খালেদা জিয়া ছাড়া কোনো বর্ষ পালন সফল হবে না : মির্জা ফখরুল
- নিজস্ব প্রতিবেদক ০৭ মার্চ ২০২০
বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে বাংলাদেশে কোনো উৎসব সফল হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তিনি সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। তাকে কারাগারে আটক রেখে কোনো বর্ষই এখানে সফল হবে না।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ মন্তব্য করেন। শনিবার সকালে ঢাকা-১০ আসনের উপ-নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী শেখ রবিউল আলমসহ নেতা-কর্মীদের নিয়ে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে পুস্পমাল্য অর্পণ করেন।
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা তো শুধু সফলেরই প্রশ্ন না। এটা একটা মোকারি, প্রহসন। কারণ বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের জন্য সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন এবং ১৯৭১ সালেও যিনি স্বাধীনতার জন্যে কারাগারে ছিলেন পাকিস্তান বাহিনীর হাতে। গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য তিনি এখনো কারাগারে আছেন। তাকে আটক রেখে কোনো বর্ষই এখানে সফল হবে না।
খালেদা জিয়া কারা অন্তরীনের মধ্যেই ‘মুজিব জন্মশত বর্ষ’ পালন হচ্ছে-এটাকে কীভাবে দেখছেন প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার যে সংগ্রাম যে যুদ্ধ এর মূল চেতনাটা ছিলো গণতন্ত্রের সংগ্রাম, গণতন্ত্রের যুদ্ধ এবং এটাকে কেন্দ্র করেই দীর্ঘকাল ধরে আমাদের স্বাধীনতা দাবি উঠেছে, স্বাধিকারের আন্দোলন হয়েছে, সংগ্রাম হয়েছে, তারই পরিণতি হিসেবে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একাত্তরের ২৬ মার্চ যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে এবং দেশ স্বাধীন হয়েছে। শুধু একজন ব্যক্তি বা একটি গোষ্ঠি বা একটি দল কিন্তু এই স্বাধীনতার দাবিদার হতে পারে না। সমগ্র বাংলাদেশর মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে এই স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে। তারই ফলশ্রুতিতে যে আমরা দেখেছি যে, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে যার ঘোষণা দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। আমরা একটা স্বাধীন দেশ পেয়েছি।
দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে ‘মুজিব জন্মশত বর্ষ’ উপলক্ষে ১৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের প্রতিবাদে গত কয়েকদিন ধরে দেশের ইসলামী দলগুলো বিক্ষোভ করছে। এ ব্যাপারে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা তো আমাদের বক্তব্যে আগে বলেছি, খুব পরিস্কার করে বলেছি যে, বর্তমান বাংলাদেশে যে অবস্থা বিশেষ করে ভারতের এনআরসি-এসএসির পরে এরই মধ্যে যে দাঙ্গা হয়ে গেলো তার যে প্রভাব পড়েছে। সেই প্রভাবে উনার (নরেন্দ্র মোদি) এখানে আসাটা কতটুকু সমীচীন শোভনীয় এটা তারাই বিচার করবেন।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, বিএনপি নির্বাচনে সিরিয়াস নয়, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য তারা অংশ নিচ্ছে। সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ তো কত কথাই বলবে। জনগণের সমর্থন ছাড়া, ম্যান্ডেটবিহীন অবস্থায় শুধু অস্ত্র দিয়ে ক্ষমতা দখল করে বলে আছে। স্বাভাবিকভাবে তারা এই ধরনের কথা-বার্তা বলবে যাতে করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু সেটাতে তারা সক্ষম হয়নি। আমরা এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি গণতান্ত্রিক যে রীতি রয়েছে, যে নির্বাচনের মধ্য দিয়েই ক্ষমতার পরিবর্তন, আমরা সেটাতে বিশ্বাস করি বলেই আমরা এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আমরা আগেও বলেছি, এই নির্বাচনটা আমরা গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করবার এবং গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার একটা আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আমরা এই নির্বাচনে অত্যন্ত সিরিয়াস।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা প্রত্যেকটি নির্বাচনে সিরিয়াসলি অংশগ্রহন করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এই সরকার যারা ব্যাসিকেলি জনগণের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই, জনগণ তাদেরকে সমর্থন করে না, জোর করে ভয় দেখিয়ে, ভীতি দেখিয়ে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে তারা এই নির্বাচনটাকে তারা তাদের পক্ষে নিয়ে আসার চেষ্টা করে। সেটার প্রতিবাদ করার জন্য, তাকে প্রতিরোধ করার জন্য আমরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। সুতরাং তাদের যে যুক্তি সেই যুক্তি কোনোদিনই গ্রহণযোগ্য না।
ঢাকা-১০ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী শেখ রবিউল আলম নবীন। তার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সম্পর্কে কতটুকু আশাবাদী জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের প্রার্থী একজন সংগ্রামী, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামী একজন নেতা এবং ধানমন্ডি বিএনপির সভাপতি। ছাত্র রাজনতি করেছেন, দীর্ঘকাল রাজনীতি করছেন এবং এলাকায় তিনি যথেষ্ট জনপ্রিয় মানুষ। আমি বিশ্বাস করে সে অত্যন্ত মেধাবী ছেলে, তার মেধা দিয়ে সে কনট্রিবিউট করতে পারবে। সে তার এই যোগ্যতা প্রমাণ করে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে পারবে ইনশাআল্লাহ।
এ সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, প্রচার সম্পাদক শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, ঢাকা দক্ষিণ মহানগর সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, সহসভাপতি নবী উল্লাহ নবী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।