- অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
- ২১ জুন ২০২০
দেশের ২৮০টি সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্যরা নতুন করে ২০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ পাচ্ছেন। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে নেয়া প্রকল্পের মাধ্যমে এ অর্থ বরাদ্দ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ফলে ওই খাতে ব্যয় হবে ৬ হাজার ৪৭৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এর আগে দু’টি পর্বে প্রকল্পের মাধ্যম প্রতি আসনে ৩৫ কোটি টাকা দেয়া হয়েছিল। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩ এর আওতায় এ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান।
প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রকল্পটিসহ মোট ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে সভায় যুক্ত হন। আর অন্য মন্ত্রী ও সচিবরা শেরেবাংলা নগরের এনইসি সভাকক্ষে যোগদান করেন। পরে ভার্চুয়াল ব্রিফিং করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, ওই ১০ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৯ হাজার ৪৬০ কোটি ৯ লাখ টাকা, যা সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নেই হবে।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো, জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি (২য় সংশোধিত) প্রকল্প, মনু নদীর ভাঙন হতে মৌলভীবাজার জেলার সদর, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলা রক্ষা প্রকল্প, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩, বৃহত্তর পটুয়াখালী জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলা) (২য় সংশোধিত), হাওর অঞ্চলে টেকসই পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও হাইজিন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প, জামালপুর জেলা কারাগার পুনর্নির্মাণ প্রকল্প, গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (চট্টগ্রাম জোন) (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ (হরিদাসপুর)-মোল্লাহাট (ঘোনাপাড়া) আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প, বাংলাদেশ রেলওয়ের এক শ’টি মিটার গেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুনর্বাসন (২য় পর্যায়) প্রকল্প এবং বিএএফও বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণ, যশোর (৩য় সংশোধিত) প্রকল্প। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, দেশের ২৮০টি সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্যরা (এমপি) নিজ নিজ এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়নে তৃতীয়বারের মতো বরাদ্দ পাচ্ছেন। এ দফায় বরাদ্দের পরিমাণ ২০ কোটি টাকা। এ টাকা দিয়ে তারা এলাকার রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট, হাটবাজার ও বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন করতে পারবেন। তবে একবারে নয়, চার ভাগে প্রতি বছর পাঁচ কোটি টাকা করে এ টাকা বরাদ্দ পাবেন তারা।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর প্রত্যেক এমপি নিজ আসনের অবকাঠামো উন্নয়নে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-১ এর মাধ্যমে ১৫ কোটি টাকা করে বরাদ্দ পেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে এমপিরা আরো ২০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ পান। এবার তৃতীয়বারের মতো একই উদ্দেশ্যে বরাদ্দ পাচ্ছেন সংসদ সদস্যরা। ফলে এলাকার উন্নয়নে প্রতি আসনের এমপিরা মোট পাবেন ৫৫ কোটি টাকা করে।
তৃতীয় দফায় এ প্রকল্পের আওতায় নতুন করে ৩০৫ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক, ৩৬০ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক উন্নয়ন, ৫ হাজার ৭৫ কিলোমিটার গ্রাম সড়ক উন্নয়ন, এক হাজার ৯০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ, ৭ হাজার ৯৯২ মিটার গ্রামীণ সড়কে (১০০ মিটারের কম দৈর্ঘ্যের) সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। এমপিদের জন্য এটি তৃতীয় ধাপের বরাদ্দ।
সারসংক্ষেপের তথ্যানুযায়ী, ২০০৯ সালে প্রথম পর্যায়ে প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৪ হাজার ৮৯২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এটি ২০১০ সালের মার্চ থেকে ২০১৬ সালে জুনে শেষ হয়। সরকারের দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৬ হাজার ৭৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে ওই প্রকল্প যা চলমান রয়েছে। ওই প্রকল্পের মেয়াদ আরো এক বছর থাকলেও সরকারের পাঁচ বছরের মেয়াদ মাথায় রেখেই চার বছরের জন্য তৃতীয় পর্যায়ের এ প্রকল্প।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, সংসদীয় আসন ৩০০টি হলেও এই প্রকল্পের আওতায় থাকছে ২৮০টি আসন। মূলত দেশের ১২টি সিটি করপোরেশন এলাকায় যে ২০টি সংসদীয় আসন রয়েছে, সেই আসনগুলোকে এই প্রকল্পের বাইরে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সংরক্ষিত নারী এমপিদেরও এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।