বদরুদ্দীন উমর : রাষ্ট্রের সব যন্ত্রের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ কায়েম রেখে ২০২৪-এর ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তার কয়েকটি লেজুড় সংগঠন জাতীয় সংসদের সব আসনে ‘জয়লাভ’ করেছে। এই নতুন জাতীয় সংসদে সরকারি দল আওয়ামী লীগবিরোধী একজন সদস্যও নেই। এ ছাড়া আর এক চমকপ্রদ ব্যাপার ঘটেছে। আওয়ামী লীগ কথায় কথায় সংবিধানের দোহাই দিলেও এবং সংবিধানের ১৫ সংশোধনীর কথা বললেও নিজেদের সরকারের অধীনে এই নির্বাচন করেছে। কিন্তু তারা সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী পূর্ববর্তী জাতীয় সংসদ বাতিল না করেই এই নির্বাচন করেছে। এমন সব অভূতপূর্ব ব্যাপার বাংলাদেশে তো নয়ই, এমনকি দুনিয়ার কোনো দেশে আজ পর্যন্ত দেখা যায়নি। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার অল্প দিনের মধ্যেই তারা যা কিছু করেছিল, তার ফলে তারা উপলব্ধি করেছিল যে, পরবর্তী নির্বাচনে জয়লাভ তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু পরাজয়ের এই সমূহ আশঙ্কা সত্ত্বেও তারা ছিল ক্ষমতায় টিকে থাকতে বদ্ধপরিকর। এ জন্য অতি ন্যক্কারজনকভাবে ১৯৯৬ সালে তারা নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য যে আইন সংসদে পাস করতে বাধ্য করেছিল তৎকালীন সরকারকে, তা রদ করে আবার বিদ্যমান সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা ফিরিয়ে এনেছিল। এটা ছিল রাজনৈতিকভাবে এক চরম অনৈতিক কাজ। সংবিধানে জাতীয় সংসদ সদস্যের সংখ্যা ৩০০। কিন্তু পূর্ববর্তী জাতীয় সংসদ বাতিল না করায় এই সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে ছয়শর বেশি।
২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন থাকাকালে পরিকল্পিত এজেন্ডা অনুযায়ী তারা এমন সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল, যাতে ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দলের প্রার্থী ছিল না এবং নির্বাচনের আগেই ১৫৩টি আসন দখল করে আওয়ামী লীগ ‘সংসদীয়’ আইন অনুযায়ী সরকার গঠন করার অধিকারী হয়েছিল। এটাও ছিল সারা দুনিয়ায় ‘সংসদীয়’ নির্বাচন ব্যবস্থার এক অদৃষ্টপূর্ব ঘটনা।
২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ কয়েকটি দল অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু সেই নির্বাচনের সময় বিরোধী দলগুলোর ওপর দমন-পীড়ন করা হয়েছিল এবং পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রেখে নির্বাচনে বেপরোয়া ও অভূতপূর্ব কারচুপির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতা দখল করেছিল। তাদের সেই সাফল্য দ্বারা নির্বাচনী কৌশলের কার্যকারিতা বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে ২০২৪ সালে তারা সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছিল।
আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হতে থাকার সময় রাজনৈতিকভাবে বিএনপি ঘুরে দাঁড়ায়। বিএনপির অবস্থা যাই হোক, মির্জা ফখরুল ইসলাম একজন সৎ ও যোগ্য রাজনীতিবিদ হিসেবে সুপরিচিত। প্রধানত তাঁর নেতৃত্বে বিএনপি রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে দ্রুত নিজেদের দুর্বল অবস্থা কাটিয়ে উঠে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ জনগণকে নিজেদের পেছনে সমবেত করতে থাকে এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করে। একের পর এক তারা ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র মিটিং-মিছিল সংগঠিত করতে থাকে। