- আলমগীর কবির
- ০২ জুলাই ২০২১
ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর হুমায়ূন আহমেদ চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন নিউইয়র্কে। সেখানে কেমোথেরাপির কষ্ট ভুলে থাকার জন্য প্রায়ই ছবি আঁকায় মনোযোগ দিতেন তিনি। ২০১২ সালের জুন মাসে নিজের আঁকা ২৪টি ছবি প্রদর্শনীর জন্য রুমা চৌধুরী ও বিশ্বজিত সাহাকে দিয়ে ছিলেন দেশের জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক। শর্ত ছিল, প্রদর্শনী শেষে ছবিগুলো তারা ফেরত দেবেন।
এর মাসখানেক পর ১৮ জুলাই হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু হয়। লাশ নিয়ে স্ত্রী শাওন চলে আসেন দেশে। ছবিগুলোর ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পরের বছর ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রুমা তার সাবেক স্বামী বিশ্বজিতকে দিয়ে হুমায়ূন আহমেদের মা আয়েশা ফয়েজের মিরপুরের পল্লবীর বাসায় ২৪টি ছবির মধ্যে ২০টি ফেরত দেন। বাকি চারটি ছবি ফেরত দেননি। বলা হয়েছিল ছবিগুলো হারিয়ে গেছে। কিন্তু সম্প্রতি রুমা চৌধুরী একটি প্রদর্শনীতে হারিয়ে যাওয়া ছবিগুলোর একটি সামনে আনেন। বিষয়টি নজরে আসে শাওনের।
তিনি চুরির অভিযোগ এনে এ বিষয়ে গত ২৯ জুন ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে একটি মামলা করেছেন। আসামি করা হয়েছে রুমা চৌধুরীকে। বিষয়টি নিয়ে রুমা চৌধুরী নিরব থাকলেও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিশ্বজিত সাহা। তার দাবি সব ছবি ফেরত দেয়া হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের মায়ের কাছে। শাওনের অভিযোগ সম্পন্ন মিথ্যা।
লিখিত ব্যাখ্যায় বিশ্বজিত সাহা বলেন, ‘২০১৩ সালে মুহম্মদ জাফর ইকবালসহ তার অন্য পুত্র-কন্যাদের উপস্থিতিতে হুমায়ূন আহমেদের মা আয়েশা ফয়েজের মিরপুরের পল্লবীর বাসায় গিয়ে হুমায়ূনের আঁকা ২৪টি চিত্রকর্মের মধ্যে ২০টি তার কাছে হস্তান্তর করি।
বাকি ৪টি ছবির মধ্যে ১টি চিত্রকর্ম হুমায়ূন আহমেদ জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত তৎকালীন স্থায়ী প্রতিনিধি বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনকে উপহার দেন। আরেকটি বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনকে উপহার দেয়া হয়। নিউইয়র্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের তৎকালীন কনসাল জেনারেল সাব্বির আহমেদকে একটি ছবি উপহার দেন হুমায়ূন আহমেদ। একটি ছবি মেলা থেকেই হারিয়ে যায়। এ ব্যাপারে জ্যামাইকার পুলিশ প্রিসিংকটে একটি জিডিও করা হয়েছিল, তার একটি কপি হুমায়ূন আহেমদের মায়ের কাছে হস্তান্তর করি।
