কোটা সংস্কার আন্দোলন
আটকের পর মুচলেকায় ছাড়া হলো অধ্যাপক ও ছাত্রনেতাকে
কোটা সংস্কারের আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে অভিভাবকদের সমাবেশ থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ ও ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি বাকি বিল্লাহকে আটকের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে আটকের ৪০ মিনিট পর শাহবাগ থানায় নিয়ে মুচলেকা নিয়ে দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিকেলে উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পূর্বঘোষিত সমাবেশ কর্মসূচি ছিল। সেখান উপস্থিত হলে ওই দুজনকে আটক করা হয়েছিল। বিকেল সোয়া চারটার দিকে প্রতিবাদকারীরা প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হতে থাকেন। এ সময় তাঁদের সমাবেশ স্থলে দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি।
অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, আটকের ৪০ মিনিট পর সাভার থানায় তাঁদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে প্রেসক্লাবের সামনে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান তাঁরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের ওপর সশস্ত্র হামলা, গ্রেপ্তার-নির্যাতন ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিকদের প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়। প্রেসক্লাবের সামনে অভিভাবকেরা জড়ো হতে থাকলে তাঁদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় শাহবাগ থানার পুলিশ। এ সময় সেখানে উপস্থিত হন গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক। সেখানে উপস্থিত অভিভাবক ও বিভিন্ন পেশাজীবীকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়। ধস্তাধস্তিতে হেনস্তার শিকার হন অধ্যাপক ফাহমিদুল হক।
শিক্ষক ও ছাত্রনেতাকে আটকের পরপরই প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রতিবাদকারীরা বলেন, ধস্তাধস্তির সময় ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি বাকি বিল্লাহ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদকে পুলিশের ভ্যানে করে তুলে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি-উর্দু বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক আবু তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীরাই আন্দোলন করে ওয়ান ইলেভেনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জেল থেকে বের করে নিয়ে এসেছি। আজকে যে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী রাজনীতি করতে পারছেন, তা আমাদের আন্দোলনের কারণেই। অথচ এখন কোটার মতো ন্যায্য দাবিতে আমাদের দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না।’ তিনি তাঁর এক ছেলে, এক মেয়েসহ সস্ত্রীক প্রেসক্লাবে এসেছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে। কিন্তু দফায় দফায় তাঁদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। আবু তৈয়ব বলেন, ‘আমরা এখানে প্রতিবাদ করতে এসেছি, আমাদের ধাক্কা দেওয়া হচ্ছে। গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।’
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘কোটা সংস্কারের যে যৌক্তিক আন্দোলনে, তাতে সরকারের ছাত্রসংগঠন ভয়াবহ হামলা করেছে। ছাত্রীদের ওপরে হামলা করা হয়েছে, বহু ছাত্রছাত্রী মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে হাসপাতালে। এসব কিছু দেখে নাগরিকেরা উদ্বিগ্ন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা অভিভাবকেরা একটা উদ্বেগ প্রকাশ করতে এসেছি। এর চেয়ে বেশি কিছু না। আমরা তো জানি না ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ কার্যত ছত্রভঙ্গ করেছে পুলিশ।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম এই প্রতিবাদ সমাবেশের আহ্বান জানান। সমাবেশ করতে না দেওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা এই পরিস্থিতির অবসান চাই। এ কথাটা বলার জন্য আমরা নাগরিক ও অভিভাবকদের এখানে ডেকেছি। এখানে তো বিশৃঙ্খলার কিছু ছিল না। আমাদের দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি। আমাদের উদ্বেগের কথা যদি আমরা জানাতে না পারি, তাহলে বোঝা যায়, সারা দেশের নিরাপত্তা কোথায়? আমরা এমন ঘটনার নিন্দা জানাই।’