বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের জামিন শুনানি কবে

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির অন্তত ১০ কেন্দ্রীয় নেতা কারাগারে রয়েছেন
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির অন্তত ১০ কেন্দ্রীয় নেতা কারাগারে রয়েছেনফাইল ছবি

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গ্রেপ্তার হন ২ নভেম্বর। পরদিন ঢাকার সিএমএম আদালত জামিন আবেদন নাকচ করে তাঁকে ছয় দিনের রিমান্ডে দেন।

ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে আমীর খসরুর জামিন আবেদন করা হয়েছে ৮ নভেম্বর। আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তাঁর জামিন শুনানি হতে পারে।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (সিএমএম) আমীর খসরুর মতো বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের জামিন আবেদন নাকচ হওয়ার পর তাঁরা ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে যাচ্ছেন। সেখানে জামিন শুনানির দিন পড়ছে কয়েক সপ্তাহ পর।

অবশ্য একটি মামলায় জামিন পেলেই বিএনপি নেতাদের মুক্তি নিশ্চিত নয়। কারণ, একেকজন নেতার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। পুলিশ চাইলে অন্য মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখাতে পারবে। বিএনপির ১০ জন কেন্দ্রীয় নেতার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, নেতাদের আরও মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো শুরু হয়েছে।

বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালতের কাছ থেকে ন্যায়বিচার না পেলে বিএনপির মহাসচিবসহ অন্যদের কারাগারে থাকতে হবে, এটাই বাস্তবতা।

ঢাকায় গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য মির্জা আব্বাস ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, তিন ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও শামসুজ্জামান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ, বিএনপির মিডিয়া সেলের সমন্বয়ক জহির উদ্দিন স্বপন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হকসহ অনেকে। অনেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন।

পুলিশ সূত্রের খবর ও প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, ২৮ অক্টোবর থেকে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় সাড়ে ৯ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ৩ হাজারের বেশি নেতা-কর্মী। আইনজীবীরা বলছেন, তাঁদেরও জামিন শুনানিতে সময় লাগছে।

ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) তাপস কুমার পাল প্রথম আলোকে বলেন, কোনো ব্যক্তি মহানগর দায়রা জজ আদালতে গেলে জামিন আবেদনের শুনানির জন্য সাধারণত এক সপ্তাহের মতো সময় পরদিন ধার্য হতো। এখন দেরি হওয়ার ক্ষেত্রে দুটি কারণ আছে বলে মনে করেন তাপস কুমার পাল। একটি হলো ডিসেম্বরে নিয়মিত বিচারিক আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। সে সময় জামিন বিষয়ে আট কার্যদিবস শুনানি নেবেন আদালত। এ কারণে জামিন শুনানির দিন পেতে সময় একটু বেশি লাগছে। দ্বিতীয় কারণটি হলো এখন মামলার চাপ বেশি।

ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায় বিচারিক আদালতের দুটি ধাপের একটি হচ্ছে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এবং অন্যটি দায়রা জজ আদালত। ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি দায়রা জজ আদালতে আবেদন করতে পারেন। আর দায়রা জজ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করা যায়।

বিএনপির কেন্দ্রীয় ১০ নেতাকে গ্রেপ্তারের পর যেদিন সিএমএম আদালতে তোলা হয়, সেদিনই জামিন আবেদন করেন তাঁদের আইনজীবীরা। কেউই জামিন পাননি। মহানগর দায়রা জজ আদালতে শুনানি হয়েছে শুধু মির্জা ফখরুলের জামিন আবেদনের।

মির্জা ফখরুলকে গ্রেপ্তার করা হয় ২৯ অক্টোবর। ওই দিন আদালতে তোলা হলে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। ২ নভেম্বর জজ আদালতে তাঁর জামিন আবেদন করা হয়। আদালত জামিন আবেদন শুনানির দিন ঠিক করেন ২০ নভেম্বর।