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর সরকারের অনেক বিরুদ্ধতা সত্ত্বেও তারা ঢাকায় এক বড় জনসমাবেশ করে। এই পরিস্থিতির মুখে আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপির বিরুদ্ধে তাদের আক্রমণ ও নির্যাতন বৃদ্ধি করতে থাকে। তা সত্ত্বেও প্রায় পুরো ২০২৩ সালে বিএনপি সারাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন সংগঠিত করতে থাকে। সেই সঙ্গে তারা আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন বর্জনেরও ঘোষণা দেয়।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিএনপি ঢাকায় এক বিশাল সমাবেশ করেছিল। অগণিত মানুষ সেই সমাবেশে যোগদান করেছিল। সেই সমাবেশের সময় আওয়ামী লীগ সরকার পুলিশ দিয়ে তাদের ওপর এক সর্বাত্মক আক্রমণ চালায় এবং সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সেই সঙ্গে ২৮ তারিখ থেকে তারা বেপরোয়াভাবে বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করতে শুরু করে। তারা বিএনপির হাজার হাজার লোককে মিথ্যা মামলা দিয়ে, এমনকি কোনো মামলা না দিয়েও গ্রেপ্তার শুরু করে। তারা বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা মির্জা ফখরুল ইসলামসহ অন্যান্য নেতাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠায়। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন পর্যন্ত এভাবে তারা বিএনপির ২৩ হাজারের ওপর নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে।
তারা শুধু বিএনপিই নয়, অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলের ওপর একইভাবে নির্যাতন চালিয়ে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, যাতে আওয়ামী লীগ এবং তাদের লেজুড় কয়েকটি ছোট দল ছাড়া নির্বাচনে অন্য কারও পক্ষে প্রার্থী হওয়া অসম্ভব। কাজেই নির্বাচনে তারা ছাড়া অন্য কেউ প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কাউকে ভোট দেওয়ার কোনো সুযোগ জনগণের ছিল না।
কিন্তু এ পরিস্থিতি তৈরি করলেও আওয়ামী লীগ অন্য এক বিপদের মধ্যে পড়ে। তারা এটা উপলব্ধি করে যে, নির্বাচনে তাদের মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে তাদের দলেরই অন্য প্রভাবশালী নেতারা বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন। এই ভয়ে ভীত হয়ে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বিদ্রোহী আওয়ামী প্রার্থীদের নিয়ম অনুযায়ী বহিষ্কার না করে আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র বা স্বাধীন প্রার্থীরূপে স্বীকৃতি দেওয়ার। এটা ছিল নির্বাচনী নিয়ম ও নৈতিকতার এক লঙ্ঘন। বাংলাদেশ এবং দুনিয়ার অন্য কোনো দেশের নির্বাচনে এ ধরনের অদ্ভুত ব্যাপার এর আগে আর কোথাও দেখা যায়নি। এই কাজের দ্বারা আওয়ামী লীগ এক চরম নীতিহীনতা ও নির্বাচনী নিয়মকানুনই লঙ্ঘন করেনি; এর দ্বারা প্রমাণিত হয়েছিল যে আওয়ামী লীগ সংগঠনের অভ্যন্তরে এক মহাভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সাংগঠনিক অবক্ষয়ের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সংগঠনে দুর্নীতি ব্যাপকভাবে ঘটতে থাকায় পারস্পরিক স্বার্থের সংঘাতে অভ্যন্তরীণ ঐক্য ভয়াবহভাবে বিনষ্ট হয়েছিল। এই অবস্থায় রাজনৈতিকভাবেও আওয়ামী লীগ জনগণ থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল। এটা ঘটেছিল নিজের দলের পরিবর্তে আমলা, পুলিশ ও আদালত নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ক্ষমতা সংহত করতে থাকার কারণে। