বাংলাদেশ ক্রনিক্যাল ডেস্ক : হিজবুল্লাহর ট্যাঙ্কবিধ্বংসী ক্ষেপনাস্ত্র হামলায় গতকাল ইসরাইলের ৭ সেনা সদস্য ও ১১ জন বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী ও উদ্ধার বিভাগের কর্মকর্তারা। গত ৫ নভেম্বর ইসরাইলি বিমান হামলায় দক্ষিন লেবাননে একটি গাড়ীতে থাকা তিন শিশু ও তাদের দাদী নিহত হবার পর ইসরাইলে হিজবুল্লাহর এটাই সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা। এছাড়া পৃথক এক ঘটনায় ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তের একটি সামরিক চৌকিতে মর্টারের গোলাবর্ষণ করেন হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা। ইসরাইলি সৈন্যরা দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর অবস্থান লক্ষ্য করে পাল্টা গোলা ছুড়েছে। টাইমস অব ইসরাইল ও রয়টার্সের প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এপি’র এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে, ইসরাইলি সেনাবাহিনীর প্রধান মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, সীমান্তবর্র্তী ডোভিভ বসতি এলাকায় কয়েকটি গাড়ীতে থাকা বেসামরিক ইসরাইলি নাগরিকদের লক্ষ্য করে হিজবুল্লাহর এই হামলা ‘খুবই গুরুতর’ ঘটনা। তবে হিজবুল্লাহ বেসামরিক ইসরাইলি নাগরিকেদের টার্গেট করে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, আহতরা সবাই সেনা সদস্য। ইসরাইলের ডানপন্থি সংবাদপত্র হারেৎজ এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিজবুল্লাহর এধরণের হামলার বিরুদ্ধে শক্ত জবাব দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী।
সিরিয়ায় ইরানের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা
যুক্তরাষ্ট্র গতকাল সিরিয়ায় ইরানের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দুটি স্থানে দুবার বিমান হামলা কেেরছে। ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন সেনা ঘাটিতে ইরানপন্থি মিলিশিয়াদের রকেট ও ড্রোন হামলার জবাবে গতকাল এই বিমান হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। সিরিয়ায় কথিত ইরান-সংশ্লিষ্ট স্থাপনায় গত তিন সপ্তাহের মধ্যে এ নিয়ে তৃতীয় দফা হামলা চালাল যুক্তরাষ্ট্র। উল্লেখ্য, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সৈন্যদের ওপর হামলা বেড়ে গেছে। আল জাজিরা ও মিডল ইষ্ট আই এর এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে।
লয়েড অস্টিন এক বিবৃতিতে বলেছেন, সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে আলবু কামাল এবং মায়াদিন নগরীতে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও একটি সেইফ হোমে বিমান হামলা করেছে মার্কিন বাহিনী। ইরানের বিশেষ বাহিনী ইসলামি রেভ্যুলশনারি গার্ড গ্রুপ (আইআরজিসি) এবং ইরান-সংশ্লিষ্ট গ্রুপগুলো এই দুটি স্থাপনা ব্যবহার করে থাকে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন সেনাদের ওপর হামলার জবাবে এই পাল্টা হামলা করা হয়েছে।
এদিকে, গোলান হাইটসে আন্ত:সীমান্ত গোলাগুলির জবাবে ইসরাইলি যুদ্ধবিমান সিরিয়ায় হামলা করেছে। গত শনিবার এই হামলা করা হয় বলে গতকাল ইসরাইলি সেনাবাহিনী টেলিগ্রামে দেয়া এক পোষ্টে জানিয়েছে।
লেবাননে ইসরাইলের বিমান হামলা
লেবাননে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। লেবাননের ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে গতকাল রবিবার দক্ষিণ লেবাননে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এক বিবৃতিতে আইডিএফ বলেছে, লেবাননের পূর্বাঞ্চলে তাদের যুদ্ধ বিমান থেকে বোমা হামলা করা হয়েছে। এ সময় কামান ও ট্যাঙ্কের গোলা বর্ষণও করা হয়। টাইমস অব ইসরাইল ও রয়টার্সের প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে।
ইসরাইলি ড্রোন ধ্বংস করেছে আল কুদস ব্রিগেডস
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন ইসলামিক জিহাদের সামরিক শাখা আল কুদস ব্রিগেডস জানিয়েছে, তাদের যোদ্ধারা গাজা উপত্যকার আকাশে ইসরাইলের একটি চালকবিহীন আকাশযান বা ড্রোন ধ্বংস করেছে। হেরন টিবি ড্রোনটিতে ক্ষেপনাস্ত্রের সরাসরি আঘাতের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে আল কুদস ব্রিগেডস। এদিকে, হামাসের সামরিক শাখা আল কাসাম ব্রিগেডস এর লেবানন শাখা
ইসরাইলের বন্দর নগরী হাইফা ছাড়াও উত্তর ইসরাইলের শলোমি ও নাহারিয়া এলাকায় রকেট হামলা করার দায়িত্ব স্বীকার করেছে। আনাদোলু এজেন্সির এক খবরে একথা বলা হয়েছে।
জিম্মি মুক্তির আলোচনা বাতিল করল হামাস
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বড় চিকিৎসাকেন্দ্র আল-শিফা হাসপাতালে হামলা চালানোয় ইসরাইলের সঙ্গে জিম্মি মুক্তি নিয়ে আলোচনা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে হামাস। ফিলিস্তিনি একজন কর্মকর্তার বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
গত দুদিন ধরে আল-শিফা হাসপাতালের ভেতর হামলা চালাচ্ছে দখলদার ইসরায়েলি সেনারা। তাদের দাবি এ হাসপাতালের নিচে হামাসের কমান্ড সেন্টার আছে। কিন্তু হামাস সবসময় ইসরাইলের এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে এসেছে। ইসরাইলও এ দাবির পক্ষে জোরালো কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।
এর আগে গতকাল ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজায় হামাসের হাতে জিম্মি ইসরাইলিদের মুক্তির ব্যাপারে একটি চুক্তি প্রায় চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এনবিসি নিউজ শো’র ‘মিট দি প্রেস’ অনুষ্ঠানে নেতানিয়াহু এ তথ্য জানান। তবে তিনি এই চুক্তির ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলেননি।
