৭ জানুয়ারির ভোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নিজেকেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে

‘৭ জানুয়ারির নির্বাচন: প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া’ শীর্ষক আলোচনা সভায় উপস্থিত বক্তারা। আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে
‘৭ জানুয়ারির নির্বাচন: প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া’ শীর্ষক আলোচনা সভায় উপস্থিত বক্তারা। শনিবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবেছবি

 

৭ জানুয়ারির ভোটের পর দেশে ‘নিউ হাইব্রিড রেজিম’ (নতুন মিশ্র শাসন) শুরু হয়েছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ দল হিসেবে নিজেকেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। এই বক্তব্য এসেছে ঢাকায় এক গোলটেবিল আলোচনায়।

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচন: প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া’ শীর্ষক আলোচনার আয়োজন করে রাষ্ট্রচিন্তা। এতে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক, আইনজীবী। সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতারাও এই গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন।

আলোচনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশরেকা অদিতি হক বলেন, ৭ জানুয়ারি মহাপ্রতারণার নির্বাচন করা হয়েছে। ওই নির্বাচনে বুদ্ধি করে বিরোধী দলকে বাইরে রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ভোট নাই মানে কিছুই নাই। কোনো অধিকারই নাই। সরকারের আর কোনো প্রতিপক্ষ রইল না। ডানে–বাঁয়ে সব নিজের লোক।’

৭ জানুয়ারি নির্বাচন হয়নি, সিলেকশন হয়েছে—এমন অভিমত ব্যক্ত করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ঢাকায় উত্তরা এলাকায় যে বাসায় তিনি থাকেন, সেখানে ১০টি পরিবারের বসবাস, কিন্তু গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আবাসিক ভবনের কেউ ভোট দিতে যাননি।

ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সৈয়দ মামুন মাহবুব বলেন, এ সরকারের অধীনে আর একটিও সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই। এখন দরকার আন্দোলন। ভোটাধিকার ইস্যুতে ডান–বাঁয়ে সব পক্ষের এক হয়ে আন্দোলন করা উচিত।
কথাসাহিত্যিক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, ‘আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেছে এ কথা সত্য নয়। আমরা শুরু করেছি মাত্র। এই লড়াই সহজ হবে না, কিন্তু বিজয় আমাদের অনিবার্য।’

৭ জানুয়ারির প্রভাব আওয়ামী লীগের ওপরও পড়েছে বলে গোলটেবিল আলোচনায় মন্তব্য করেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইমুম রেজা। তিনি বলেন, তারাই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ঠিক করে দিয়েছিল। এখন ভয়ে–শঙ্কায় প্রতীক ছাড়াই নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে। নিজেদের ঘরের যুদ্ধ না মেটাতে পারলে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় টানাপোড়েন দেখা দিতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।

লেখক রাখাল রাহা বলেন, জনগণ এই ডামি নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু ডামি আন্দোলন করে ফ্যাসিবাদ হটানো যাবে না। লেখক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবীরা এর দায় এড়াতে পারে না। হালুয়া রুটির লোভে অনেকেই মাথা নত করেছেন।

গোলটেবিল আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য আল রাজী বলেন, ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচনে শেখ হাসিনাও পরাজিত হয়েছেন। সরকার মানুষের মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি করেছে। এই ভয়কে দূর করতে হলে আমাদের মানুষের আরও কাছে যেতে হবে।’

আইন গবেষক লোকমান বিন নুরের সঞ্চালনায় গোলটেবিল আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন সাংবাদিক সেলিম খান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব গোলাম শফিক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরিদুল হক, ইমরান ইমন, হাসিবউদ্দিন হোসেন প্রমুখ।

prothom alo