বুয়েট ছাত্র আবরারকে তার আবাসিক হলের ভেতরেই রবিবার (৬ অক্টোবর) বেধড়ক পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আবারও আলোচনায় এসেছে ‘পিটিয়ে হত্যা’র বিষয়টি। মানুষের মারধরে মানুষের মৃত্যুর এই নির্মম ও নৃশংস প্রক্রিয়াটি দেশে মোটেও নতুন বিষয় নয়। অনাদিকাল থেকে ঘটে আসা এই নির্মমতা একবিংশ শতাব্দীতে এসেও যে বাঙালির সমাজ ব্যবস্থা থেকে মোটেও যায়নি তার প্রমাণ প্রায় প্রতিদিনই গণমাধ্যমে এমন খবরের উপস্থিতি। আবরার এর সর্বশেষ উদাহরণ মাত্র। প্রতিনিয়ত সংবাদমাধ্যমে পাওয়া হত্যাকাণ্ডের খবরের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে পিটিয়ে হত্যা। বাংলা ট্রিবিউনের গবেষণা বিভাগের তথ্য-উপাত্ত অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তিনটি প্রধান জাতীয় দৈনিকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী শারীরিকভাবে আঘাত করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে ৫৫৪টি।
পিটিয়ে হত্যার ধরন ও কারণ একেক ঘটনায় একেক রকম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্ষোভ, রাগ, ক্রোধজনিত কারণে এমন ঘটনা ঘটলেও ঠাণ্ডা মাথায় এবং পরিকল্পিতভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাও অনেক সময় ঘটে থাকে। আবার গণপিটুনির শিকার হন যে ব্যক্তি মারধরকারীরা অনেকাংশে তার পরিচিতও থাকেন না। সাধারণত চোর, ডাকাত, ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলা, প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিপক্ষকে পিটিয়ে মেরে ফেলা, যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে পিটিয়ে মেরে ফেলা, জমি নিয়ে বিরোধ, ভিন্নমতসহ আরও নানান কারণে এই ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পুরুষরাই এই ধরনের হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে বেশি। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, পিটিয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার ৭৬ শতাংশই পুরুষ এবং ২৪ শতাংশ নারী।
গ্রামাঞ্চলে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটছে সবচেয়ে বেশি। পর্যালোচিত ৫৫৪টি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ৫৪ শতাংশ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে গ্রামাঞ্চলে। ২৩ শতাংশ ঘটেছে নগরাঞ্চলে এবং ৯ শতাংশ ঘটেছে শহরাঞ্চলে। বাকি ১৪ শতাংশ হত্যাকাণ্ডের স্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
অঞ্চলভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, উল্লিখিত সময়ে এই ধরনের অপরাধ সবচেয়ে বেশি ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। মোট সংখ্যার অন্তত ৪১ শতাংশ হত্যার ঘটনাই ঘটেছে ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায়। ১৪ শতাংশ চট্টগ্রাম বিভাগে, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে এমন হত্যার ঘটনা ঘটেছে ১০ শতাংশ। অর্থাৎ পিটিয়ে হত্যার মোট সংখ্যার ৭৫ শতাংশই সংঘটিত হয়েছে এই চারটি বিভাগে। বাকি চারটি বিভাগ অর্থাৎ রংপুর, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে এমন অপরাধের ঘটনা ঘটেছে বাকি ২৫ শতাংশ। এর মধ্যে সিলেটে ৪ শতাংশ, বরিশালে ৫ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৭ শতাংশ এবং রংপুরে ৯ শতাংশ পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
প্রাপ্ত তথ্যে, পিটিয়ে হত্যার শিকার ৫৫৪ জনের মধ্যে ৪৭০ জনের বয়স সম্পর্কে জানা যায়। পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৪৮ শতাংশ নিহতের বয়স ছিল ২১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।
পিটিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা:
তথ্যসূত্র: বাংলা ট্রিবিউন গবেষণা বিভাগ তিনটি জাতীয় দৈনিক থেকে এই উপাত্ত সংগ্রহ করেছে।