একুশের চেতনা ও গণতন্ত্র
ড. আবদুল লতিফ মাসুম | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০
গরিষ্ঠ মানুষের শাসন ‘রুল বাই দ্য মেজরিটি’ যদি হয় গণতন্ত্র তাহলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা, শিক্ষা, সংস্কৃতি তথা বিশ্বাস, আস্থা ও জীবনবোধও গণতন্ত্রের পরিপূরক। প্রাচীন গ্রিসে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের সময়কালে শুধু শাসনব্যবস্থাকে গণতন্ত্র বলা হতো এমন নয়। অষ্টাদশ শতাব্দীতে গণতন্ত্র যখন ‘জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে পুনঃপ্রত্যাবর্তন করে তখন জনগণের অধিকতর স্বার্থের প্রতিভূ হিসেবে তা প্রতিভাত হয়। বর্তমান সময়কালে যেখানে যে ব্যবস্থায় গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই সে ব্যবস্থাকেও তারা ‘গণতন্ত্র’ বলে দাবি করে। কানা ছেলের নাম পদ্মলোচনের মতো যে রাষ্ট্রে ব্যবস্থাটিই গণতন্ত্রের বিপরীত তার নাম হচ্ছে- ‘ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অব কোরিয়া’ (উত্তর কোরিয়া), ডেমোক্রেটিক কম্পোচিয়া অথবা অতীতের জার্মান ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক (পূর্ব জার্মানি)। গণতন্ত্রের জনপ্রিয়তা ও আধিপত্য এতটাই সম্প্রসারিত হয়েছে যে, জি ই ডাভি ভাবনির্ভর গুণ যেমন- বুদ্ধিমত্তা বা চেতনাকেও গণতন্ত্রের অনুষঙ্গ করেছেন। আমরা প্রায়ই বলি, গণতান্ত্রিক চেতনা, গণতান্ত্রিক বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় অথবা গণতান্ত্রিক আদর্শ। গণতন্ত্রের মুখ্য বিষয় ‘জনগণ’ অথবা এর ‘গরিষ্ঠ অংশ’। এখানে গণতন্ত্রের প্রয়োগ নৈর্ব্যত্তিক নয়, বরং তাদের ভাষা, মঙ্গলচিন্তা ও জীবনবোধের প্রতিফলন। সেই অর্থে জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের ভাষা গণতন্ত্রের সমার্থক। যখন আমরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য অথবা ভারতে গণতন্ত্রের প্রয়োগ-অপপ্রয়োগের কথা বলি তখন অনিবার্যভাবেই জনগণের অনুষঙ্গ হিসেবে ভাষার প্রশ্নটি আলোচিত হয়। প্রাচীন গ্রিসের গণতন্ত্রের প্রবর্তা পেরিক্লিস গণতন্ত্রের সাথে সহিষ্ণুতা ও জনগণের আশা-আকাক্সক্ষাকে সম্পৃক্ত করতে চেয়েছেন। অপর দিকে মনীষী প্লেটো-এরিস্টটল গণতন্ত্রকে ‘নিকৃষ্টতম শাসনব্যবস্থা বলে গণ্য করেছেন। তবে উভয় ক্ষেত্রেই জনগণের সার্বভৌমত্ব স্বীকৃত হয়েছে। এখানে সার্বভৌমত্ব মানে সীমান্ত বা মানচিত্র নয়, বরং জনস্বার্থ। সপ্তদশ শতাব্দী থেকে সবার স্বার্থ বা সমান অধিকার হিসেবে গণতন্ত্রের অভিব্যক্তি ক্রমেই প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। কলোনেল রেইনবোরাক ১৬৪৭ খ্রিষ্টাব্দে গণতন্ত্রকে প্রান্তিক জনগণের পর্যায়ে প্রসারিত করেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের তরফ থেকে পরিচালিত যেকোনো আন্দোলন, সংগ্রাম অথবা যুদ্ধ গণতন্ত্রের মূল মন্ত্রকেই প্রতিষ্ঠিত করে। সেই অর্থে ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত সংগঠিত আমাদের ভাষার সংগ্রাম ছিল প্রকৃত অর্থেই একটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন। পরবর্তীকালে একুশে ফেব্রুয়ারির রক্তাক্ত অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে পরিসমাপ্তি ঘটে। এখন আমাদের কাছে একুশ মানেই ‘মাথানত না করা’, ‘একুশ মানেই স্বাধীনতা’, ‘একুশ মানেই গণতন্ত্র’।