এছাড়া গতকাল সকালে ইসরাইলের তিনটি টিভি চ্যানেলের খবরেও বলা হয়েছিল যে, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস তাদের হাতে থাকা জিম্মিদের মধ্য থেকে ৫০ থেকে ১০০ জনকে মুক্তি দিতে পারে এবং এ ব্যাপারে আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে বলেও জানিয়েছিল গণমাধ্যমগুলো। ইসরাইলি এসব টিভির খবরে আরও জানানো হয়েছিল যে, হামাস জিম্মিদের মুক্তি দিলে ইসরাইল অবৈধভাবে তাদের কারাগারে বন্দি থাকা কিছু ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুকে মুক্তি দেবে।
ইসরাইলের সাথে যুদ্ধের আশঙ্কায় জরুরি পরিকল্পনা লেবাননের
ইসরাইলের সাথে যুদ্ধ শুরু হলে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে সেই বিষয়ে জরুরি পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন লেবাননের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি। গাজায় হামাস-ইসরাইল যুদ্ধের জেরে লেবানন সীমান্তে ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে অব্যাহত ভাবে পাল্টাপাল্টি হামলায় গাজার যুদ্ধ লেবাননে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ইসরাইলের সাথে যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কায় লেবানন সরকার আগামী তিন মাসের জন্য একটি জরুরি পরিকল্পনা তৈরি করেছে। যুদ্ধ শুরু হলে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে সে বিষয়ে এই পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন লেবাননের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি।
গতকাল আলজাজিরার আরবি সংস্করণকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকারে তিনি অবিলম্বে হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ বন্ধে বিশ্ব নেতাদের পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
গাজায় হামলা বন্ধে ইসরাইলকে চাপ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি এরদোয়ানের আহ্বান
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ান বলেছেন, গাজায় ইসরাইলি হামলা বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই ইসরাইলের উপর প্রভাব খাটাতে হবে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরার্ষ্টের উচিত ইসরাইলের ওপর চাপ বাড়ানো। পশ্চিমা বিশ^কে ইসরাইলের ওপর চাপ বাড়াতে হবে। একটি যুদ্ধবিরতিতে উপনীত হওয়া আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র। কারণ ইসরাইলের ওপর তাদের সবচেয়ে বেশি প্রভাব রয়েছে।
এরদোয়ান বলেন, গাজা উপত্যকা যে ফিলিস্তিনেরই ভূমি এটা যুক্তরাষ্ট্রকে মেনে নিতে হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট গাজাকে ফিলিস্তিনের অংশ না ভেবে দখলদার ইসরাইলের ভূমি হিসেবে বিবেচনা করে যদি যুদ্ধে নামেন তাহলে আমরা তার সাথে কোন ভাবেই একমত হতে পারি না। আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে।
হাসপাতাল থেকে জোর করে রোগীদের বের করে দিচ্ছে ইসরাইলি সেনারা
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাই আল-কাইলা বলেছেন, দখলদার ইসরাইলি সেনারা গাজার হাসপাতাল থেকে কোনো রোগীকে অন্যত্র সরাচ্ছে না, বরং তারা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোর করে রোগীদের রাস্তায় বের করে দিচ্ছে। এর মাধ্যমে তাদের কার্যত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে ইসরাইলি সেনারা।
এ ব্যাপারে গতকাল এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, রোগিদের অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়ায় হাসপাতালে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। বয়স্ক ও শিশু কিডনি রোগীরা ডায়ালাইসিস করতে না পেরে মারা যাচ্ছে।
তিনি বলেছেন, আল-রানতিসি এবং তুর্কি হাসপাতালে যে ৩ হাজার ক্যান্সার রোগী ছিলেন তাদের জোর করে বের করে দিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। এখন এসব রোগী নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে রয়েছেন।
অন্যদিকে জ্বালানির অভাবে গাজা উপত্যকার দ্বিতীয় বৃহৎ হাসপাতাল আল-কুদস ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। ছোট্ট এ অঞ্চলটির বৃহৎ হাসপাতাল আল-শিফাও বন্ধ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। বর্তমানে গাজার বড় হাসপাতালগুলো ঘিরে রেখেছে ইসরাইলি সেনারা। আল জাজিরার প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে।
ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বসতি স্থাপনের নিন্দা প্রস্তাবে ১৪৫ দেশের সমর্থন
ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বসতি স্থাপনের নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। এই নিন্দা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে ১৪৫ দেশ। গত ৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার উত্থাপিত প্রস্তাবটি গতকাল পাশ হয়। প্রস্তাবে অধিকৃত সিরিয়ার গোলান মালভূমিতেও ইসরাইলি বসতি স্থাপনের নিন্দা জানানো হয়।
গত ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ শুরুর পর থেকে জাতিসংঘে ইসরাইলের বিরুদ্ধে কয়েকটি নিন্দা প্রস্তাবে ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিলো ভারত। প্রথমবার ইসরাইলের বিপক্ষে উত্থাপিত কোনো প্রস্তাবে ভোট দিলো হিন্দুত্ববাদী দেশটি। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাসহ সাতটি দেশ এই প্রস্তাবের বিরাধিতা করেছে। আর ভোটদানে বিরত ছিল ১৮টি দেশ। আল জাজিরা এ খবর দিয়েছে।