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সংগঠনকে প্রায় সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করায় সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের মধ্যে অনৈক্যজনিত সংকট তীব্র আকার ধারণ করে।
অনেক মেগা প্রকল্প খাড়া করে দেশের উপরিকাঠামোতে এক বিপ্লব সাধন করে দেশে উন্নয়নের বন্যা বইয়ে দেওয়ার কথা গর্বের সঙ্গে বলা হয়। কিন্তু এই মেগা প্রকল্পগুলোই হয়ে দাঁড়ায় চুরি ও লুটপাটের বড় উপায়। দেখা যাবে, প্রতিটি মেগা প্রকল্পে প্রাথমিক যে ব্যয় ধরা হয়েছিল সেগুলোর ব্যয় প্রকল্প শেষ হওয়া পর্যন্ত দুই, তিন, চার গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছিল। এই বৃদ্ধির সিংহভাগই লুটপাট হয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের ধনসম্পদ বাড়িয়েছিল। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা নিজেদের সম্পদের যে ঘোষণা নির্বাচন কমিশনের কাছে দিয়েছেন, তাতে দেখা যায়, তারা ২০০৯ সাল থেকে বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে নিজেদের ধনসম্পদ প্রভূতভাবে বৃদ্ধি করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকের ধনসম্পদ এই পর্যায়ে একশ, দুইশ গুণ বা তারও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে! এসবই হয়েছে চুরি, দুর্নীতি ও লুটতরাজের মাধ্যমে। এর ফলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এবং তাদের সঙ্গে সম্পর্কিত ছোটখাটো দলের প্রার্থীদের মধ্যে তেমন কোনো সৎ লোক নেই।
এসবের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রায় সব পত্রিকায় অসংখ্য রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, এমনকি ভারতের প্রধান পত্রিকাগুলোতেও বেশ কড়া সমালোচনামূলক রিপোর্ট ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতা-মদমত্ত আওয়ামী লীগ সরকার এসব কিছুই আমলে না এনে তাদের নির্বাচনী এজেন্ডা অপ্রতিহতভাবে কার্যকর করেছে।
যেহেতু নির্বাচনে শতভাগ প্রার্থীই ছিল আওয়ামী লীগ ও তাদের কৃপাপ্রার্থী লেজুড় সংগঠনের এবং যেহেতু নির্বাচনে বিরোধী দলের কোনো প্রার্থী ছিল না; কোনো রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ছিল না; সে জন্য তাতে অংশগ্রহণে জনগণের কোনো উৎসাহ ছিল না। নির্বাচন কমিশনের হিসাবমতো ভোট দিয়েছে ৪২ শতাংশ ভোটার। কিন্তু এটা হলো কারচুপির চূড়ান্ত। কারণ প্রথম থেকেই জাল ভোট শুরু হলেও বেলা ৩টা পর্যন্ত তাদের ঘোষণা অনুযায়ী ভোট পড়েছিল ২৭ শতাংশ। কিন্তু ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত এই শেষ এক ঘণ্টায় ভোটার সংখ্যা দাঁড়ায় ৪২ শতাংশ। যে কোনো সৎ ও নিরপেক্ষ লোকের কাছে এটা বোঝার অসুবিধা নেই যে, শেষ এক ঘণ্টায় অবাধ কারচুপি করা হয়েছে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আওয়ামী লীগ সরকার ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীদের ভোটকেন্দ্রগুলোতে ঢুকিয়ে রাশি রাশি ব্যালট পেপার ভোটের বাক্সে ফেলেছে। এর ফলে ৭ ঘণ্টায় তাদেরই হিসাবমতো ২৭ শতাংশ ভোট পড়লেও শেষদিকে ভোটারদের অনুপস্থিতিতে ভোট পড়ে ১৪ শতাংশ!
