হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের জমি দখল করে বিশাল বিশাল মার্কেট ও পেট্রোল পাম্প স্থাপন করেছেন ঢাকা-১৩ আসনের সাবেক এমপি সাদেক খান। বিভিন্ন সময়ে প্রভাব খাটিয়ে, ভয় দেখিয়ে তাদের জমি দখল করে মোহাম্মদপুর এলাকায় কৃষি মার্কেট, সাদেক খান মুরগি মার্কেট, সাদেক খান শুঁটকি মার্কেট, সাদেক খান ইট মার্কেট, সাদেক খান বালি মার্কেট, সাদেক খান বস্তি ও পেট্রোল পাম্পসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। অবাধে জমি দখল করে এলাকায় রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। দুদক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
সাদেক খানের নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে দুদকের গোয়েন্দা শাখার গোপন অনুসন্ধানে। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ নামে এবং তাঁর পরিবারের সদস্যসহ আত্মীয়দের নামে সম্পদ গড়েছেন। এসব সম্পদের বৈধ উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সূত্র জানায়, সাদেক খান এবং অন্য এক এমপি ও গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্যের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল রোববার কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিগগির তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অনুসন্ধান শুরু হবে।
সাদেক খান একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের এমপি হয়েছিলেন। এর আগে থেকেই তিনি দখলসহ জবরদস্তিমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন। এমপি হওয়ার পর হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি দখলে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামায় তাঁর নামে ১ কোটি ৪১ লাখ টাকা মূল্যের অকৃষি জমি থাকার বিষয় উল্লেখ করেছেন। যৌথ নামে ১ কোটি ৩১ লাখ টাকার জমির কথা উল্লেখ করেছেন। এতে তিনি ৫০ শতাংশ হারে অংশীদার। তাঁর নামে ১১ লাখ ৯০ হাজার টাকার বাড়ি, ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকার পরিবহন ও অন্যান্য সম্পদ রয়েছে। দুদক সূত্র জানায়, সাদেক খানের স্ত্রীর নামে ৩৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার গাড়ি, ১ কোটি ১২ লাখ টাকা মূল্যের জমি ও অন্যান্য সম্পদ রয়েছে।
নির্বাচনী হলফনামায় নগদ ৫২ কোটি ৬০ লাখ টাকা, জমি, ২টি বহুতল বিশিষ্ট একক বাড়ি, ১টি যৌথ বাড়ির তথ্য রয়েছে, যার মূল্য সাড়ে ৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া তাঁর নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য পাওয়া যায় দুদকের গোয়েন্দা শাখার গোপন অনুসন্ধানে।
সাবেক এমপি গোলাম ফারুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ
পাবনা-৫ আসনের সাবেক এমপি গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্সের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি ও অনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। দুদকের গোয়েন্দা শাখার অনুসন্ধানে তাঁর নামে ৮ কোটি ৬ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৮.৭৬ একর কৃষি জমি রয়েছে, যার মূল্য ৩ কোটি ২ লাখ টাকা। ধানমন্ডিতে ১টি ফ্ল্যাট, মৎস্য খামার, মেসার্স গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স লিমিটেড নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে।
তিনি পর পর ৩ বার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তাঁর সম্পদ ছিল ৪৭ লাখ ৯৮ হাজার টাকার। ২০২৩ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সম্পদ ছিল ৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকার। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ৪ লাখ ৯০ হাজার টাকার শেয়ার, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ৩ কোটি টাকার, বাস-ট্রাক ও মোটরগাড়ি রয়েছে ৭৭ লাখ ৭৮ হাজার টাকার।
অধ্যাপক মুনাজ আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ নুরের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেটা ল্যাব স্থাপনে ৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা খরচ হয়। এই নির্মাণ প্রকল্পের সঠিক প্রাক-মূল্যায়ন হয়নি বলে দুদকের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে প্রমাণ মিলেছে।
samakal