Minar Rashid
আচ্ছা একটা কথার জবাব দেন তো দেখি , এশিয়া কাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি দুদিন পর শুরু করলে এমন কী ক্ষতি হতো ?
ক্রিকেট বিধাতার কাছে এই প্রার্থনাটি কি আদতেই পৌছানো যেতো না ?
তবে কি ক্রিকেট বিধাতা দয়াপরবেশ হয়ে আমাদের কিছু কষ্ট ভুলে থাকার জন্যে এই সুবন্দোবস্তটি করে দিয়েছেন ?
আগামী কাল চব্বিশে ফেব্রুয়ারী এশিয়া কাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি শুরু হবে । ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যকার উত্তেজনাপূর্ণ খেলাটিও হবে এই দিনে । তন্মধ্যে যদি একটা বিজয় জুটে যায় , তবে পরের দিন পুরো জাতি থাকবে অত্যন্ত ফুরফুরে মেজাজে । এমন ফুরফুরে মেজাজের জাতিকে ২৫শে ফেব্রুয়ারীর শোক পালন করতে বলা সত্যি বেমানান , অত্যন্ত অশোভন ।
২৪শে ফেব্রুয়ারী ইন্ডিয়াকে হারাতে পারলে পরের দিন ২৫শে ফেব্রুয়ারীতে টিভিতে জনগণ ও তাদের টাইগারদের উচ্ছাসের ছবি ঘটা করে প্রচার করা হবে । কোন্ নায়িকার ক্রিকেট প্রেম কত খানি তা নিয়ে অনেক গল্প হবে , অনেক আলাপ হবে । নেট জগতে কেউ কেউ রুবেল -হ্যাপির মত মসলাযুক্ত কোন ঘটনা টেনে এনে আরেকটু হ্যাপি হতে চেষ্টা করবেন ।
প্রধান মন্ত্রী সাথে সাথেই টাইগারদের বিজয়ে উচ্ছসিত হয়ে শুভেচ্ছা জানাবেন । এমতাবস্থায় মুখ ঘোমটা করে বসে থাকলে কে কী ভেবে বসেন – সেই চিন্তা থেকে বেগম জিয়াকেও আগে ভাগেই শুভেচ্ছা পাঠিয়ে দিতে হবে ।
এদিকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালও বসে নেই । তারাও চিন্তার বিলাসিতা বা স্বচ্ছতার উপদেশ বিলাতে
এবার ক্রিকেটকে বেছে নিয়েছেন । বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে কেউ কেউ লিখবেন – ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে ক্রিকেট খেলা । অর্থাৎ সবার মুখে মুখে থাকবে ক্রিকেট ।
আনন্দটুকু ঠিক ভাবে ছড়িয়ে দিতে পাড়ায় পাড়ায় মাইকে চটুল হিন্দি গান বাজানো হবে । মহান একুশের কারণে বিদেশী ভাষা নিয়ে কেউ কেউ আপত্তি জানালে বিশুদ্ধ দেশীয় মেজাজে মোমতাজের গান বাজানো হবে ।
আবার সেই খেলায় অগত্যা বাংলাদেশ হেরে গেলেও উত্তেজনা কম হবে না । হেরে যাওয়ার সতেজ সেই কষ্ট পিলখানার অনেক বাসি কষ্টকে ছাপিয়ে যাবে ।
এভাবেই ভুলে থাকা হবে ২০০৯ সালে পঁচিশে ফেব্রুয়ারীতে পিলখানায় সংঘটিত নৃশংসতার কথা । ভুলে যাবে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান ৫৭জন আর্মি অফিসার সহ আরো অনেক রক্ত ঝরানো এবং অনেক রক্ত ক্ষরণের কথা । জেনারেল মুহাম্মদ ইব্রাহীমের মত হাতে গোনা দুয়েকজন এই বিষয় নিয়ে দুয়েক লাইন লিখলেও তাতে বাকিদের ফুরফুরে মেজাজ একটুও বিনষ্ট হবে না ।
স্বাধীনতার চেতনা দিয়েই আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে জব্দ করা হয়েছে । এখন ঠিকমত ক্রিকেটের উন্মাদনা দিয়ে জাতির অনেক শোককে ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে । প্রিয় পাঠক , দয়া করে এই অভাগাকে জাতির শত্রুর মত ক্রিকেটের শত্রু ভেবে বসবেন না ।
ইয়াবা , ফেন্সিডিল ও পর্ণোগ্রাফী দিয়ে যুব সমাজের একটা অংশকে আগেই বুঁদ করে রাখা হয়েছে । বুঁদ হওয়া এই অংশের কাছে পরিবার , সমাজ বা দেশের চিন্তা অর্থহীন । এই তিন চক্রে যাদেরকে বাঁধা যায় নি – তাদেরকে অবচেতন করা হবে এখন ক্রিকেটের উন্মাদনা দিয়ে । মনে হচ্ছে জাতির জন্যে একটি নতুন চেতনা নাশক পাওয়া গেছে ।
একদিন ইরাক, সিরিয়া , লিবিয়ার জনগণও এই ধরনের চেতনা নাশক দিয়ে নিজেদের ছোটখাট দু:খ কষ্ট ঢেকে রাখত বা ভুলে থাকত । সেই সকল চাপা দেয়া কান্না এই সব দেশের জনগণকে এখন সুদে আসলে জনমের মত কাঁদতে হচ্ছে ।
আমাদেরকেও তাই করতে হবে ।
সকল আলামত দেখে এখন তাই মনে হচ্ছে ।