১৯৫২ সাল থেকে ১৯৭১ প্রসারিত প্রায় দুই দশক সময়কাল। দুটোরই উৎস গণতন্ত্রের অস্বীকার ও অঙ্গীকারে নিহিত। পাকিস্তানের স্রষ্টা কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত ভাষা আন্দোলনের সূচনা করে। একটি আরোপিত সিদ্ধান্তের ফলে মুছে যায় দেশভাগের রক্তাক্ত ইতিহাস। অবশেষে অনিবার্য করে তোলে পাকিস্তান নামের ‘অসম্ভব’ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা কেউ কেউ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে ‘সেন্টিমেন্ট’-এর পরিণতি বলে ব্যাখ্যা করেছেন। ধর্মের সেন্টিমেন্টের বদলে ভাষার সেন্টিমেন্ট অধিকতর গুরুত্ব অর্জন করে। পাকিস্তানের শাসক এলিটরা গণতন্ত্রের মাধ্যমে ‘জাতি গঠন’ করার পরিবর্তে গায়ের জোরে যে ‘রাষ্ট্র গঠনের’ প্রয়াস নেয় তা অবশেষে অনিবার্য ব্যবচ্ছেদ ডেকে আনে। ২১ পরবর্তী পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ‘পূর্বাঞ্চলে’ শাসক মুসলিম লীগের ভরাডুবির মাধ্যমে মনস্তাত্ত্বিক ভাঙ্গন শুরু হয়। তখনও সময় ছিল। কিন্তু গণতান্ত্রিক রাজনীতির পরিবর্তে ‘সামরিক’ স্বৈরতন্ত্রের মাধ্যমে দেশ শাসিত হতে থাকলে পাকিস্তানের বিপর্যয় ত্বরান্বিত হয়। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল অখণ্ড পাকিস্তানের রক্তাক্ত কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়। এ অঞ্চলের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হলে অন্তিম পাকিস্তানের হায়াৎ কিছুকাল বেড়ে যেত হয়তো। কিন্তু কূট-রাজনীতিক জুলফিকার আলী ভুট্টোর ক্ষমতার খায়েশে পাকিস্তানের তখতে তাউস উবে যায়। আর এসব কিছু হয় গণতন্ত্রের প্রতি অস্বীকৃতির ফলে। ভাষা আন্দোলন শুরু হয়েছিল গণতান্ত্রিকভাবে গরিষ্ঠ ভাষাভাষী মানুষের বিরুদ্ধে। আর তার সমাপ্তি ঘটল গণ রায় অস্বীকার করার মাধ্যমে। যে মানুষগুলো ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে পাকিস্তানের পক্ষে নিরঙ্কুশ গণতান্ত্রিক রায় ঘোষণা করেছিল তারাই ১৯৭১ সালে ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’ গণতন্ত্রের অঙ্গীকারে পূর্ণতা দিয়েছিল।
ভাষা আন্দোলনের আদি ইতিহাস সম্পর্কে যারা খোঁজখবর রাখেন, তারা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করবেন যে, বাংলা ভাষাভাষী, হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায় ভারতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কর্তৃক অন্যায় ও অস্বীকৃতির সম্মুখীন হয়েছে। ১৯২৯ সালে মতিলাল নেহরুর রিপোর্টে সর্বপ্রথম স্বাধীন ভারতের জন্য হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করা হয়। তখন গোটা ভারতে হিন্দী ভাষাভাষীদের সংখ্যা ২০-২২ শতাংশ ছিল। তখনকার অবিভক্ত বাংলা, আসাম ও পাশের এলাকায় বাংলা ভাষাভাষীদের সংখ্যা হিন্দির প্রায় কাছাকাছি ছিল। এই বিপুল গণতান্ত্রিক সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে কংগ্রেস নেতৃত্ব অবজ্ঞা করে। বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য গোটা ভারতে উৎকর্ষতা পেলেও গরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায় নেহরু রিপোর্টের বিরোধিতা থেকে বিরত থাকে। এ ক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম প্রফুল্ল কুমার সরকার। তিনি একটি তথ্যবহুল নিবন্ধ লিখে হিন্দি প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ তখন গোটা ভারতের সাহিত্যক্ষেত্রে উজ্জ্বল নক্ষত্ররূপে বিরাজমান। ১৯১৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। কিন্তু তিনি এর প্রতিবাদ করেছেন বলে কোনো প্রমাণ নেই। সর্ব ভারতীয় হিন্দী ভাষী হিন্দু নেতৃত্বের বিপরীতে মুসলমানদের তরফ থেকে তৎকালীন