অবশ্য সেদিন পিপি অসুস্থ থাকায় শুনানি হয়নি। দুদিন পর ২২ নভেম্বর শুনানি হয়। তবে মির্জা ফখরুল সেদিন জামিন পাননি। তাঁর মতো দলের অনেক নেতা–কর্মীও জামিন পাননি।

মির্জা ফখরুলের জামিন আবেদনে আদালতের কাছে লিখিতভাবে উল্লেখ করা হয়, তিনি দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে ভুগছেন। তাঁর হৃদ্‌যন্ত্রে চারটি ‘ব্লক’ আছে। তিনি শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ।

মির্জা ফখরুলের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি মহাসচিব সব সময় আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। জামিনে থাকা অবস্থায় তিনি নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। গ্রেপ্তারের ২৯ দিন পার হলেও তিনি বিচারিক আদালত থেকে জামিন পাননি। জামিন নাকচ আদেশের অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর হাইকোর্টে জামিন আবেদন করা হবে।

জামিন শুনানি কবে
বিএনপি নেতাদের আইনজীবীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস গ্রেপ্তার হন ৩১ অক্টোবর। পরদিন সিএমএম আদালত তাঁর জামিন আবেদন নাকচ করে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মির্জা আব্বাসের আইনজীবী মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মহানগর দায়রা জজ আদালতে তাঁর জামিন আবেদন করা হয়েছে। ২৯ নভেম্বর শুনানি হওয়ার কথা।

সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল গ্রেপ্তার হন ৩১ অক্টোবর। সেদিন সিএমএম আদালতে তাঁর জামিন আবেদন নাকচ হয়। ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে তাঁর জামিন আবেদন করা হয় ৭ নভেম্বর। শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে ২৯ নভেম্বর।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী ৪ নভেম্বর গ্রেপ্তার হন। পরদিন তাঁকে সিএমএম আদালতে তোলা হলে জামিন আবেদন নাকচ হয়। আইনজীবীরা জানান, ৭ নভেম্বর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে তাঁর জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।

আলতাফ হোসেন চৌধুরীর আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আলতাফ হোসেন অসুস্থ। তাঁর বয়স ৮০ বছরের ওপরে। মহানগর দায়রা আদালতে ২৯ নভেম্বর তাঁর জামিন শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সমন্বয়ক জহির উদ্দিন স্বপন গ্রেপ্তার হন ২ নভেম্বর। পরদিন সিএমএম আদালতে তাঁর জামিন আবেদন নাকচ হয়। ৮ নভেম্বর ঢাকার মহানগর আদালতে তাঁর জামিন আবেদন করা হয়।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ (প্রিন্স) গ্রেপ্তার হন ৪ নভেম্বর। ৮ নভেম্বর মহানগর দায়রা জজ আদালতে তাঁর জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।

জহির উদ্দিন ও এমরান সালেহর আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তাঁদের জামিন শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।

শামসুজ্জামান (দুদু) গ্রেপ্তার হন ৬ নভেম্বর। পরদিন তাঁর সিএমএম আদালতে তাঁর জামিন নাকচ হয়। শামসুজ্জামানের আইনজীবী শাহীন সাবু প্রথম আলোকে বলেন, মহানগর দায়রা জজ আদালতে তাঁর জামিন আবেদন করা হয়েছে। শুনানি হতে পারে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে।

গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে আরও মামলায়
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ২৮ অক্টোবরের পর হওয়া অন্তত ৯টি মামলার এজাহারে মির্জা ফখরুলের নাম রয়েছে। একইভাবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নাম রয়েছে ৭টি মামলায়।

বিএনপির অন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের নামও একাধিক মামলায় রয়েছে। শামসুজ্জামান ও জহির উদ্দিন স্বপনকে গতকাল সোমবার পল্টন থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।

বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, দলের নেতাদের বেশির ভাগই বয়স্ক মানুষ। তাঁরা নানা ধরনের শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। তারপরও জামিন আবেদন নাকচ হচ্ছে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না।

প্রথম আলো