নিজস্ব প্রতিবেদক
গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটের অধিকার বঞ্চিত মানুষ পালন করেছে বিজয়ের উৎসব। বিজয় দিবসকে সামনে রেখে একদিকে ফ্যাসিবাদিদের তথাকথিত চেতনার উল্লাসের পাশাপাশি ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অপরদিকে অধিকার বঞ্চিত মানুষ গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
অর্ধ শতাব্দি স্পর্শ করেছে বাংলাদেশের বিজয় দিবস। এই অর্ধ শতক বছরে বিজয়ের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি ও লক্ষ্য অর্জনের খতিয়ানও সামনে আনেন অনেকে। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি ছিল মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রে। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর বৈষম্যহীন, মানুষের অধিকারসহ ইনসাফ ভিত্তিক একটি সমাজ প্রতিষ্ঠাই ছিল তখন মূল লক্ষ্য। এই ৫০ বছরে এসে সেই লক্ষ্য কতটা অর্জিত হয়েছে এ প্রশ্নও করেন অনেকে। বিজয়ের ৫০ বছরে পা রেখেও মানুষকে ভাবতে হচ্ছে ভোটের অধিকার কখনো ফিরে পাব কি না। ভোটের অধিকার শুধু নয়, এই অধিকারের জন্য কথা বলার সুযোগটি পর্যন্ত নেই স্বাধীন এ রাষ্ট্রে। মানচিত্রের স্বাধীনতা থাকলেও সার্বভৌমত্ব আছে কি না এপ্রশ্নও অনেকেই করেন বিজয় দিবসকে সামনে রেখে। সর্বোপরি গণতান্ত্রিক শাসনের পরিবর্তে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তিতে জনগণের ইচ্ছায় শাসনের পরিবর্তে কায়েম হয়েছে এক ব্যক্তির শাসন।
বৈষম্যহীনতা নয়, বৈষম্যের দেয়াল দিনে দিনে উঁচু হয়েছে। সামাজিক ন্যায় বিচারের পরিবর্তে দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আওয়ামী বিচার ব্যবস্থা। মানুষকে অধিকার বঞ্চিত করার ধারাবাহিকতায় বিচারালয়ে বসানো হয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসী গুণ্ডা-পাণ্ডাদের।
তবে বিজয় দিবসে অন্যান্য বছরের মতই সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে মানুষের ঢল নেমেছিল। যারা, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়েছিলেন মানুষ। পাশাপাশি স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতির জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল ছিল বিজয়ের এই দিনে।
বিজয় দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জাতীয় স্মতিসৌধে আসার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় তিনি বলেন, বিজয় মিললেও আমাদের এই জাতির মুক্তি মিলেনি। মানুষের বাক স্বাধীনতা থেকে শুরু করে মৌলিক সব স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠাই বিজয় দিবসের প্রত্যয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের জন্যই বিএনপি সংগ্রাম করছে।
ফ্যাসিবাদি সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জাতীয় স্মৃতিসৌধে সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এসেও একটি অশুভ শক্তি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে সক্রিয় রয়েছে। তাঁর ভাষায় সাম্প্রদায়িক এই অশুভ শক্তির বিষবৃক্ষের মূল উৎপাটনই হবে এবারের বিজয়ে দিবসের অঙ্গীকার।
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের সংগঠনের পক্ষ থেকে বিজয় দিবেস জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে গেলে ফ্যাসিবাদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসাবে পরিচিত ছাত্রলীগ তাদের ধাওয়া দেয় সেখানে। কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজয় দিবসে ফুল দেয়া নিয়ে শিক্ষকদের দুই গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার খবরও বের হয়েছে।
২০০৭ সালের জানুয়ারীতে দেশে জরুরী অবস্থা জারির মাধ্যমে মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। এরই ধারবাহিকতায় ২০০৯ সালের জানুয়ারীতে ক্ষমতায় আসেন বর্তমান ফ্যাসিবাদি সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা। ফ্যাসিবাদি শাসনের প্রত্যয় নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভিন্নমতকে পিষে মারা শুরু হয়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের পাশাপাশি ভিন্নমতের লোকদেরকে নিয়ন্ত্রণে নিতে নানা অপকৌশলের অংশ হিসাবে কেড়ে নেওয়া হয় মানুষের কথা বলার অধিকার। বিচারবহির্ভূত হত্যা ও বিচারিক হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকেও স্বব্ধ করে দিতে সক্ষম হন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালে বিনা ভোটের সরকার গঠন এবং ২০১৮ সালের ডিসেম্বরেরর শেষ দিনে মানুষকে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার সুযোগ না দিয়েই রাতের আঁধারে ব্যালটে সীলমেরে মানুষের অধিকার কেড়ে নেন শেখ হাসিনা।
তাঁর এই দুর্নীতি, লুটপাট ও দু:শাসনে নিপীড়িত মানুষ ১৬ ডিসেম্বর স্মরণ করলেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের।