Minar Rashid
১.
দেশের সর্বাধিক প্রচারের দাবিদার একটি পত্রিকার আজকের বিনোদন সেকশনে (০৮.১১.২০১৬ ) পাঁচটি সংবাদ প্রদর্শিত হচ্ছে । সেই পাঁচটি সংবাদের শিরোনাম নিম্নরূপ :
› শাহরুখ সালমান দেখা হচ্ছে শিগগিরই
› সালমান ও লুলিয়া–ভাঙনের সুর বাজে ওই
› ভার্মার আন্তর্জাতিক সিনেমা
› মা হতে যাচ্ছেন বিপাশা বসু?
› বানসালির জন্য শুভ দীপিকা
এই পাঁচটি সংবাদের মধ্যে একটিতেও বাংলাদেশী কোন তারকার সংবাদ নেই । একই ঘরানার অন্যান্য পত্রিকাগুলোতেও নিত্যদিন এই একই ধরনের চিত্র দেখা যায় । মজার ব্যাপার হলো , এদেশের বিনোদন জগতের অধিকাংশ কলাকুশলীদের প্ছন্দের পত্রিকা আবার এটিই কিংবা এই ঘরানার কোন একটি । এটি অগ্রসর মানুষের পত্রিকা ।
আমেরিকার নির্বাচনের সকল খুঁটিনাটি বিষয়ে খবর রাখছে কমপক্ষে বিশ্বের কয়েক বিলিয়ন মানুষ । কারণ এই নির্বাচনের উপর বিশ্বের সাড়ে সাত বিলিয়ন মানুষের ভাগ্য জড়িয়ে গেছে । তাছাড়া এই প্রথম আমেরিকান মুল্লুকে একজন নারী প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন । বিষয়টি সারা বিশ্বের নারী সমাজকে একটু অন্যভাবে নাড়া দিয়েছে । এমন একটি নির্বাচনে বাংলাদেশের একজন নারী নেত্রীর ভিডিও ও ছবি সেখানকার নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহার সারা বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে । কমপক্ষে কয়েক বিলিয়ন মানুষের দৃষ্টিতে পড়েছেন বেগম খালেদা জিয়া ।
আমরা দেখেছি , ইন্ডিয়ার নায়ক নায়িকারা বায়ূত্যাগ করলেও এদেশের মিডিয়া সেটা নিয়ে সংবাদ শিরোনাম করে বসে । অথচ বিশ্ববিখ্যাত ফ্যাশন ম্যাগাজিনে হিলারির সাথে বেগম জিয়ার সেই ছবিটির খবর এদেশের পত্র-পত্রিকার কোথায়ও জায়গা পেলো না ।
বিপাশা বসুর মা হওয়ার চেয়েও গুরুত্বহীন হলো এই ছবিটি । হায়রে সেলুকাস । কি বিচিত্র এদেশের গণমাধ্যম !
২.
বর্তমান আওয়ামী সরকার এবং তাদের আন্দোলনের ফসল জরুরি সরকার মিলে গত দশ বছর যাবত এদেশের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রয়েছে । এই দুটি সরকারের প্রধান এজেন্ডা ছিল – সমস্ত রাষ্ট্রীয় মেশিনারিজ ব্যবহার করে বিএনপি এবং তার নেত্রীর পরিবারকে দুর্নীতির প্রতীক ও জঙ্গীবাদের দোসর হিসাবে তুলে ধরা । এদের সকল প্রচেষ্টা যে ব্যর্থতায় পর্যবেশিত হয়েছে তার বড় প্রমাণ বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশটির নির্বাচনী প্রচারণায় অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার ভিডিও ও ছবির ব্যবহার । একই সময়ে বিশ্ববিখ্যাত ভোগ ম্যাগাজিনে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে হিলারির ছবিটিও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ম্যাসেজ বহন করছে ।
এই একটি ছবি অনেক কথা বলে দিয়েছে । বেগম জিয়া শুধুমাত্র বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আশা ও আকাঙ্খার প্রতীক হয়ে দাঁড়ান নি । এই প্রচারণা তাঁকে সারা মুসলিম বিশ্বের গণতান্ত্রিক আকাঙ্খার সিম্বল হিসাবে দাঁড় করিয়ে ফেলেছে ।
যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য পরবর্তি প্রেসিডেন্ট সেদেশের মুসলিম ভোটারদের সিমপ্যাথি ও সমর্থন আদায়ের জন্যে বেগম জিয়াকেই বেছে নিয়েছেন । এর মাধ্যমে মুসলিম বিশ্ব সম্পর্কে আমেরিকান প্রশাসনের বোধোদয়ের বার্তাটিও স্পষ্ট হয়ে পড়েছে ।
আল কায়েদার চেয়েও ভয়ংকর হলো মুসলিম বিশ্বে এই ‘আল ফায়েদা’ র দল । এই দল তাদের সকল রাজনৈতিক ও আদর্শিক প্রতিপক্ষকে আল-কায়েদা ও জঙ্গী হিসাবে তুলে ধরে বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করে ।
বিশ্ববাসীকে বোকা বানিয়ে (আলকায়েদা বা জঙ্গীবাদের ভয় দেখিয়ে ) এরা সকল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ফায়দা গ্রহন করে । এরা সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় উপসনালয়ে আক্রমণ করে তার দায় অবলীলায় বিরোধীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয় । এরা জঙ্গী দমনের নামে জঙ্গীবাদের চাষাবাদ করে । প্রকৃত জঙ্গীদের হাতের কাছ পেয়েও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ না করে ক্রস ফায়ার দিয়ে মেরে ফেলে । নিজেদের অনুগত বাহিনী দিয়ে যাত্রীবাহী বাস পুড়িয়ে বিরোধী দলীয় নেতা -নেত্রীকে ‘আগুন সন্ত্রাসী ‘ হিসাবে প্রচারণা চালায়। এদের কাজকর্ম দেখে খোদ শয়তানও মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে । এদের সবচেয়ে বড় সহযোগী হিসাবে পাশে দাঁড়িয়েছে মূল ধারার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বড় একটা অংশ ।
আশার কথা হলো , পশ্চিমী গণতান্ত্রিক দেশগুলো এদের প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয় নি । বরং এই আল ফায়েদাদের কারসাজি অনেকটাই বোধহয় ধরে ফেলেছে । যে নেত্রীকে এরা জামায়াতের মহিলা আমীর , জঙ্গীদের দোসর এবং আগুন সন্ত্রাসী হিসাবে তুলে ধরার জন্যে দেশ বিদেশে অহরহ প্রচারণা চালিয়েছে – সেই তাকেই এমন গুরুত্ব দিয়ে হিলারির নির্বাচনী প্রচারণায় তুলে ধরা ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত দেয় ।
সেই ইঙ্গিতটি থেকে শুধু সর্বনাশা আত্মতৃপ্তি নয় – জন্ম নেওক আত্মবিশ্বাস । যে আত্মবিশ্বাসের অনেকটুকুই আমরা হারিয়ে ফেলেছি ।