আলীগড় বিশ^বিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর জিয়াউদ্দিন উর্দুকে সম্ভাব্য মুসলিম রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করেন। এর প্রতিবাদও আসে বাংলার মাটি থেকে। ১৯৪০ সালে পাকিস্তান প্রস্তাব গৃহীত হলে ভাষার বিষয়টি আবারো বিতর্কে আসে। এ সময়ে ১৯৪৩ সালে আবুল মনসুর আহমেদ ‘পূর্ব পাকিস্তানের জবান’ শিরোনামে বাংলাকে এ অঞ্চলে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করেন। (উল্লেখ্য যে, সে সময়ের রাজনীতিতে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ শব্দটি ভারতের পূর্বাঞ্চলে বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানদের পৃথক আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার অর্থে ব্যবহৃত হতো। কৌশলগত কারণে তারা বাঙলা, বাংলাদেশ শব্দটি উল্লেখ করেননি। যদিও ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পূর্বক্ষণে অবিভক্ত বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য ‘বোস-সোহরাওয়ার্দী প্ল্যান সক্রিয় হয়ে ওঠে।) ১৯৪৬ সালে ফররুখ আহমদ ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ও সাহিত্য শিরোনামে একই দাবির পুনরুল্লেখ করেন। ১৯৪৭ সালে কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল মনসুর আহমেদ ও অধ্যক্ষ আবুল কাশেম একটি যৌথ নিবন্ধে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জোর দাবি তোলেন। ১৯৪৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সপক্ষে জোরালো বক্তব্য উপস্থাপন করেন। ১৯৪৮ সালে ‘তমুদ্দিন মজলিস’ রাষ্ট্রভাষার সপক্ষে আন্দোলনের সূচনা করে। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব ও আদর্শে ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হয়। (বিস্তারিত বিবরণের জন্য দেখুন গবেষণালব্ধ গ্রন্থ বদরুদ্দিন উমর লিখিত পূর্ববাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি) যে স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্যের কারণে ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগ অনিবার্য হয়ে ওঠে সেই বিষয়গুলো ১৯৪৮ পরবর্তীকালে প্রবল হয়ে ওঠে। আবারো মনসুর আহমেদের ভাষায়, ‘খামার বাংলা বনাম টাওয়ার বাংলা, ভদ্রলোক বনাম মুসলমান’ এর সংগ্রাম প্রাধান্য অর্জন করে। সে আর এক ইতিহাস। পাকিস্তানিরা বাংলা ভাষাকে উর্দুর আদলে সাজাতে চেয়েছে। অভিযোগ আছে তারা ‘মহাশ্মশান’কে ‘গোরস্থান’ করেছে। এখন আবার গোরস্থানকে মহাশ্মশান করার ষড়যন্ত্র চলছে। এ দেশের গরিবগার্বা সাধারণ মানুষ যে ভাষায় কথা বলে- সেটিই আমার ভাষা। সাধারণ মানুষের সম্বোধন ‘আসসালামু আলাইকুম’কে যারা ‘শুভ সকাল’ বা ‘শুভ সন্ধ্যা’ বানাতে চায়- তারা এ জাতির পরগাছা। বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের প্রতিনিধি তারা নয়। শিকড়হীন পরগাছা পরিত্যক্ত হবে একদিন। বাংলাদেশের রাজনীতির অনেক বাঁক পরিবর্তন সত্ত্বেও সেই আদর্শিক দ্বন্দ্ব আজো প্রবলভাবে বহমান রয়েছে। বাঙালি বনাম বাংলাদেশী বিতর্ক তার প্রমাণ। এ প্রসঙ্গটিও গণতন্ত্রের বিবেচনায় প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ। কারা সংখ্যাগরিষ্ঠ- সরব বুদ্ধিজীবী নাকি নীরব জনগোষ্ঠী? সম্ভবত এখানেও গণতন্ত্রের ব্যত্যয় ঘটছে। সংখ্যাগরিষ্ঠরা সংখ্যালঘিষ্ঠের আধিপত্য আবর্তে আছে।
