প্রেমবিহীন নায়িকা এবং সেন্সরবিহীন মিডিয়া

Minar Rashid

উঠতি এক অভিনেত্রী বলেছেন , প্রেম করার সময় নেই ।
অন্যদিকে জননেত্রী বলেছেন , দেশের মিডিয়া পরিপূর্ণ স্বাধীনতা উপভোগ করছে । দুটি বক্তব্যকে একই শিরোনামে যুক্ত করার কারণ হলো – এই দুটি কথা মগজ এবং মনের একই জায়গায় প্রসেসিং হচ্ছে অর্থাৎ মনের মধ্যে একই ধরনের গোস্বা বা যাতনা সৃষ্টি করেছে ।

এখন মনের কষ্টটা একটু কমানোর জন্যে একটা চুটকি বলে নেই। এক ডাক্তার তার রোগীকে পরামর্শ দেন ডায়েট করার জন্যে । প্রেসক্রিপশন লেখার পর ঐ রোগীকে বলেন , আপনি এখন থেকে রাতের বেলায় শুধু দুটি আটার রুটি , এক বাটি সব্জি, একটি মাছের টুকরা আর সামান্য ফলমূল খাবেন । এটা শোনে কিছুটা হতাশ ও বিরক্ত সেই রোগী ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে , ‘ ডাক্তারসাব, এগুলি কি খাবারের আগে খাবো, নাকি খাবারের পরে খাবো ?’
রাক্ষুসে এই রোগী যেমন ডায়েটকে কখনই তার মূল খাবার হিসাবে গণ্য করতে পারে না । তেমনি প্রেম কাতুরে এই সব অভিনেত্রী কাজের ফাঁকে ফাঁকে বা কাজের মধ্যেই একটু আধটু ডায়েট (প্রেম) করলেও তাকে কখনই প্রেম বলে গণ্য করেন না।

অনেকটা একই কিছিমের জটিলতায় পড়েছেন আমাদের জননেত্রী কাম গণতন্ত্রের মানস কন্যা। তিনিও সম্ভবত ঠাহর করতে পারছেন না কোনটা মিডিয়ার ডায়েটিং আর কোনটা মূল খাবার ।

১৯৭১ সালে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার মন্তব্য নিয়ে একটি লেখা দিন কয়েক আগে দৈনিক নয়া দিগন্তে পাঠিয়েছিলাম । মিডিয়ার মাত্রাধিক স্বাধীনতার (?) জন্যে নয়া দিগন্ত কর্তৃপক্ষ আমার সেই লেখাটি ছাপাতে সাহস করেন নি । এই ধরনের কত লেখা , কত কথা ,কত আর্তনাদ যে সেল্ফ সেন্সরশিপের বলি হচ্ছে , তা আল্লাহ মালুম ।

লেখাটির শিরোনাম ছিল – রোগটির নাম সত্যাতংক। জলাতঙ্কের মতই সত্যাতংক একটি মারাত্মক রোগ। সত্যাতংক মানে সত্য প্রকাশের ভয়ে সর্বদা আতংকে থাকা । আমার যতটুকু ধারণা ছিল , মনে হচ্ছে রোগটি আমাদের সমাজে তার চেয়েও অনেক বেশি মাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে।

সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো , স্বাধীন মিডিয়া নিয়ে সরকার প্রধানের এমন ঐতিহাসিক মশকরার পরেও দেশের কোন একটি সংবাদ পত্র কিংবা টিভি চ্যানেল মুখ খুলে নি ।তথাকথিত স্বাধীন মিডিয়ার সবচেয়ে বড় স্যাম্পল বা নমুনা হিসাবে দীর্ঘদিন বিনা বিচারে আটক রয়েছেন দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। স্বাধীন মিডিয়ার আরো কিছু নমুনা হিসাবে দৈনিক আমার দেশ, দিগন্ত টিভি , ইসলামী টিভি , চ্যানেল ওয়ান বন্ধ রয়েছে । শত শত বেকার সাংবাদিক ও কর্মচারীদের জীবনযন্ত্রণা এদেশের মিডিয়ার স্বাধীনতাকে নতুন ডাইমেনশন দিয়েছে । সাগর রুনী দম্পতির নির্মম হত্যা ও খুনীদের আড়াল করে রেখে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে । স্বাধীন মিডিয়া সৃষ্টির জন্যে একুশে টিভির মালিক আব্দুস সালামের শরীর থেকেও তেল কিছুটা কমানো হয়েছে । তার টিভি চ্যানেলটিকেও অত্যন্ত খোলামেলা ভাবেই ‘স্বাধীন’ করা হয়েছে । কারো চাপে পড়ে নয় , স্ব – ইচ্ছায় ও স্বাধীন ভাবেই আমরা সবাই এখন চুপ মেরে গেছি ।

হায়রে সেলুকাস ! কী বিচিত্র এই দেশ !
আর কী বিচিত্র এই দেশের স্বাধীন মিডিয়া ! !