তবে বিশ্বজিত সাহার এই ব্যাখ্যা শুনতে নারাজ মেহের আফরোজ শাওন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বজিত সাহাকে এই মামলার আসামি করা হয়নি। উনি কেন বিষয়টি নিয়ে লাফাচ্ছেন আমি জানি না। মামলার কোথাও আনার নাম নেই’। হুমায়ূন আহমেদের মায়ের কাছে ছবিগুলো ফেরত দেয়ায় কারনেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন শাওন। এমন অভিযোগের জবাবে হুমায়ূন পত্মী নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘শুনেন ওনি কি বলেছেন তা জানতে আমি ইন্টারেস্টেট নই। এটা নিয়ে কমেন্ট করারও কিছু নেই। ওনার নাম এই মামলায় কোথাও নাই। উনি হঠাৎ করে লাফাইয়া পরে কেন প্রতিবাদ করছেন? আপনি কখন প্রতিবাদ করবেন, যখন আপনার নামে কেউ কিছু বলবে, যখন আপনাকে আসামি বানানো হবে। কিন্তু আপনাকে আসামিই বানানো হলো না আর আপনি প্রতিবাদ জানাচ্ছেন এটা কেমন কথা। উনি আলোচনায় আসতে চাচ্ছেন। উনাকে নিয় কমেন্ট করে আলোচনার ফোকাস লাইটটা কেন দিব বলেন।’
শাওন বলেন, ‘ওনারা ২০টি ছবি ফেরত দিয়েছেন। আরেকটি ছবির কথা বলেছেন যে হারিয়ে গেছে। তো হারিয়ে যাওয়া ছবিটা যদি এখন ওনার এক্স ওয়াইফ প্রদর্শনী করেন। তারমনে উনি ছবিটা রেখে দিয়েছিলেন। ওনারা তখন বলেছিলেন ২০১২তে ছবিটি হারিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ছবিটা তো এখনো আছে ওনার এক্স ওয়াইফের কাছে। তারমানে ছবিটি হারিয়ে যায়নি, তখন মিথ্যা কথা বলা হয়েছিল। তো ছবিটা আমরা ফেরত চাই। উনি কি বলেছেন সেটাতে আমি ইন্টারেস্টেট না। আমি মামলা করেছি, সেখানে যা বলার আমি বলে দিয়েছি। উনি কি বলেছেন, কোথায় কি প্রতিবাদ পাঠিয়েছেন সেটা আমার দেখারই বিষয় না’।
বিষয়টি নিয়ে কেনো কথার খেলা খেলতে আগ্রহী নয় উল্লেখ করে শাওন বলেন, ‘আমি যখন মামলা করেছি তখন আসামি কি বলেছে সেটা শুনতে তো আমি ইন্টারেস্টেট না। ইন্টারেস্টেট হলে তো আমি উনার সাথে কথার খেলা খেলতাম। আমার হাজবেন্ডের আঁকা ছবি, আমাদের পারিবারিক সম্পদ এবং কেসটা কিন্তু আমি একা করিনি। আমি বাদী কিন্তু কেসটা করেছে হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের সবাই। ওনার ছেলে মেয়েরাও কিন্তু এই কেইসে (মামলায়) আছেন। তো উনি কি বলেছেন সেটা জানতে আমি আগ্রহী না।
হারিয়ে যাওয়া চারটি ছবির তিনটি হুমায়ূন আহমেদ নিজেই জাতীসঙেঘর স্থানী মিশন, তৎকালীন স্থায়ী প্রতিনিধি এবং তৎকালীন কনসাল জেনারেলকে উপহার দিয়েছিলেন। প্রমানসহ কিছু ছবিও পাঠিয়েছেন বিশ্বজিত। ওই ছবিগুলোতে দেখা যায়, আপনিও সেখানে উপস্থিত আছেন। এ বিষয়ে নয়া দিগন্তকে শাওন বলেন, বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের উপস্থিতিতে যে ছবিগুলো দেয়া হয়েছিল সেগুলো আলাদা ছবি।
ওইখানে তো হুমায়ূন আহমেদের সাথে আমিও ছিলাম। প্রদর্শনীর ছবির সাথে উপহার দেয়া ওই ছবিগুলোর কোনো যোগসূত্র নাই। ওনাকে ছবি দেয়া হয়েছিল সেগুলো আলাদা। আর বাংলাদেশ মিশনে ছবি দেয়া হয়েছিল ২৬ মার্চ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে। আর ওনার হাতে ছবি দেয়া হয়েছিল জুন মাসে। মামলার নথিতেও কিন্তু লেখা আছে জুন মাসে ছবিগুলো প্রদর্শনীর জন্য দেয়া হয়েছিল। এখন ২৬ মার্চ যদি আমি বাংলাদেশ মিশনকে ছবি উপহার দেই। ‘আমি’ মানে হুমায়ূন আহমেদ। সেই ছবিগুলো তো আবার ওনার হাতে হ্যান্ড ওভার করার কথা নয়। ওনাকে যে ২৪টা ছবি দেয়া হয়েছিল ওটার সাথে জাতিসংঙ্ঘের ছবির কোন মিল নাই। ওইগুলো আলাদা ছবি। আমার মনে হয় আমার জায়গাটা পরিষ্কার করতে পরেছি।