্তি হয়নি।
এমভি রাজহংসী
২০০০ সালের ২৯ ডিসেম্বর ঈদুল আজহার রাতে চাঁদপুরের মতলব উপজেলার ষাটনল এলাকায় মেঘনা নদীতে এমভি জলকপোত এবং এমভি রাজহংসী নামের দুটি যাত্রীবাহী লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
এতে রাজহংসী লঞ্চটি পানিতে তলিয়ে যায়, সে সময় ওই লঞ্চের ১৬২ জন যাত্রী নিহত হয়েছিলেন।
অ্যাটলাস স্টার
১৯৮৬ সালে অ্যাটলাস স্টার নামে একটি লঞ্চ ডুবে ২০০ জন যাত্রী মারা গিয়েছিলেন।
লঞ্চটি ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন এবং খারাপ আবহাওয়ার কারণে ডুবে গিয়েছিল বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।
এছাড়া ২০০৫ সালে একটি ফেরী ডুবে গিয়ে ১১৮ জন যাত্রী নিহত হন, এবং ২০০৫ সালে এমএল মিতালি ও এমএল মজলিশ নামে দুইটি ছোট লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষের পর ডুবে গিয়ে প্রায় ৩০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল।
কোস্ট বিডির মুজিবুল হক মুনির বলছিলেন, ১৯৭২ সাল থেকে এ পর্যন্ত নৌদুর্ঘটনার জন্য দেশে ৫০০’র বেশি মামলা চলছে।
কিন্তু এর মধ্যে মাত্র একটি মামলার বিচার হবার নজির রয়েছে। বিবিসি