শ্রমিকদের দাবি পূরণ না হলে আগামী ১লা জানুয়ারি থেকে গার্মেন্টস সেক্টরে শ্রমিক ধর্মঘট পালন করবে সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদ (এসএসপি)। এই দাবি যতদিন পূরণ না হবে ততদিন কারখানাসমূহ বন্ধ থাকবে বলেও জানিয়েছে এসএসপি। পাশাপাশি আগামীকাল রোববার থেকে সকল সেক্টরে গণসংযোগ করবে সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদ। শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদের উদ্যোগে এক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা জানান এসএসপির প্রধান সমন্বয়ক এএএম ফয়েজ হোসেন। মজুরি আন্দোলনে শহীদদের হত্যার বিচার, আহতদের চিকিৎসা, গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি, চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহাল, গার্মেন্টস সেক্টরে ঘোষিত মজুরি বাতিল করে ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার নির্ধারণের দাবিতে’ চূড়ান্ত আন্দোলন-সংগ্রামের প্রসঙ্গে এ আলোচনার আয়োজন করা হয়।
ফয়েজ হোসেন বলেন, গত ১লা ডিসেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শ্রমিক সমাবেশ করেছি। এই শ্রমিক সমাবেশে আমরা দাবিনামা উত্থাপন করেছি। এক মাস হয়ে গেলেও এবিষয়ে সরকার এখনো কোনো সাড়া দেয়নি। শ্রমিকদের দাবি পূরণ করে নাই। বিভিন্ন কল-কারখানায় মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনকারী ৪ জন শ্রমিককে সরকারি বাহিনী গুলি করে হত্যা করেছে। অসংখ্যা শ্রমিককে আহত করেছে, মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে, গ্রেপ্তার করেছে।
দ্রব্যমূল্য যে হারে বাড়ানো হয়েছে সেই হারে মজুরি বৃদ্ধি অথবা দ্রব্যমূল্য কমানোর দাবি অকাট্য। ‘এই অবস্থায় শ্রমিকশ্রেণী কী করতে পারে? ধর্মঘট। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী দাবি পূরণ না হলে ১লা জানুয়ারি থেকে গার্মেন্টস সেক্টরে শ্রমিক ধর্মঘট শুরু হবে। কারখানাসমূহ বন্ধ থাকবে, যতদিন না দাবি পূরণ হয়। আগামীকাল থেকে সকল সেক্টরে গণসংযোগ চলবে। সকল রাজনৈতিক দল, ছাত্র, কৃষক ও শ্রমিক সংগঠনসহ সকলের প্রতি আহ্বান ধর্মঘটকে সর্বাত্মক হরতালে পরিণত করে ধর্মঘট সফল করার উদ্যোগ গ্রহণ করুন।’
আলোচনায় আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করছি আমরা। সেই আন্দোলনে আমরা একটা স্টেজে এসেছি। সেখানে আমরা নির্বাচন বর্জনের কথা বলছি। আমরা জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি, এই রসিকতা ও খেলায় যাবেন না। বরং এসময়ে নাতি-নাতনির সঙ্গে খেলাধুলা করেন। এসময় নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য যেকোন ত্যাগ স্বীকার করার প্রস্তুতি নিতে শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
গত দুটি নির্বাচনের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, গত কয়েকটি নির্বাচনে দেখা গেছে এই সরকারের ভোটের কোন প্রয়োজন হয় নাই। এখানে একজন বক্তা বলছেন, ১৭৪টি আসনে কে নির্বাচিত হবেন তা ঠিক হয়ে গেছে। মানে কোথাও কোন প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে না। মাত্র কিছু জায়গায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। তাও কার কার মধ্যে, আমরা আর মামুরা। হয় সরকারি দল না হয় সরকারি দলের প্রধানের পা ছুঁয়ে সালাম করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। কিংবা তাদের (আওয়ামী লীগ) যে প্রতীক, সেই প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। অথবা আপস করে কতগুলো সিট ঠিক করে নিয়েছেন। সেখান থেকে সরকারি দলের প্রার্থী প্রত্যাহার হয়েছে। এভাবেই তো নির্বাচন হচ্ছে। এটা কি নির্বাচন না কি রসিকতা?
নজরুল ইসলাম খান বলেন, এই নির্বাচন করার জন্য প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা খরচ করছে সরকার! জনগণের টাকা। এটা কি নির্বাচন? নির্বাচন মানে তো প্রতিদ্বন্দ্বিতা। আর উনাদের ভোটটা দিয়ে লাভ কি? যেখানে ১৭৪টি জায়গায় কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। এই পরিস্থিতি যতদিন থাকবো ততদিন শ্রমজীবী, কৃষিজীবী এবং কর্মজীবী মানুষের কোন মূল্য এই সমাজ ও রাষ্ট্রে থাকবে না।
শ্রমিকদের বেতন কম দেয়ার পিছনে রাজনৈতিক কারণ আছে মন্তব্য করে তিনি আর বলেন, এখান থেকে বাঁচার পথ একটাই। নিজেদের শক্তি বাড়ানো। শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করা। কারণ আমাদের নিজেদের স্বার্থে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
আলোচনায় আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুর প্রমুখ।
মানব জমিন