পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরবে এমন আশায় খুলনার নাজমুল বিশ্বাস (২৮) গিয়েছিলেন কাতারে। একই স্বপ্নে কুমিল্লার গোলাম মোস্তফা (২৬) সৌদি আরব ও নারায়ণগঞ্জের রবিউল আওয়াল (৩১) গিয়েছিলেন দুবাই।
কিন্তু গতবছরের ডিসেম্বরে ৩ জনই দেশে ফিরেছেন লাশ হয়ে। একজনের মৃত্যু দুর্ঘটনায়, বাকি দুজনের মৃত্যু স্ট্রোক ও হৃদরোগে।
এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৫ হাজার ১২৩ জন, ওমান থেকে ৩ হাজার ৭৭৬ জন, কুয়েত থেকে ২ হাজার ৭২৪ জন, বাহরাইন থেকে ১ হাজার ১১ জন এবং কাতার থেকে ১ হাজার ৫৬২ জনের মরদেহ এসেছে।
বিদেশে মারা যাওয়া অনেক প্রবাসীর মরদেহ অনেক সময়ই দেশে আনা হয় না। স্থানীয়ভাবেই সেগুলো দাফন করা হয় বিশেষ করে সৌদি আরবে।
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০টি মরদেহ আসে। মৃতদের সঙ্গে আসা নথিপত্র অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি প্রবাসী মারা যান মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত (ব্রেইন স্ট্রোক) কারণে। এদের একটা বড় অংশই মধ্যবসয়ী কিংবা তরুণ। এ ছাড়াও হৃদরোগসহ বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা, সড়ক দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা কিংবা প্রতিপক্ষের হাতেও খুন হন বাংলাদেশিরা।
তবে তরুণ কিংবা মধ্যবয়সে কেন এতো বিপুল সংখ্যক প্রবাসী স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন সে বিষয়ে রাষ্ট্রীয় কোনো অনুসন্ধান হয়নি। প্রবাসী বাংলাদেশি, মৃতদের স্বজন ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্য মূলত মরু আবহাওয়ার দেশ। প্রচণ্ড গরমে প্রতিকূল পরিবেশে অদক্ষ এই বাংলাদেশিরা ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন কাজে যুক্ত থাকেন। একদিকে প্রতিকূল পরিবেশ, আরেকদিকে অমানুষিক পরিশ্রম, ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গাদাগাদি করে থাকা, দীর্ঘদিন স্বজনদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা এবং সব মিলিয়ে মানসিক চাপের কারণেই সাধারণত স্ট্রোক বা হৃদরাগের মতো ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক ফখরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০টা লাশ আসে। অধিকাংশ লাশই আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। নথি অনুযায়ী, অধিকাংশ মৃত্যুর কারণ ব্রেইন স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটক। নিহত এসব পরিবারকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ড থেকে দাফনের জন্য ৩৫ হাজার টাকা ও পরে নিহতদের পরিবাগুলোকে ৩ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিন কফিনে আসা মরদেহগুলো বিমানবন্দরের কার্গো গেটে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। অপেক্ষারত পরিবারগুলোর বসার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই, নেই কোনো টয়লেট। রোদে বৃষ্টিতে তাঁরা দাঁড়িয়ে থাকেন, এই দপ্তর থেকে সেই দপ্তরে ছোটাছুটি করেন। অবশেষে যখন লাশ বুঝে পান, অধিকাংশ সময় মৃত্যুকে মেনে নিতে পারেন না স্বজনেরা। ফলে স্বজনদের আহাজারির শেষ নেই।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়েই আগামীকাল ১৮ ডিসেম্বর পালিত হবে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস।
আগামীকালই কাতারে বিশ্বকাপ ফাইনাল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যে কাতারে প্রবাসীদের মৃত্যুকে ঘিরে সমালোচনা চলছে। এ বছর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য হলো- ‘থাকবো ভালো, রাখবো ভালো দেশ, বৈধপথে প্রবাসী আয়-গড়বো বাংলাদেশ।’
কোন বছরে কত মরদেহ
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ড এবং বিমানবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালে ২ হাজার ৯৮ এবং ২০০৯ সালে ২ হাজার ৩১৫ জন প্রবাসীর
লাশ এসেছে। ২০১০ সালে চট্টগ্রামের ২৬০ জনসহ মোট ২ হাজার ৫৬০ জন প্রবাসীর লাশ এসেছে।
২০১১ সাল থেকে ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও সিলেটে আসা প্রবাসীদের মরদেহের তথ্য পাওয়া যায়। ৩ বিমানবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে ২ হাজার ৫৮৫ জন, ২০১২ সালে ২ হাজার ৮৭৮ জন, ২০১৩ সালে ৩ হাজার ৭৬ জন, ২০১৪ সালে ৩ হাজার ৩৩৫ জন, ২০১৫ সালে ৩ হাজার ৩০৭ জন, ২০১৬ সালে ৩ হাজার ৪৭৮ জন, ২০১৭ সালে ৩ হাজার ৩৮৫ জন, ২০১৮ সালে ৩ হাজার ৮১১ জন, ২০১৯ সালে ৪ হাজার ৩৪ জন, ২০২০ সালে ৩ হাজার ১৯ জন, ২০২১ সালে ৩ হাজার ৬৭৫ জন এবং ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ১ হাজার ৭৪৫ জন প্রবাসীর মরদেহ এসেছে।
এর আগে ২০০৩ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত এসেছে ৬ হাজার ১৭টি মরদেহ। এই সংখ্যা যোগ করলে গত ১৯ বছরে ৫১ হাজার ৩৯৫ জন প্রবাসীর মরদেহ এসেছে। আরও আগে ২০০২ সাল পর্যন্ত ৩ হাজার ৬১৩ জন প্রবাসী শ্রমিকের মরদেহ আসার তথ্য আছে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। অর্থাৎ সবমিলিয়ে ৫৪ হাজার ৯৩১ জন প্রবাসীর মরদেহ আসার তথ্য আছে।
এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘মানুষের জীবনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু হতে পারে না। এই যে বিপুল সংখ্যক প্রবাসীর মরদেহ আসছে, কেন তারা মারা যাচ্ছে সেটা তদন্ত করা উচিত। প্রয়োজনে প্রতিটি লাশের ময়নাতদন্ত হওয়া দরকার। প্রয়োজনে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বা আইএলওর সঙ্গে এ নিয়ে কাজ হতে পারে।’
বিশ্বকাপ ও কাতারকে নিয়ে যত সমালোচনা
২০১০ সালের ডিসেম্বরে বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের দায়িত্ব পায় কাতার। ফলে গত ১০ বছরে বিপুল ও বৃহৎ সব প্রকল্প হাতে নেয় দেশটি। এর মধ্যে ৮টি নতুন স্টেডিয়াম, নতুন ১টি বিমানবন্দরসহ রাস্তাঘাট ও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। বড় বড় সব স্থাপনা ও উন্নয়নকাজের জন্য বিপুল সংখ্যক জনশক্তির দরকার ছিল দেশটির।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে (বিএমইটি) ১৯৭৬ সাল থেকে কাতারে প্রবাসী শ্রমিক যাওয়ার তথ্য আছে। সেবছর ১ হাজার ২২১ জন শ্রমিক কাতারে যান। এরপর সেটি ক্রমে বাড়লেও ২০১১-১২ সাল অব্দি বছরে ১০-১২ হাজারেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে ২০১২ সালে ২৮ হাজার, ২০১৩ সালে ৫৮ হাজার, ২০১৪ সলে ৮৭ হাজার, ২০১৫ সালে ১ লাখ ২৪ হাজারে এবং ২০১৬ সালে ১ লাখ ২০ হাজার কর্মী কাতারে যায়। পরের বছরগুলোতে কাতারে কর্মী যাওয়া কমতে থাকে। গত বছর ১১ হাজার কর্মী কাতার গেছে।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বকাপকে বিপুল পরিমাণ উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কাতারে শুধু ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও বাংলাদেশের সাড়ে ৬ হাজার প্রবাসী শ্রমিক মারা গেছেন। এরমধ্যে বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা ১ হাজার ১৮ জন।
তবে এই প্রবাসী শ্রমিকের সবাই যে বিশ্বকাপ আয়োজন প্রকল্পের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন তা নয়।
বিমানবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, এদের বেশিরভাগেরই মৃত্যুর কারণ স্ট্রোক বা হৃদরোগ। তবে কেউ কেউ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে।
কেন এমন মৃত্যু
প্রবাসীদের মরদেহের সঙ্গে যে নথিপত্র আসে সে অনুযায়ী মৃত্যুর কারণ লিখে রাখা হয় বিমানবন্দরের প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কে। কীভাবে এতো প্রবাসী মারা যাচ্ছে সেটা বোঝার জন্য যে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে আসা ৩০৭ জন প্রবাসীর লাশের মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৭৬ জনই (৫৬ শতাংশ) মারা গেছেন স্ট্রোকে যারা তরুণ কিংবা মধ্যবয়সী। এরপর ৬২ জনের (২০ শতাংশ) মৃত্যুর কারণ হৃদরোগে আক্রান্ত বা স্বাভাবিক মৃত্যু। কর্মক্ষেত্রে বা বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৫৭ জন (১৮ শতাংশ)। সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১২ জন (৪ শতাংশ)। আত্মহত্যা করেছেন ৩ জন। বাকি ২জন খুন।
শুধু এক মাস নয়, গত ১৪ বছরের বিভিন্ন সময়ের মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কারণগুলো একইরকম।
সবচেয়ে বেশি প্রবাসী মারা যাচ্ছেন স্ট্রোকে। এরপরের হূদেরাগ বা অন্য কোনো কারণে, কর্মক্ষেত্রে ও সড়ক দুর্ঘটনা, অসুস্থতা, আগুনে পুড়ে মৃত্যু, আত্মহত্যা বা খুন। তবে অধিকাংশ সময় পরিবার এই মৃত্যুকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারে না।
অধিকাংশ মৃত্যুর কারণ হিসেবে স্ট্রোক বলা হলেও এতো বিপুল সংখ্যক প্রবাসীরা কেন স্ট্রোকে মারা যায় তা নিয়ে রাষ্ট্রীয় কোনো অনুসন্ধান হয়নি।
দীর্ঘদিন সৌদি আরবের প্রিন্স সুলতান কার্ডিয়াক সেন্টারের হৃদরোগ বিভাগের চিকিৎসক হিসেবে কাজ করে এখন ঢাকার ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কাজ করছেন মাছুম সিরাজ।
সৌদি আরবে কেন এত বাংলাদেশি স্ট্রোক বা হূদেরাগে মারা যান, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সৌদি আরব বা মধ্যপ্রাচ্যে প্রচণ্ড গরম। সেখানে তাপমাত্রা ৪৫ থেকে ৫০ ডিগ্রি পর্যন্ত থাকে। আমাদের শ্রমিকেরা যে পরিবেশে সেখানে কাজ করছেন, সেটা অমানবিক। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শ্রম আইন মানা হয় না। আবার তারা সেখানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গাদাগাদি করে থাকেন। সেখানে অনেকেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে মারা যান।’
তিনি মনে করেন, কাজের পরিবেশ বা থাকার পরিবেশ উন্নত করা ছাড়া এই মৃত্যু বন্ধের কোনো উপায় নেই।
পেশায় চিকিৎসক, দীর্ঘদিন সৌদি আরবপ্রবাসী এবং জনশক্তি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ডা. আরিফুর রহমানও এই কারণগুলোর সঙ্গে একমত। তিনি মনে করেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে একদিকে প্রচণ্ড গরম। খাবার খুব সস্তা ও তেলযুক্ত। এর পাশাপাশি ভয়াবহ পরিশ্রম, সবসময় দুশ্চিন্তা, মালিকের অত্যাচার, দেশে স্বজনদের বিভিন্ন চাহিদা, বিনোদনহীন একঘেয়ে জীবন তাদের মানসিক চাপে ফেলে। এ রকম অবস্থায় অনেকে স্ট্রোক বা হৃদরোগে আক্রান্ত হন।’
বিএমইটি, জেলা জনশক্তি কর্মসংস্থা অফিস ও ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে একজন মানুষের বিদেশে যাওয়ার আগে তাকে সেই দেশের আইন কানুন সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য ৩ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু যাওয়ার আগ মুহুর্তের এই প্রশিক্ষণে বেশিরভাগ সেভাবে মনোযোগ দেন না।
মধ্যবয়সেই থেমে যাচ্ছে জীবন, অসহায় পরিবার
