- ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৪:৫৬
বিশ্বকাপ দল ঘোষণা হয়েছে যদিও বেশ কয়েক দিন আগে, কিন্তু তার আমেজ এখনো রয়ে গেছে দেশজুড়ে। কোনো আসরকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড দল ঘোষণা করবে, আর সবাই চুপ থাকবে; এমনটা কখনো হতে পারে! প্রতিটি সিরিজের আগেই দল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সরব হবে, নীরব ক্রিকেটপ্রেমীরা ক্ষুদ্ধ হবে এ যেন এক অমোঘ নীতি।
যাহোক, নানা নাটকীয়তা আর সৃজনশীলতা ধরে রেখে গত ১৪ সেপ্টেম্বর আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ১৫ সদস্যের সেই দলকে ঘিরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় জনমনে। বিশেষ করে গত বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহর বাদ পড়ে যাওয়া, টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ে দেশের সেরা বোলার হয়েও শেখ মেহেদীর দল না পাওয়া আর নাজমুল হাসান শান্তের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে ক্রিকেটাঙ্গনে।
যদিও মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে ভক্ত-সমর্থকদের মাঝে। কেউ যখন অসন্তোষে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন, তখন কেউ বলছেন ভবিষ্যত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, দল গঠন ঠিকই আছে। দল গঠন নিয়ে যখন এমনই টালমাটাল ক্রিকেটপাড়া, তখন সেই আগুনে যেন ঘি ঢাললেন ক্রিকেটারদের জীবনসঙ্গিনীরা। তাদের বেপরোয়া মন্তব্যে, দেশের ক্রিকেটের বিদঘুটে প্রতিচ্ছবিই যেন ফুটে উঠে।
মাহমুদউল্লাহর বাদ পড়া প্রসঙ্গে ফেসবুকের নীল দুনিয়ায় ক্ষোভের কালো রঙে তার স্ত্রী মিষ্টি লিখেন, ‘এই দেশে যোগ্য লোকের যোগ্যতার মূল্যায়ন হয় না, হবেও না’। বিপরীতে বড় বোনের মন্তব্যের সমর্থনে বিদ্রুপাত্মক বিস্ফোরক মন্তব্য করে বসেন মুশফিকের স্ত্রী মণ্ডি। তিনি লিখেন, ‘আরে নাহ, তাদের দলে অনেক হার্ডহিটার আছে। বলে বলে ছয় আর ছয় হবে।’
মাহমুদউল্লাহ-মুশফিক পত্নী যখন স্বামীদের পক্ষে এমন করে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে, শেখ মেহেদী তখন নিজেই গর্জে উঠলেন নিজের পক্ষে। প্রথমে বিভিন্ন ক্রিকেট সাইটের লিংক এনে আপলোড দেন নিজের পেইজে, যেখানে বিদেশের মাটিতে তার পরিসংখ্যান আর বর্তমান র্যাংকিং তুলে ধরা হয়েছে। পরে সংবাদমাধ্যমকেও বলেন, নতুন কোচ তাকে বুঝতে ভুল করেছে। যদিও কোচ শ্রীরাম তার ব্যাখ্যায় বলেছেন, মেহেদীকে সব দলই নিজের করে চাইবে, শুধু কন্ডিশন বিবেচনায় বাদ দিতে হচ্ছে।
সীমানার এপারে যখন দলে জায়গা পাওয়া নিয়ে এমন অবস্থা, তখন ওপারে বুকে পাথর বেঁধে দেশকে সমর্থন দিচ্ছেন বিশ্বকাপে দল না পাওয়া এক তারকা। ৩৮ টি-টোয়েন্টি খেলা শেখ মেহেদী না পারলেও, মাত্র ১৬ টি-টোয়েন্টি খেলেও পেরেছেন স্যাঞ্জু স্যামসন। তিনি লিখেন,
‘লোকেশ রাহুলের জায়গায় স্যাঞ্জু স্যামসনের সুযোগ পাওয়া উচিৎ ছিল, পান্থের জায়গায় স্যাঞ্জুর সুযোগ পাওয়া উচিৎ ছিল, এমন অনেক কিছুই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখছি। কিন্তু আমার চিন্তাভাবনা পরিষ্কার। এই দু’জন আমার দেশের হয়ে খেলছে। এখন যদি আমি আমার সতীর্থদের প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নামি, তবে আমার দেশকেই ডোবানো হবে।’
এখন বলতেই পারেন, ভারতীয়রা তো ক্রিকেটেই খায়, ক্রিকেটেই ঘুমায়। তারা এমন পেশাদার হবে, এমনটা স্বাভাবিকই বটে। তাহলে কি বলবেন হাশমাতুল্লাহ শাহিদির জবাবে? এই আফগান তারকা এক বার্তায় লিখেন,
‘প্রিয় দেশবাসী, আপনারা সবাই জানেন, আমি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে নির্বাচিত নই। প্রত্যেক পেশাদার খেলোয়াড়ের মতো আমিও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সাহসী জাতির প্রতিনিধিত্ব করার জন্য আমাকে যোগ্য বলে গণ্য করা হয়নি। তবে আমার সমর্থন, উৎসাহ ও দোয়া সবসময় আমার দলের সাথে থাকবে, কারণ এই খেলোয়াড়রা আমার প্রিয় দেশ আফগানিস্তান ও একটি শক্তিশালী জাতির প্রতিনিধিত্ব করে। নায়করা তোমাদের সফলতা কামনা কর ‘
তবে এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে, ওরা পারলে আমরা কেন পারি না? ওরা বিদ্বেষ ভুলে যদি দেশকে সমর্থন দিতে পারে, আমরা কেন হেরে যাই স্বার্থের কাছে! অভিজ্ঞ ইমরুল কায়েসও কিছু দিন আগে দলের হারে বিদ্রুপমূলক ইমোজি ব্যবহার করে সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন সর্বমহলে। সেই ঘটনার রেশ না কাঁটতেই মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকের স্ত্রীর আর শেখ মেহেদীর এমন মন্তব্য দেশের ক্রিকেটের জন্য অশনিসঙ্কেতই বটে।