১১ই মার্চ ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে মানববন্ধন ঘোষণা গণতন্ত্র মঞ্চের

logo

স্টাফ রিপোর্টার

(১৮ ঘন্টা আগে) ৪ মার্চ ২০২৩, শনিবার, ২:২৪ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:১৬ পূর্বাহ্ন

mzamin

যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজধানীতে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে পদযাত্রাটি শুরু হয়ে শিল্পকলার মোড়, সেগুনবাগিচা ও রমনা থানা হয়ে কাকরাইল মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এর আগে সকাল সাড়ে ১১টায় বিরোধী মতের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে দমন-পীড়ন ও দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু যুগপৎ ধারার পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, আগামী ১১ই মার্চ ঢাকাসহ সারা দেশে সকল বিভাগীয় শহরে মানববন্ধন কর্মসূচি করবে গণতন্ত্র মঞ্চ। ইতিমধ্যেই সরকার সংলাপের বিষয়ে কথাবার্তা শুরু করেছে। আগে আপনাদের ঘোষণা দিয়ে পদত্যাগ করতে হবে, তাহলে আমরা বিবেচনা করবো আপনাদের সাথে আলোচনায় যাবো কিনা। বিএনপির সাথে যুগপৎ আন্দোলন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। অবিলম্বে আদানী গ্রুপের সাথে চুক্তি বাতিল করুন না হলে আমরা বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করবো।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এ সরকার এখন আন্তর্জাতিকভাবেও ঘৃণিত হয়েছে। সারাদেশে বিরোধী দলের ওপর কত হামলা, নির্যাতন হয়েছে সেগুলো আপনারা জানেন। আমিও জেলে ছিলাম অনেকদিন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমি কারচুপি করে নির্বাচনে জিততে চাই না।

অর্থাৎ ঠাকুরঘরে কে রে, আমি কলা খাইনি। সরকার এখন বিদেশিদের প্রবলভাবে আশ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করছে, আমরা একটা ইনক্লুসিভ নির্বাচন করবো। অর্থাৎ, সব দলগুলোকে আনব। কিন্তু যেসব দলগুলো বলেছে নির্বাচন করবে, আমরা তাদের অধীনে নির্বাচন করব না। আজকে এখানে আমরা আবারও বলছি, ওই বিদেশিদের যতোই বোঝান, দেশের মধ্যে যত তালিবালি করেন, আপনি যতক্ষণ ক্ষমতায় আছেন ততক্ষণ আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি না। 

মান্না বলেন, আওয়ামী লীগ বলছে, আমরা আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করছি, অশান্তি করছি। তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা এখনো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বজায় রেখে আন্দোলন করে যাচ্ছি। কিন্তু সরকার যদি সব সীমা অতিক্রম করে তবে সরকারের গলায় গামছা বেঁধে আমরা আমাদের দাবি দাওয়া আদায় করবো। সেই জন্যই এই যুগপৎ আন্দোলন। আমরা গ্রাম-গ্রামান্তরে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। সরকার বিদ্যুতের দাম কমাতে পারে না, জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। সরকার তথাকথিত জিডিপি নিয়ে মিথ্যাচার করছে। অর্থনীতি যেকোনো সময় হুড়মুড় করে ভেঙে যেতে পারে।

মান্না বলেন, তথাকথিত সংলাপের কথা বাজারে ছাড়তে শুরু করেছে সরকার। কার সাথে সংলাপ? তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, যিনি সংলাপে তার পিতার নামে কসম খেয়ে বললেন, ‘আমি মিথ্যা কথা বলতে পারি না। আমি বলছি, আপনারা নির্বাচনে আসেন। এ নির্বাচন সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য ও প্রভাবমুক্ত রাখবো। মান্না বলেন, ওই নির্বাচনের ফলাফল আপনারা দেখেছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি না যাচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা কোনো কথা বিশ্বাস করছি না। যদি সংলাপ করতে চান, তাহলে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেন যে কিভাবে, কী হলে সত্যি সত্যি আপনাদের মত ভিক্ষুকদের সাথে কথা বলতে পারি।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আওয়ামী লীগ আজকেও বিরোধী দলের কর্মসূচীর দিনে শান্তি সমাবেশের নামে পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে। এই ধরনের কর্মসূচিকে জনগণ নার্ভাস দলের কর্মসূচি নাম দিয়েছেন। সন্ত্রাস না করে আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন না। তারা ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে সমস্ত বাংলাদেশকে বিবস্ত্র করেছে। তাই তাদের বিদায় করা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই।

তিনি বলেন, রোজার আগেই সিন্ডিকিটের মাধ্যমে বাজার অস্থির অবস্থায় নিয়ে গেছে। এর পরেও তারা বলে মানুষ নাকি বেহেস্তে আছে, তারাই শুধু বেহেস্তে আছে। তারা একটি পলিসি নিয়েছে, লুটপাট টাকা বিদেশে পাচার করে দেওয়া। আমরা জালিয়াতি কোম্পানি আদানী যাদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ভারতে আন্দোলন শুরু হয়েছে তাদের সাথে সরকারের চুক্তি বাতিল করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাবে।

তিনি আরো বলেন, রোজার আগে ও পরে গণতন্ত্র মঞ্চ বিএনপির সাথে যুগপৎ আন্দোলনে থাকবে। দুই ঈদের মাঝখানে গণআন্দোলন করে এই সরকারের বিদায় করবো। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই বিএনপির সাথে গণতন্ত্র মঞ্চ যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ রূপরেখা ঘোষণা করবে। বিজয় অর্জন ছাড়া মানুষ ঘরে ফিরবে না।

গণসংহতি  আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, আজকে আমরা যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে পদযাত্রা করছি। আমরা আজকে এমন একটি সরকার ব্যবস্থায় আছি যারা সমস্ত জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে জনগণকে একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। তারা কিভাবে হাজার-হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা যায় ও নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করা যায় তা নিয়ে ব্যস্ত। তারা ভাবে তাদের হাতে দুটো অস্ত্র আছে, মানুষ কে ভয়ভীতি ও হামলা মামলা করা। তাদের নিজস্ব বাহিনী লাঠিয়াল ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিয়েছে। কুষ্টিয়ায়, চট্টগ্রামে, রাজশাহীতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্যাতন করছে, সাধারণ ছাত্রদের ভয় দেখানোর জন্য। গণঅধিকার পরিষদের সদস্যদের ওপর হামলা করেছে, আবার উল্টো মামলা দিয়েছে। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য বিদেশীদের খুশি করছে। আমরা পরিস্কার করে বলতে চাই, এইবার আক্রমণ ও বিদেশীদের খুশি করে আর ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। এবার সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নেমে এসেছেন, তাই আর ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।

এসময় আরো বক্তব্য রাখেন রাস্ট্র সংস্কার আন্দোলনের  প্রধান সমন্বয়ক এডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডির) সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, গণ অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক রাশেদ খান।