আওয়ামী লীগ কোটি কোটি টাকা খরচ করে ভোটার সংগ্রহ করেছে। গরিব ভোটারদের টাকা দিয়ে, বাস ও রিকশায় করে তাদের ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত করে ও বিরিয়ানি খাইয়ে আওয়ামী লীগ ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। মনে হয়, আসলে ১০-১৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি। সংবাদপত্রের রিপোর্ট ও ছবি থেকে দেখা যায়, সমতল ও পাহাড়ি অঞ্চলে অসংখ্য ভোটকেন্দ্র একেবারে ফাঁকা ছিল। কেউ ভোট দেয়নি।
এভাবে এই নির্বাচন দেশের মানুষ এবং আন্তর্জাতিক মহল কারচুপির নির্বাচন হিসেবেই প্রত্যাখ্যান করেছে। কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে।
ভারত, চীন, রাশিয়া নিজেদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে এই নির্বাচনকে নিরপেক্ষ হিসেবে আখ্যায়িত করে নির্বাচনে জয়ের জন্য শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি দেশ এ নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং দুনিয়ার নিকৃষ্ট সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর বাংলাদেশের নির্বাচনে এই ভূমিকা পালন করার কারণ বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে নানা কারণে তাদের সম্পর্কের অবনতি। বিশেষ করে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকা সম্পর্কের অবনতির অন্যতম কারণ। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান সত্ত্বেও বাংলাদেশের নির্বাচনের ক্ষেত্রে তারা যে ভূমিকা নিয়েছে, তার ফলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি দুনিয়াজুড়ে প্রচার লাভ করেছে। উপরোক্ত দেশগুলো ও তাদের প্রধান প্রধান পত্রিকা বাংলাদেশের নির্বাচনের প্রকৃত চরিত্র উদ্ঘাটন করে দুনিয়ার জনগণকে এ বিষয়ে অবহিত করেছে।
২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী নিজের হাতে সব ক্ষমতা নিয়ে আসার চেষ্টায় নিযুক্ত থেকেছেন। এখন ২০২৪ সালের নির্বাচনে জয়ের পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা তাঁর হাতে নিরঙ্কুশভাবে কেন্দ্রীভূত। সরকার ও দলের মন্ত্রী ও নেতারা তাঁর আজ্ঞাবহ ছাড়া আর কিছুই নয়। জনগণ থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় এক হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার এই কেন্দ্রীভবন রাষ্ট্র, ক্ষমতাসীন সরকার ও দল কারও শক্তির পরিচায়ক নয়। কোনো এক আলোচনা প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘সমস্ত শরীরের রক্ত মুখে আসিয়া জমা হইলে তাহাকে স্বাস্থ্য বলা যায় না।’
আওয়ামী লীগের নির্বাচনে বিজয় সত্ত্বেও দেশের জনগণ আজ তাদের বিরুদ্ধে চরমভাবে বিক্ষুব্ধ। এ পরিস্থিতিতে জনগণও চায় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এক নতুন নির্বাচন। এদিক দিয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে বিজয় সত্ত্বেও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন উত্তপ্ত। এই পরিস্থিতিতে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যদি হতোদ্যম না হয়ে নতুন নির্বাচনের জন্য আন্দোলনে নামে, তাহলে রাজনৈতিক পরিস্থিতির মোড় ঘুরবে। মুদ্রাস্ফীতি, জিনিসপত্রের অনিয়ন্ত্রিত মূল্যবৃদ্ধি, চারদিকে আওয়ামী লীগের লোকদের চুরি, দুর্নীতি, লুটপাট, বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মহলের সম্পর্কের অবনতি ইত্যাদি ইস্যু নিয়ে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যদি আন্দোলনে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে আসে, সক্রিয় হয়, তাহলে দেশের পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন হবে। এই সুযোগ যদি বিরোধী দলগুলো ব্যবহার না করে তাহলে সেটা হবে এক বড় রকম রাজনৈতিক নির্বোধের কাজ। শেকসপিয়র লিখেছিলেন, ‘There is a tide in the affairs of man which taken at the flood leads on to fortune.’ বাংলাদেশের জনগণের এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে এখন এক অনুকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে আওয়ামী লীগ সরকার গভীর সংকটের মুখোমুখি হবে।
বদরুদ্দীন উমর: তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক