- ড. আবদুল লতিফ মাসুম
নিউটনের তৃতীয় সূত্র অনুযায়ী, ‘ফর এভরি অ্যাকশন, দেয়ার ইজ অ্যান ইকুয়াল অ্যান্ড অপজিট রি-অ্যাকশন।’ ৭ জানুয়ারির অবৈধ নির্বাচনের পর স্বাভাবিকভাবেই নানা দিক থেকে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এসেছে। এ ক্ষেত্রে কিছু কার্যক্রমও লক্ষ করা গেছে। প্রথমত অভ্যন্তরীণ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার কথা বলা যায়। এখানে পক্ষ দুটো- সরকারি দল ও বিরোধী দল। সরকারি দলের ক্রিয়া আছে, প্রতিক্রিয়া নেই। অপর দিকে, বিরোধী দলের প্রতিক্রিয়া আছে, ক্রিয়া নেই। আরেকটি বিষয় বৈশ্বিক। যেহেতু পৃথিবী এখন পরিণত হয়েছে গ্লোবাল ভিলেজে, সুতরাং বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রব্যবস্থা ছোট হোক বড় হোক প্রভাবিত করবে প্রথমত প্রতিবেশীকে এবং দ্বিতীয়ত বিশ্বকে
সরকারি দল সঙ্গতভাবেই তাদের অসঙ্গত নির্বাচন বৈধ করার জন্য যাবতীয় আবৃতি-বিবৃতি দিচ্ছে। তারা ইতোমধ্যে পঞ্চমবারের মতো মসনদে আরোহণের উৎসব করছে। উজির-নাজির-কোতোয়াল সব ঠিকঠাক হয়েছে। এধারকা মাল ওধার করেগা, ওধারকা মাল এধার কারেগা অর্থাৎ উজির-নাজির বানানোর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এখনো চলছে। বলা হচ্ছে, আরো অদল-বদল সামনে রয়েছে। আগামী পাঁচ বছরের জন্য গদি পাকাপোক্ত হয়েছে, এরকম বুঝ-ব্যবস্থা নিয়েই তারা রাজত্ব শুরু করেছেন। অপর দিকে, বিরোধী দলের বিরাট পরাজয়কে পরাভূত করে জয়কে ফিরিয়ে আনার ব্রতে মনোযোগী হয়েছেন তারা।
ইতিবাচকভাবে বিএনপিসহ যেসব দল নির্বাচনকে বিশ্লেষণ করছেন, তারা বলছেন, যেহেতু নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল নগণ্য, সুতরাং জনগণ তাদের অসহযোগ আন্দোলন সফল করেছে। যারা নেতিবাচকভাবে দেখতে চান তারা সুড়ঙ্গের অবশেষে কোনো আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না। অবশ্য রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল তৃতীয় সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন। মঈন খান বলেছেন, শাসক দলের শোচনীয় নৈতিক পরাজয় ঘটেছে। অবশ্য যাদের কাছে নীতি-নৈতিকতার কোনো দাম নেই তাদের কাছে এ প্রশ্ন অবান্তর। অপর দিকে ওবায়দুল কাদেরের ভাষায় জনগণ তাদের প্রতি দ্ব্যর্থহীন সমর্থন জ্ঞাপন করেছেন। দেশ-বিদেশের অভিনন্দনে আপ্লুত তারা। প্রধান বিরোধী দল নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন যে নিরপেক্ষ হতে পারে না তা আবারো প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনসহ ডান-বাম সব ধারার বিরোধী দল এই নির্বাচনী ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে। নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। সরকারি দল পুনঃনির্বাচনের দাবি অগ্রাহ্য করেছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর রাজপথে প্রথম কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ ও সংসদ বাতিলের এক দফা দাবিতে সারা দেশে দুদিনের কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। নতুন কর্মসূচি অনুযায়ী সব জেলা ও মহানগরে কালো পতাকা মিছিল করবে বিএনপি। আগামী ২৬ জানুয়ারি জেলা সদরে এবং ২৭ জানুয়ারি সব মহানগরে এই কর্মসূচি পালন করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে, খালেদা জিয়াসহ মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, অবৈধ সংসদ বাতিলসহ একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কালো পতাকা মিছিল হবে। একইভাবে জামায়াতে ইসলামী ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো অনুরূপ কর্মসূচি গ্রহণ করবে বলে আশা করা যায়।
নির্বাচন সর্বতোভাবে বর্জন এবং নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষক অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসির বিশ্লেষণে বলা হয়, বাংলাদেশে বিরোধী দল বিএনপি যখন সরকার পতনের আন্দোলনে নানা কর্মসূচি পালন করছে, তখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথেই এগিয়ে যাচ্ছে। বিএনপিসহ বিরোধী কয়েকটি দলের আন্দোলন কিংবা নির্বাচন বর্জন- কোনো কিছুই দৃশ্যত চাপে ফেলতে পারেনি সরকারকে। উল্টো মামলা, গ্রেফতারসহ নানামুখী চাপে বিপর্যস্ত বিএনপি। বিবিসি প্রশ্ন উত্থাপন করেছে, একদিকে সরকার পতনের আন্দোলনে ব্যর্থতা অন্যদিকে নির্বাচনেও অংশ না নেয়া- বিএনপি তাহলে তাদের রাজনীতির কৌশল থেকে কী পেলো? বিশেষ করে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতার বাইরে থাকার পর দলটি আরো অন্তত পাঁচ বছর একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বলেই অনেকে মনে করছেন। তবে ইতিবাচক বিশ্লেষণও আছে। একটি বিশেষজ্ঞ মতামতে বলা হয়, স্বাভাবিক রাজনৈতিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া লক্ষ করলে বুঝা যায়, বিএনপি ও সরকারবিরোধী শক্তি রাজনৈতিকভাবে সরকারকে পরাভূত করেছে। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ নীরব জনগণ আগের মতোই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। তা ছাড়া ভয়ভীতি-লোভ, লালসা দিয়ে তারা বিএনপিকে বিভক্ত করতে পারেনি। ছোটখাটো দু’-একটি ঘটনা ছাড়া তেমন কিছুই ঘটেনি। স্বাভাবিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি এবং বিরোধী দলের গ্রহণযোগ্যতা আরো বেড়েছে। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে জনগণের আস্থা সর্বাংশে হারিয়েছে। তাদের প্রতি মানুষের ক্ষোভ ও ক্রোধ আরো প্রবল হয়েছে। ব্যক্তিতন্ত্র নির্বাচনের মাধ্যমে দৃশ্যত জয় লাভ করলেও মূলত তারা জনগণের কাছে ঘৃণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাভাবিক নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের মনোভাব প্রকাশ করতে না পারার কারণে অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এমনই অস্বাভাবিক অবস্থা মিয়ানমারকে ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বাংলাদেশে বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকলে সহিংসতার মতো অস্বাভাবিকতার দিকে ধাবিত হতে পারে দেশ। মানুষ স্বাভাবিক বিকল্প হিসেবে বিএনপি-জামায়াত জোটকেই দেখে। একটি সাধারণ ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যদি জনমতের প্রকাশ ঘটে তাহলে সময়ান্তরে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় ফিরে আসবে। নির্বাচন-পরবর্তী আন্দোলনে যদি যথার্থভাবেই জনসম্পৃক্ততা সৃষ্টি করা হয় তাহলে একটি সফল ও সার্থক আশু নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, নিয়মতান্ত্রিক তথা গণতান্ত্রিক ধারায় যদি বিএনপি সংগঠিত হয় তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ আগামীকালের সূর্য উদয়ের মতোই অনিবার্
অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণের পর বৈশ্বিক দিকটায় নজর দেয়া যায়। প্রথমত প্রতিবেশী ভারতের কথা আসে। বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় ভারত একটি বাস্তব সমস্যা। বাংলাদেশের তিন দিকে ভারত এবং সমুদ্রেও ভারতনির্ভরতা আমরা অস্বীকার করতে পারি না। ভারত স্বাভাবিকভাবেই তাদের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই বাংলাদেশকে করতলগত রাখতে চাইবে। দক্ষিণ এশিয়ায় ১৯৭১ সালে যে রাজনৈতিক, ভৌগোলিক সমীকরণ ঘটে, ১৯৭৫ সালে তা পরিবর্তিত হয়। ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেনের ঘটনাবলির মাধ্যমে তার পরিবর্তন ঘটে। ২০২৪ সালের পাদভূমিতে দাঁড়িয়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি ওয়ান-ইলেভেনের সমীকরণ এখনো বহাল রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তি এই নির্বাচনের মাধ্যমে সেই সমীকরণের অদল-বদলে ব্যর্থ হয়েছে। ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং একবার বলেছিলেন, ‘পরসি পহেলে, লেকিন বাংলাদেশ সবসে পহেলে’- এটিই সত্য কথা। ভারতের অগ্রাধিকার তালিকায় বাংলাদেশ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। সুতরাং এখানে একটি বশংবদ সরকার কায়েম থাকা তাদের স্বার্থের পরিপূরক। এই নির্বাচন তা প্রমাণ করেছে।
বিগত ১৭ বছরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক অধীনতামূলক মিত্রতায় পর্যবসিত হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশ নানা ধরনের শান্তি ও মৈত্রী চুক্তির আভরণে আরো অধীনস্থ হয়ে পড়বে। আগামী দুই-এক বছরের মধ্যে এ সম্পর্কিত দু’-একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে বলে কূটনীতিকদের ধারণা। ২০৩০ সালের দিকে যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকে তখন কনফেডারেশনের ধারণা চলে আসতে পারে। উল্লেখ্য, আজকাল কোনো রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য ভূখণ্ড দখলের প্রয়োজন হয় না। সে রাষ্ট্রের অর্থনীতি ও রাজনীতি নিজ দখলে থাকলে চিরকাল অধীন রাখা যায়। নির্বাচনের পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপ-উপদেষ্টা পঙ্কজ সরণ নির্বাচনকে জায়েজ করার পর যা লিখেছেন তা ভবিষ্যতের ইঙ্গিতবহ। তার ভাষায়, ‘উন্নয়নের একটি মূল পূর্বশর্ত নিরাপত্তা ও আইনের শাসন। সমাজ থেকে সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা ও মৌলবাদ নির্মূলে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যেসব বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন তার মধ্যে একটি হলো- ধর্মের প্রতি একটি মধ্যপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা এবং মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়ন। এ ক্ষেত্রে এখনো অনেক কিছু করার বাকি আছে এবং এটি তার নজরে থাকবে বলেই মনে হয়। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের পরিণতি সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল। মডেল হিসেবে সৌদি আরব বা তুরস্কের চেয়ে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার দিকে তার নজর বেশি। দেশের জনগণের কাছে আওয়ামী লীগ যে বার্তা দেবে এবং জনগণের কাছে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে সে অনুযায়ী দলটিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সহযোগীদের জন্যও এটি প্রযোজ্য’। (প্রথম আলো, ২২ জানুয়ারি ২০২৪)
