হজযাত্রী জাহাজে করে পাঠানোর আলোচনা এবার

সমুদ্রপথে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিতে প্রতিষ্ঠানটি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে। গত ২৯ জানুয়ারি প্রস্তাবটি নিয়ে সচিবালয়ে আন্তমন্ত্রণালয় সভা হয়।

নৌপরিবহনসচিব মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সভায় সমুদ্রপথে হজযাত্রী নিয়ে পক্ষে–বিপক্ষে মতামত আসে। কেউ কেউ জাহাজে করে হজ করতে যাওয়াকে ইতিবাচক বলেছেন। নানামুখী চ্যালেঞ্জের কথাও তুলে ধরেছেন কেউ কেউ। সমুদ্রপথে সৌদি আরব সরকার অনুমতি দেবে কি না, তা-ও নিশ্চিত নয়।

জাহাজে হজ করতে যাওয়ার উদ্যোগটি ভালো। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সৌদি আরব সরকারের কাছে প্রস্তাবটি পাঠানো হবে

ফেরদৌস আলম, অতিরিক্ত সচিব, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সভায় সিদ্ধান্ত হয়, প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। সেখান থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেলে সৌদি সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে। দেশটি রাজি হলে তখন অন্যান্য প্রক্রিয়া শুরু হবে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আশির দশকে বাংলাদেশ থেকে জাহাজে করে সৌদি আরবে যেতেন হজযাত্রীরা। তখন জাহাজে করে যেতে–আসতে সময় লাগত তিন মাস। একপর্যায়ে তা বন্ধ হয়ে যায়।

পবিত্র কাবা শরীফ

পবিত্র কাবা শরীফ 
ফাইল ছবি: এএফপি

মধ্যবিত্ত শ্রেণির কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়ার আশা

কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স বলছে, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কোম্পানি লিমিটেডকে (আইআইএফসি) দিয়ে এ ব্যাপারে সমীক্ষা চালিয়েছে। আইআইএফসি জাহাজ চলাচলকে কার্যকর বলেছে।

কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা আশা করছেন, জাহাজ চালু হলে মধ্যবিত্ত শ্রেণির কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া মিলবে। সরকারের কাছ থেকে অনুমতি পাওয়া গেলে আগামী হজ মৌসুম থেকেই তাঁরা জাহাজ চলাচল শুরু করতে চান।

প্রথমে তাঁরা চার হাজার ধারণক্ষমতার একটি জাহাজ কিনবেন। এতে খরচ পড়বে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা। হজ ছাড়া অন্য সময়ে জাহাজটি পর্যটকদের জন্য চালু থাকবে। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়াসহ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে জাহাজটি চলাচল করবে। সাড়া মিললে পরে আরও বড় জাহাজ বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।

সমুদ্রপথে হজযাত্রী নিতে চাইলে সৌদি আরব সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তারা সম্মত কি না, সেটি জানতে হবে। তারপর অন্য প্রক্রিয়া করতে হবে

আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন, উপসচিব, হজ শাখা,ধর্ম মন্ত্রণালয়

কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, হজযাত্রীদের উড়োজাহাজে করে যাতায়াতে প্রতিবছর খরচ বাড়ছে। এবার একজন হজযাত্রীর উড়োজাহাজে করে গেলে খরচ পড়বে সাড়ে ছয় লাখ টাকার ওপরে। জাহাজে করে গেলে খরচ এক থেকে দেড় লাখ টাকা কম হবে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, একমাত্র সুদানের মানুষ ২০১৮ সাল থেকে সমুদ্রপথে হজযাত্রা করছেন।

পক্ষে–বিপক্ষে মত

২৯ জানুয়ারি আন্তমন্ত্রণালয় সভায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে জাহাজ চলাচলের পক্ষে মত দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, সমুদ্রপথে জাহাজ চললে কম খরচে হজ করা যাবে। এবার বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে খরচ পড়বে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফেরদৌস আলম প্রথম আলোকে বলেন, জাহাজে করে হজ করতে যাওয়ার উদ্যোগটি ভালো। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সৌদি আরব সরকারের কাছে প্রস্তাবটি পাঠানো হবে।

তবে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, জাহাজে হজযাত্রী পরিবহন করতে হলে সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি সংশোধন করতে হবে। তা ছাড়া জলপথে যাওয়া হজযাত্রীদের ইমিগ্রেশন কোথায় হবে, সেটাও আলোচনার বিষয়।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ শাখার উপসচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, হজে যাওয়ার ক্ষেত্রে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিবছর যে চুক্তি হয়, তাতে উড়োজাহাজের কথা উল্লেখ থাকে, জাহাজের কথা বলা থাকে না। তা ছাড়া সমুদ্রপথে সময় লাগবে বেশি। কেউ অসুস্থ হয়ে গেলে তার দায়িত্ব কে নেবে? তিনি বলেন, ‘এসব সমস্যার কথা আমরা জানিয়েছি। সমুদ্রপথে হজযাত্রী নিতে চাইলে সৌদি আরব সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তারা সম্মত কি না, সেটি জানতে হবে। তারপর অন্য প্রক্রিয়া করতে হবে।’