উপরের এই গোলক ধাঁধাঁ টিতে ‘আমার’আর ‘তোমার ‘ শব্দ দুটিকে সুবিধামত বসিয়ে বা অদল বদল করে নিজ নিজ প্রয়োজন , সুবিধা বা ফায়দা আদায় করা হয় কিংবা মানসিক ,শারীরিক ও আর্থিক তৃপ্তি আস্বাদন করা হয় । ব্যক্তিত্বহীন ও লোভী স্বামীরা কারো কাছ থেকে কোন ফায়দা নিতে উর্ধতন বস বা সমপর্যায়ের কারো অনুকূলে শব্দগুলোকে বিন্যস্ত করে দেন । দাম্পত্যজীবনের এক ঘেয়েমি কাটাতে কোন কোন অগ্রসর সামাজের স্বামীকূল wife swap করতে এশব্দ গুলিকে equidistance principle বা সমদূরত্বের নীতি অনুসারে সাজান ।
বেশীরভাগ পুরুষ আবার শিরোনামের বিন্যাশটিকেই অধিকতর পছন্দ করেন । নিজের বউকে যথাসম্ভব ঢেকে-ঢুকে রেখে অন্যের বউদের সাথে একটু আধটু এদিক সেদিক করতে অনেকেরই আপত্তি নেই ।
এই বাক্যটির কথা স্মরণ হয়েছে ইদানীং বহুল প্রচলিত একটি অমিয় বাণী শোনে । সেই বাণীটি হল , ধর্ম যার যার উৎসব সবার । এই শব্দটি আবার সব ধর্মীয় উৎসবে সমান উদ্দীপনা বা উত্সাহ সহকারে শোনা যায় না । মাঝে মাঝে একটু বেশী করে শোনা যায় ।
মানব সভ্যতার সবচেয়ে বড় সংকট হলো -যারা সত্য কথা বলে ,তাদেরকে আমরা ঘৃণা করি । যারা অর্ধ সত্য কিংবা মিথ্যাকে মিষ্টির ক্যাপসুলে পুড়ে পরিবেশন করে তাদেরকেই অধিকতর প্রিয় বলে জ্ঞান করি ।
কোরবাণী মুসলমানদের জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধর্মীয় উৎসব । আবার সেই একই কোরবাণী সনাতন হিন্দু ধর্মের মানুষদের জন্যে প্রায়শই অত্যন্ত মর্ম পীড়ার কারণ হয়ে পড়ে । কারণ যে গরুকে তারা দেবতা বা মা জ্ঞানে পূজা করেন , সেই গরুকেই অধিক হারে এই দিনে মুসলমানগণ কোরবাণী করেন । কাজেই সেই দিন একজন বিশ্বাসী হিন্দুকে যদি এই অমিয় বাণীটি গেলানো হয় , ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ – তখন এটি তার কাছে মরার উপর খাঁড়ার ঘা বলে গণ্য হবে । এটিই বাস্তব কথা । এটিই অপ্রিয় সত্য কথা । এটিই হক কথা । এটিই শেষ কথা ।
একই ভাবে সনাতন ধর্মের হিন্দুরা যে দেবতাদের পূজো করেন – মুসলমানগন তাকেই অত্যন্ত পাপের কাজ বা শির্ক বলে গণ্য করেন । কাজেই সেই ধর্মীয় উত্সবকে যদি সার্বজনীন ঘোষণা দিয়ে মুসলমানদের গেলানো হয় , তাও তাদের শরীরে ও মনে একই রূপ রাসায়নিক বিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে । এটিই বাস্তব কথা । এটিই অপ্রিয় সত্য কথা । এটিই হক কথা । এটিই শেষ কথা ।
অন্যদিকে একটি রাষ্ট্রের কর্তব্য হলো , সকল ধর্মের অনুসারীকে নিজ নিজ ধর্ম পালনের সুযোগ করে দেয়া । একটি ধর্ম আরেকটির সাথে সাংঘর্ষিক না হলে এখানে নিরাপত্তার প্রশ্নটি উঠত না । কারণ মতের বা বিশ্বাসের বিরোধীতা মোকাবেলায় একেক মানুষ একেক ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখায় । আবেগ নিয়ন্ত্রণে একই সমাজের একেক জন একেক মাত্রায় অবস্থান করেন । অতিমাত্রায় আবেগপ্রবণ হয়ে কেউ কেউ হিংস্র হয়েও উঠতে পারে । রাষ্ট্রকে বা সমাজ চিন্তকদের এসবকিছু বিবেচনায় নিতে হয় । এসব বিবেচনায় প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীকে নির্বিঘ্নে নিজ নিজ ধর্ম পালনের জন্যে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাটুকু রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হয় ।
আন্তধর্মীয় উত্তেজনা বা সংকট মানব সভ্যতার সবচেয়ে বড় ফল্ট লাইন বা ত্রুটি রেখা । এই ফল্ট লাইনের অস্তিত্ব মেনে নিয়েই মানবজাতিকে পথ চলতে হবে । ভাসা ভাসা জ্ঞান বা হাল্কা আবেগ দিয়ে এই ফল্ট লাইনের উপর প্রলেপ দেয়া যাবে না । বিষয়ের গভীরে যেতে হবে এবং তদানুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে । কোন রোগ সারাতে হলে সেই রোগের গভীরে যেতে হবে । এখানে দরকার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের , হাতুডে ডাক্তার দিয়ে এই রোগ সারানো যাবে না । রোগ আরো জটিল হবে ।
এক ধর্মের সাথে অন্য ধর্মের সম্পর্ক অনেকটা তেল আর পানির মত । এক সাথে মিশানো সম্ভব কিন্তু পানি আর চিনির মত দ্রবণ তৈরি করা সম্ভব নয় , উচিতও নয় । তারপরেও যারা এই চেষ্টা করেন তাদের মতলব সকল সন্দেহের উর্ধ্বে নয় । চিনির এই দ্রবণ বা শরবত আপাতত মিষ্টি লাগলেও এর পরিণাম শুভ হবে না । কারণ এই দ্রবণ বা শরবত বানানোর চেষ্টায় রতদের মাঝে ধর্মের সহজ সরল শিক্ষার চেয়ে রাজনৈতিক চেতনা বা অন্য কোন মতলব বেশী কাজ করে বলে মনে হয় ।
কাজেই ‘ ধর্ম যার যার উৎসব সবার ‘ এই কথার পরিবর্তে বলতে হবে – তোমার ধর্ম তোমার কাছে , আমার ধর্ম আমার কাছে । এই অশান্ত বিশ্বে শান্তির জন্যে ধর্মে ধর্মে মিশ্রণই যথেষ্ঠ । মতলববাজি দ্রবণের দরকার নেই । কারো বউকে হস্তগত করার মতলবে প্রচেষ্টা চালালে দুনিয়ার সবচেয়ে বেকুব স্বামীটিও টের পেয়ে যায় ।
কাজেই ‘ আমার বউ -আমার বউ , তোমার বউ -তোমার বউ ‘ এই সহজ কথাটি সহজ ভাবে মনে প্রাণে উচ্চারণেই প্রকৃত শান্তি নিহিত রয়েছে ।
সামান্য উল্টা পাল্টা করলেই কোথাও না কোথাও অশান্তি নেমে আসে ।