পঙ্কজ সরণের মতো একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির মন্তব্য থেকে বিগত বছরগুলোতে সরকারের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এ দেশের শিক্ষা সংস্কৃতি ভারতীয়করণে আওয়ামী লীগের প্রাণান্ত চেষ্টার নজির ওই মন্তব্যে পাওয়া যায়। ভবিষ্যৎ রাজনীতির ইঙ্গিত ওখানে রয়েছে। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো যে, এ দেশে কোনো চরমপন্থী বা কট্টর ভারতবিরোধী সরকারও যদি ক্ষমতাসীন হয় তাহলে তাকেও ছাড় দিয়েই ক্ষমতায় থাকতে হবে। সত্যিকার দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব যদি কুশলী হয় তাহলে তা অসম্ভব নয়। স্মরণ করা যেতে পারে, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় যাতে না থাকতে পারেন সে জন্য শান্তিবাহিনীর নামে অশান্তি সৃষ্টি করা হয়। অবশেষে তথাকথিত স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তির হাতে তাকে প্রাণ দিতে হয়।
এবার আসা যাক বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনটি যাতে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয় তার জন্য প্রবল ভূমিকা গ্রহণ করে। তফসিল ঘোষণার পর বেশ শক্তভাবেই সংলাপের আহ্বান জানায়। সরকার তা অগ্রাহ্য করে। নির্বাচনের পরদিন, অর্থাৎ ৮ জানুয়ারি, প্রকাশিত এক বিবৃতিতে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায় দেশটির স্টেট ডিপার্টমেন্ট বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র লক্ষ্য করেছে, ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন নিয়ে জয়ী হয়েছে। তবে হাজারো বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীর গ্রেফতার ও নির্বাচনের দিনে বিভিন্ন জায়গায় নানা ধরনের অনিয়মের খবরে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন।’ সেই সাথে, বাংলাদেশের এই নির্বাচন ‘অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না’ বলে অন্য পর্যবেক্ষকদের প্রতিক্রিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্র একমত বলে বিবৃতিতে জানানো হয়। এ ছাড়া নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ না করায় হতাশা প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র। একই দিনে, যুক্তরাজ্যও বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া জানায়। যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচন নির্ভর করে বিশ্বাসযোগ্য, মুক্ত ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার ওপর।’ ‘মানবাধিকার, আইনের শাসন ও যথাযথ প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অপরিহার্য উপাদান। (বাংলাদেশে) নির্বাচনের সময় এসব মানদণ্ড ধারাবাহিকভাবে মেনে চলা হয়নি।’
যেসব দেশ নির্বাচনের পর প্রতিক্রিয়া জ্ঞাপন করেছে, দেখা যাচ্ছে সেই দেশগুলোই এখন নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। তাদের এই ‘অভিনন্দন’ ঠিক কী বার্তা বহন করছে? বিশ্লেষকদের অনেকেই একে নিছক ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচারের অংশ’ হিসেবেই দেখছেন। সরকারকে অভিনন্দন জানানোর ফলে নির্বাচন নিয়ে দেশগুলোর পর্যবেক্ষণ বা অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসবে বলেও মনে করছেন না তারা। পরবর্তীকালে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর নিশ্চিত করে যে, নির্বাচন প্রশ্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির কোনো পরিবর্তন হয়নি।
নির্বাচন-পরবর্তী অভ্যন্তরীণ রাজনীতি আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করে। যেখানে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে নেতৃত্ব, সরকার ও রাজনৈতিক এলিটরা সংযম ও সমঝোতার কথা বলবেন, সেখানে হিংসা, বিদ্বেষ ও প্রতিশোধের কথা বলছেন। সর্বোচ্চ নেতৃত্ব থেকে কোনো নমনীয় ও কমনীয় বার্তা আসছে না। বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো আবারো আন্দোলন সংগ্রামের কথা বলছে। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার কথা বলেছিলেন। অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্ব, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি ও অপশাসনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কি তাহলে আরো দুঃসময়ের দিকে ধাবিত হচ্ছি?
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
নয়াদিগন্ত