প্রতি বছর ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবহ ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে যথার্থ ভাবগাম্ভীর্য ও মর্যাদার সাথে প্রতিপালিত হচ্ছে। ১৯৫২ সালের পর থেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত প্রতিটি ২১ এই জনগোষ্ঠীকে গণতন্ত্রের শপথে বলীয়ান করেছে। পাকিস্তানের বায়ান্ন-পরবর্তী সময়কালে ২১ ফেব্রুয়ারিত যে আবেগ প্রকাশিত হয়েছে অন্য কোনো ক্ষেত্রে তা অনুভূত হয়নি। আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। যে গণতন্ত্র স্বাধীনতা এনেছে তা পরাজিত হয়েছে। স্বাধীনতার সুপ্রভাতে শাসকদলের কৃপায় ‘শোষিতের গণতন্ত্রে’র নামে ‘বাকশাল’ অর্থাৎ একদলীয় শাসন কায়েম হয়েছে। এখন স্বাধীনতার পরিপক্বতায় ‘উন্নয়নের গণতন্ত্র’ নামের নতুন অলিখিত বাকশাল বর্তমান রয়েছে। অথচ সরকার বারবার বলছে তারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। স্বাধীনতার স্বাদ ঘরে ঘরে পৌঁছিয়ে দিয়েছে। একুশে উদযাপন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পঁচাত্তর পরবর্তী দীর্ঘ ২১ বছর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অবদানসহ তার নাম মুছে ফেলার নানা চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু মিথ্যা দিয়ে কখনো সত্যের ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না, এটা আজ প্রমাণিত। বুকের রক্ত দিয়ে আমাদের রক্তের আখরে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছিলেন তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি… বাংলাদেশ মানেই তাদের কাছে ছিল দারিদ্র্যপীড়িত, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বন্যা-জলোচ্ছ্বাস গরিব দেশ হিসেবে। এখন আর কারো সেসব কথা বলার সুযোগ নেই। মাত্র এক দশকেই বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল, মর্যাদাশীল দেশ।’ এর বিপরীতে প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একই উপলক্ষে বলেছেন, ক্ষমতাসীন সরকার একদলীয় রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা সৃষ্টির জন্য সব রকমের অপকৌশল করছে। গণতন্ত্রহীন অবস্থায় চলছে দেশ। দেশের মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছে এবং আইনের শাসন নেই। ন্যায়বিচার নেই। মির্জা ফখরুল আরো বলেন, এই ভাষা আন্দোলনের ওপর ভিত্তি করেই আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। স্বাধীন একটি ভূখণ্ড তৈরি হয়েছে। আমরা একটি পতাকা পেয়েছি। দুর্ভাগ্যের বিষয়, যে চেতনাকে ভিত্তি করে সেদিন ’৫২ ভাষা আন্দোলন হয়েছিল, স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল- সেই গণতান্ত্রিক চেতনা আজকে ৬৮ বছর পরও বর্তমান দখলদার সরকার জনগণের সব অধিকার হরণ করেছে, ভোটের যে অধিকার তা হরণ করেছে এবং বেঁচে থাকার যে অধিকার তা হরণ করেছে। এরা সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়ে একদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা তৈরি করার জন্য সব রকমের অপকৌশল করছে। সরকার ও বিরোধী দলের পরস্পর বিরোধী দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সত্যিকার অবস্থা অনুধাবনের জন্য অবশ্যই দ্রুত আমাদের জনগণের কাছে যেতে হবে। একুশের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলা যায় যে, গণতন্ত্রই জনগণের মুক্তির একমাত্র পথ, সে পথেই ভাষা শহীদেরা ঢেলে দিয়েছেন রক্ত। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য হতে পারে আর একটি নির্ভেজাল গণতান্ত্রিক নির্বাচন, যা জনগণকে ফিরিয়ে নেবে একুশের অর্জনে-গণতন্ত্রের পাদভূমিতে।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]