মাত্র ২২ বছর বয়সে সৌদি আরবে স্ট্রেকে আক্রান্ত হয়ে মারা যান পাবনার আজহার আলী সরদার। ছেলের মৃত্যুতে শোকগ্রস্থ বাবা নাজমুল হোসেনের প্রশ্ন, ‘২২ বছরের একটা ছেলে কেন স্ট্রোক করবে?’ একই প্রশ্ন আরেক পিতা টাঙ্গাইলের মোহাম্মদ কাদেরের। তার ছেলে সুজন খান মাত্র ২৩ বছর বয়সে স্ট্রোক করে মারা যান।
শুধু এই দুজনই নন, প্রবাসে যারা মারা যান তাদের বয়স বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তরুণ বা মধ্য বয়সেই স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হচ্ছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবারের আয়ের একমাত্র অবলম্বনকে হারিয়ে পুরো পরিবার অকুল পাথারে পড়েন। আবার হঠাৎ করে স্বামী হারিয়ে বিপাকে পড়েন স্ত্রী, বাবাকে হারিয়ে ভয়াবহ কষ্টে পড়েন সন্তানেরা।
নারী কর্মীদের আত্মহত্যা বাড়ছে
বাংলাদেশ থেকে সৌদি অরাব বিপুল সংখ্যক নারী কর্মী নেওয়া শুরুর পর, ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬০০ নারী কর্মীর মরদেহ দেশে এসেছে।
নারীদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ হিসেবে স্ট্রোক, হৃদরোগ বা দুর্ঘটনার পাশাপাশি একটি বড় কারণ আত্মহত্যা।
অন্তত ৩১ শতাংশ মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যা এবং দিন দিন এই সংখ্যা বাড়ছে, বিশেষ করে সৌদি আরবে।
গতমাসে সৌদি আরব থেকে নরসিংদির রায়পুর উপজেলার বোয়ালমারা গ্রামের হাজেরা বেগমের মরদেহ দেশে আনা হয়। যাওয়ার মাত্র ১৪ দিনের মাথায় তিনি আত্মহত্যা করেন।
হাজেরার বোন জানান, স্বামী নিরুদ্দেশের পর ৩ শিশু সন্তানকে নিয়ে কীভাবে চলবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতেন হাজেরা। এরপর তিনি স্থানীয় এক দালালের কথায় এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরবে যান। কিন্তু যাওয়ার পরই তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
‘হাজেরা মতো শক্ত মানুষ আত্মহত্যা করবে এটা আমি কোনোভাবেই মানতে পারি না। তাকে আসলে নিপীড়ন করা হয়েছে,’ বলেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিকাল সাইকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও নাসিরউল্লাহ সাইকোথেরাপি ইউনিটের পরিচালক কামালউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী দ্যা ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘একজন মানুষ কখনোই স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আত্মহত্যা করেন না। সৌদি আরবের যে ঘটনাগুলো আমরা দেখি এর কারণ ওই নারীরা সেখানে হয়তো নিপীড়ন বা এমন বিরূপ পরিস্থিতির শিকার হন যে আত্মহত্যাকেই তিনি বাঁচার উপায় মনে করেন। আসলে মানুষ আর কোনো উপায় সামনে না পেলেই এটা করে।’
অভিবাসনবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রামরুর সি আর আবরার বলেন, ‘প্রবাসীদের লাশ নিয়ে আমরা বেশ কয়েকটি গবেষণা করেছি। কেন এতো বিপুল সংখ্যক প্রবাসী স্ট্রোকে মারা যাচ্ছেন সেগুলো নিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুসন্ধান করা জরুরি। সময় এসেছে এসব মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখার। পাশাপাশি বিদেশের কর্মপরিবেশ উন্নত করার জন্য দ্বিপক্ষীয় এবং বহুপক্ষীয় আলোচনার প্রয়োজন। কারণগুলো বের করতে পারলে সে অনুযায়ী প্রবাসীদেরও প্রস্তুত করা যেতে পারে যাতে মৃত্যুগুলো কমিয়ে আনা যায়। এখানে যে দেশগুলোতে কর্মীরা যাচ্ছে তাদেরকে অনেক বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে।’
শরিফুল হাসান: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও কলামিস্ট