রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) গায়েব হওয়া গ্রাহকের ৩০ হাজার নথি উদ্ধার হচ্ছে এবং এ ঘটনায় কেউ সুবিধা নিতে পারবে না বলে দাবি করেছেন সংস্থার চেয়ারম্যান মো.আনিছুর রহমান মিঞা। তিনি জানান, নথি গায়েবের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে তদন্ত কমিটির কার্যক্রম এখনও চলছে।
সোমবার (২৩ জানুয়ারি) বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ তথ্য জানান।
রাজউকের ৩০ হাজার নথি গায়েবের ঘটনায় অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, এ ঘটনায় কোনও গ্রাহক চাইলে রাজউক অনুমোদিত মূল নকশা ঘষামাজা করে অনিয়ম করতে পারবেন। এতে রাজউকের বাধা দেওয়ার সুযোগও কম থাকবে। কারণ, চ্যালেঞ্জ করার মতো নকশা এখন রাজউকে নেই। আবার ইচ্ছাকৃত কেউ ভবনের উচ্চতা বাড়ালেও রাজউক সেটা ধরতে পারবে না— বলছেন রাজউকের কর্মকর্তারা।
রাজউক চেয়ারম্যান মো.আনিছুর রহমান বলেন, ‘আবেদন নষ্ট না হওয়ায় এটা নিয়ে কেউ সুবিধা নিতে পারেনি। কিন্তু ডিস্টার্ব করতে পেরেছে— এটা আমাদের কারিগরি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। নথিগুলো উদ্ধার হচ্ছে এবং এখন গ্রাহকের কাছ থেকে নতুন আবেদনও নেওয়া হচ্ছে।’
আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, ‘যে নথিগুলো হারিয়ে গেছে, সেগুলো কিন্তু ফিজিক্যাল কোনও নথি নয়। এগুলো ডিজিটাল নথি। ৩০ হাজার নথির মধ্যে ২২ হাজারের মতো আর্কাইভ করা প্ল্যান। যেগুলো নিষ্পত্তি বা অনুমোদিত হয়েছে তার হার্ড কপি আমাদের কাছে সংরক্ষিত আছে।’ তিনি বলেন, ‘ফাইনালি প্ল্যান অনুমোদন করার সময় প্রিন্ট করে সই করা হয়। এগুলো আমাদের কাছে আছে। এটা হারিয়ে গেলেও কপি আছে।’
চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আর যে ৮ হাজার, সেগুলো হলো ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র এবং প্ল্যান অনুমোদনের আবেদন। দুটো আবেদনেরই রিকোভারি (উদ্ধার) হয়ে গেছে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে আমরা আগের মতো করে কাজ শুরু করতে পারবো। আবেদনগুলো একটাও নষ্ট হয় নাই। আবেদনের সঙ্গে যে সংযুক্তি কাগজ দিতে হয়, সেগুলো পাওয়া যায়নি।’
তিনি জানান, আবেদনকারীরা যে কাগজগুলো স্ক্যান করে আপলোড করেছেন, সেগুলো তো আবেদনকারীদের কাছেও আছে। এ বিষয়ে আমরা আবেদনকারীদের নোটিশ পাঠিয়েছি, যাতে তারা এটা আপলোড করেন। অনেকেই এটা আপলোড করছেন। আর এ কাগজগুলো এ সপ্তাহের শেষ দিকে পাওয়া যাবে। অলরেডি সিনক্রোনাইজ করা হচ্ছে।’
রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ‘মানুষের কয়েকদিন ভোগান্তি গেছে। এজন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। এটার জন্য কে দায়ী, তা জানতে বুয়েট তদন্ত করছে, সাইবার পুলিশ ও কম্পিউটার কাউন্সিল তদন্ত করছে। সবাই স্বাধীনভাবে তদন্ত করছে, যাতে এটা অধিকতর গ্রহণযোগ্য হয়। এর জন্য আমাদের লোকজন দায়ী হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর বাইরের লোকজন জড়িত হলে তো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, রাজউক অনলাইনে ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র ও নক্শা অনুমোদন সেবা ‘কনস্ট্রাকশন পারমিট’ শীর্ষক সফটওয়ারের ওয়েব সাইট (cp.rjuk gov.bd) চালু করা হয় ২০১৯ সালের মে মাসে। গত বছরের ৬ ডিসেম্বর সফটওয়ারটির ওয়েব সাইটে লগইন অ্যাকসেস বন্ধ হয়ে যায়। সফটওয়ারটির পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান টেকনোহেভেন কোম্পানি লিমিটেড গত ২১ ডিসেম্বর পুনরায় সফটওয়ারটি চালু করে। কিন্তু সফটওয়ারটি চালু করার পর দেখা যায়, গ্রাহকের আবেদনের সঙ্গে দাখিলকৃত সংযুক্ত কাগজপত্র পাওয়া যাচ্ছে না।
এ ঘটনায় গত বছরের ২২ ডিসেম্বর রাজউকের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট কাজী মোহাম্মদ মাহাবুবুল হক ডাটা ব্রিচিং ও কম্প্রোমাইজের অভিযোগ এনে মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
তিনি জানান, সফটওয়্যারের অ্যাপ্লিকেশনে ডাটা ডিপোজোটরি বাংলাদেশ ডাটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেডের ডাটা সেন্টারে সংরক্ষিত ছিল।