৫৩ বছর দখলে রাখার পর: বৈধ কাগজপত্র কাদের সিদ্দিকীকে ‘বাড়ি উপহার’

Logo

Daily Inqilab পঞ্চায়েত হাবিব

 ১৮ আগস্ট ২০২৩

অবশেষে দখলে রাখা বাড়ির কাগজপত্র পেলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে তার দখলে থাকা বাড়িটি ‘একটি পরিত্যক্ত বাড়ি’ দেখিয়ে তার নামে অস্থায়ী বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কাদের সিদ্দিকীকে এই বাড়ি উপহারকে অনেকেই নির্বাচনী উপহার হিসেবে মনে করছেন। কারণ ২০১৮ সালের নির্বাচনে কাদের সিদ্দিকী ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন বিএনপির ঐক্যফ্রন্টে থাকলেও এবার তিনি আওয়ামী লীগের দিকেই থাকবেন এমন প্রচারণা রয়েছে। কিছুদিন আগে কাদের সিদ্দিকী পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। ওই দেখা করার পর থেকে ‘জনগণের ভোটের অধিকার আদায়’ প্রশ্নে কাদের সিদ্দিকী ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে যান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেটিজেনরা লিখেছেন ‘এই একটি বাড়ির ‘কাগজপত্র উপহার’ কাদের সিদ্দিকীকে আগামীতে রাজনৈতিক অঙ্গনে ডিগবাজি দিতে দেখা যাবে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার বাবর রোডের এ বাড়ি স্বাধীনতার পর পরই কাদের সিদ্দিকীর দখলে নেন। তখন থেকে এ বাড়ি তার দখলে ছিল। এর আগে একাধিকবার এ বাড়িটি বরাদ্দ পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত আবেদন করেন কাদের সিদ্দিকী। কাদের সিদ্দিকী প্রথম ৭২-৭৩ সালে দখল করা বাড়িটির জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে এতোদিন সফল হতে পারেননি। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারের পক্ষ থেকে কাদের সিদ্দিকীকে এবাড়িটি বিশেষ উপহার হিসেবে দেয়া হয়েছে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন চলছে। আবার খুব শিগগিরই কাদের সিদ্দিকী আওয়াম লীগে ফিরছেন এমন গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগে না ফিরলেও নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পক্ষভুক্ত হবেন।

এ বিষয়ে পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ড (এপিএমবি) চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, মোরহাম্মদপুর পরিত্যক্ত বাড়িটি সরকারি শর্তাবলীতে বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম অস্থায়ীভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সরকারি বিধিবিধান মেনে এ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর নামে পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের স্মারক নং-শা-১২/১এম-২৫/৯৩/৪৯৫ গত ৫ জুলাই ২০২৩ ইং তারিখে এ বরাদ্দপত্র দেয়া হয়েছে। পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের সিনিয়ার সহকারী কমিশনার স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম পিতা, মৃত মুহাম্মদ আব্দুল আলী সিদ্দিকী গ্রাম/রাস্তা: কালিয়ান, কালিয়ান ডাকঘর, বেতুয়া-১৯৫০, সখিপুর, টাঙ্গাইল।

এতে বলা হয় ‘এতদ্বারা ২০/৩০, বøক-বি, বাবর রোড, মোরহাম্মদপুর ঢাকাস্থ পরিত্যক্ত বাড়িটি নিম্নোক্ত শর্তাবলীতে অস্থায়ীভাবে বরাদ্দ দেওয়া হলো। গণপূর্ত রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কর্তৃক ধার্যকৃত হারে ভাড়া পরিশোধ করিতে হইবে (শহী বার/ যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র প্রাপ্ত হইলে ধার্যকৃত ভাড়ার পরিমাণ অর্ধেক হইবে)। ধার্যকৃত ভাড়া গণপূর্ত রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কর্তৃক ট্রেজারী চালান পাশ করাইয়া কোড নং ১-৩২৩৭-০০০১-২১১৫ খাতে বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়মিতভাবে পরিশোধ করিতে হইবে।

বরাদ্দ প্রাপক নিজে না থাকিয়া অথবা আংশিকভাবে থাকিয়া যদি অন্য কাহাকে ভাড়া দিয়া থাকেন তবে তাঁহার বরাদ্দপত্র তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল করিয়া ৭ দিনের মধ্যে তাহাকে বাড়ি হইতে উচ্ছেদ করা হইবে। সরকার যদি জনস্বার্থে নিজ দরকার বলিয়া মনে করেন অথবা ইহা পরিত্যক্ত সম্পত্তি হইতে অবমুক্ত করিয়া দেয়া হয় তাহা হইলে যথারীতি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাড়িটি আপনাকে খালি করিয়া দিতে হইবে। সরকার উক্ত বরাদ্দকৃত এবং উক্তরূপ খালি হওয়া বাড়ির পরিবর্তে অন্য কোন বাড়ি বরাদ্দ দিতে বাধ্য থাকিবেন না। এই বাড়ি সংক্রান্ত যাবতীয় স্থাবর অস্থাবর মালামালের তিন কপি তালিকা ম্যাজিষ্ট্রেট/গণপূর্ত রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মারফত প্রস্তুত করাইতে হইবে এবং দখল গ্রহণ ও দখল হস্তান্তরের সময় এক কপি বিস্তারিত রিপোর্টসহ অত্র বোর্ডে পাঠাইতে হইবে। তাঁর প্রয়োজনে বাড়ি খালি করার সময় অত্র বোর্ডকে পূর্বাহে অবহিত করিতে হইবে। বরাদ্দকৃত বাড়ির দখল ১০ দিনের মধ্যে বা উক্ত বাড়ি বে-দখল এ থাকিলে খালি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উহার দখল তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী, গণপূর্ত রক্ষণাবেক্ষণ সার্কেল, ঢাকার অফিস হইতে লইতে হইবে।

এদিকে ক্ষমতাসীন দলের হামলা, মামলা, পুলিশের হয়রানিতে গত কয়েক বছরে টাঙ্গাইলে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। গত বছর ২৩ ডিসেম্বর দলটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর দৃশ্যপট অনেকটা বদলে যায়। দলের নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া স্থানীয় নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠছেন। কেউ কেউ বলছেন, কাদের সিদ্দিকী ক্ষমতাসীন দলের ছায়াতলে ভিড়তে যাচ্ছেন।

২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বে যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছিল, এতে কাদের সিদ্দিকীর দলও ছিল। নির্বাচনের কয়েক দিন আগে পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও স্থানীয় বিএনপির শতাধিক নেতা–কর্মীর নামে মামলা হয়। মামলায় কাদের সিদ্দিকীর দলের অর্ধশত নেতা–কর্মী কয়েক মাস জেলও খাটেন। অনেকেই দলও ছেড়েছেন। হয়রানির কারণে গত চার বছরে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের স্থানীয় কর্মীরা অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন।

এর মধ্যে ২৩ ডিসেম্বর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কাদের সিদ্দিকী সাক্ষাৎ করেন। এর পর থেকে গুঞ্জন চলছে, কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছেন, না হয় আওয়ামী লীগের জোটে আসছেন। এমন পরিস্থিতিতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সখীপুর–বাসাইল আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের কেউ কেউ হতাশায় পড়েছেন।