হলি ফ্যামেলিতে আওয়ামী লুটপাট, সেবার মান তলানিতে

৫০০ শয্যার হাসপাতালে রোগী থাকে মাত্র ৩০০, প্রয়োজনের চেয়ে ৩ গুণ বেশি জনবল

 আমার দেশ
২৫ জুন ২০২৩

অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে হলি ফ্যামেলি

অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে হলি ফ্যামেলি

নিজস্ব প্রতিনিধি

দুর্নীতি, লুটপাট ও রাজনীতির কারণে দেশের ঐতিহ্যবাহী হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেবার মান তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে এই হাসপাতালে।

আওয়ামীপন্থী টিআইবি’র গবেষণায় উঠে এসেছে প্রতিষ্ঠানটির স্বগোত্রীয় আওয়ামীদের লুটপাটের এই চিত্র। রবিবার (২৫শে জুন) ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এই তথ্য প্রচার করেছে। ‘হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক টিআইবির গবেষণাটি ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। গবেষণাটি উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষক তাসলিমা আক্তার ও মাহফুজুল হক।

টিআইবির গবেষণায় দেখা গেছে, ৫২৮ শয্যার এ হাসপাতালে রোগী ভর্তি থাকে গড়ে ৩০০ জন। সেবার মান তলানিতে চলে যাওয়ায় রোগীরা এখানে আসতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। শয্যা খালি থাকার কারণে হাসপাতালের আয় কমছে। অন্যদিকে হাসপাতাল পরিচালনার জন্য যে জনবল প্রয়োজন, তার চেয়ে তিন গুণ বেশি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

টিআইবির গবেষণা বলছে, হিসাব করে দেখা গেছে, হাসপাতালটির ২০৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীর কোনো কাজই নেই।

গবেষকেরা বলছেন, এসব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো নিয়মনীতি মানা হয়নি। নিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক সময় ব্যক্তিগত পরিচয়ের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। নিয়োগের সময় এই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা যাচাই করা হয়নি। এর প্রভাব পড়ে সেবার ওপরে। এখানকার রোগীরা সেবার মান নিয়ে অসন্তুষ্ট। গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।

কেনাকাটায় অনিয়ম, পদোন্নতিতে অনিয়ম—এ রকম নানা ধরনের অনিয়মের তথ্য পেয়েছে টিআইবি।

টিআইবি মনে করে, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যানের একচ্ছত্র ক্ষমতা ও আধিপত্যের কারণে ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠান এমন দুর্বল অবস্থায় চলে গেছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, হাসপাতালটি পরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রে সুশাসনের ঘাটতি আছে। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত বেদনাদায়ক, উদ্বেগজনক।

গবেষণায় কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সোসাইটির চেয়ারম্যানের একচ্ছত্র আধিপত্য কমানো, জনবলের একটি কাঠামো তৈরি করা, প্রতিষ্ঠানটিকে রাজনীতিমুক্ত করা, ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা

উল্লেখ্য, ঢাকা, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল ক্যাথলিক মেডিকেল মিশনারিজের মাধ্যমে ১৯৫৩ সালে (১৫ মার্চ) স্থাপিত হয়। ক্যাথলিক মেডিকেল মিশনারিজ ১৯৭১ সালে হাসপাতালটি ডিড অফ গিফট নং ৭৬৯৬/১৯৭১-এর আওতায় বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটির কাছে হস্তান্তর করলে নামকরণ হয় হলি ফ্যামিলি রেড ক্রস হাসপাতাল।

১৯৮৮ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার সোসাইটির নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি করার ফলে হাসপাতালের নাম পরিবর্তিত হয়ে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল হয়। ২০০০ সালে মেডিকেল কলেজে হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে এবং তখন থেকে এটি হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নামে পরিচিত।