স্বৈরশাসক হাসিনার পলায়ন : মাতোয়ারা বাংলাদেশ , দিল্লিতে পালিয়েছেন : অন্তর্বর্তী সরকার হবে

বাংলাদেশ ক্রনিক্যাল রিপোর্ট

১.
উৎসবে মাতোয়ারা বাংলাদেশ। স্বৈরশাসনের জগদ্দল পাথর ভাঙার আনন্দে ভাসছে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া। কেউ হাসছেন; কেউ খুশিতে আত্মহারা হয়ে কাঁদছেন। আওয়ামী সরকারের অবর্ণনীয় নির্যাতন-নিপীড়নে পিষ্ঠ মানুষের স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে বাংলাদেশের আকাশ।

সরকার পতনের একদফা দাবিতে ছাত্র- জনতার ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল দেশ। রোববার শতাধিক মানুষের প্রাণহানির পর সোমবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ছিল ‘মার্চ টু ঢাকা’। সরকার পতনের চূড়ান্ত এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীর মোড়ে মোড়ে ছিল পুলিশ ও সেনাসদস্যদের সতর্ক অবস্থান। কারফিউ বলবৎ ছিল। কিন্তু সব বাধা উপেক্ষা করে মাঠে নেমে আসে ছাত্র-জনতা। সোমবার দুপুরে কোটি মানুষের পদভারে মুখর হয়ে ওঠে ঢাকা।

কথা ছিল, রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে গণমিছিল নিয়ে গণভবন ঘেরাও করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। সকাল ১১টার দিকে সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রবেশপথ হয়ে ঢাকায় ঢুকতে থাকে জনতা। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ঢাকা হয়ে ওঠে কোটি মানুষের মিছিলের শহর। এরমধ্যে খবর আসে, জাতির উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। মানুষ আঁচ করতে পারেন, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন শেখ হাসিনা। এ-সময় ঢাকার অনেক স্থানে সেনাসদস্যদের সঙ্গে ছাত্র-জনতার কোলাকুলির দৃশ্যও চোখে পড়ে। এর মধ্যে কঠোর নিরাপত্তা বলয় নিমিষে ভেঙে গণভবনে ঢুকে পড়েন হাজার হাজার মানুষ। সেখানে দুহাত উঁচিতে, স্লোগান দিয়ে আনন্দ-উল্লাস করেন তারা। অনেকে শেখ হাসিনার বিচার চেয়ে স্লোগান দেন। ভাঙচুরও চলে।

যেভাবে পালালেন হাসিনা 

বেলা যখন দেড়টা, তখন দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। বঙ্গভবন থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টার তাকে নিয়ে যাত্রা করে। এ-সময় তার সঙ্গে ছোট বোন শেখ রেহানাও ছিলেন। সূত্র জানায়, তারা হেলিকপ্টারে করে ভারতের উদ্দেশে রওনা দেন। বার্তা সংস্থা এএফপির ব্যুরো চিফ শফিকুল আলম বঙ্গভবনের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার বিবরন তার ফেসবুক পেজে তুলে ধরেছেন। বঙ্গভবনের এই নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, দেড়টার দিকে শেখ হাসিনাকে জানানো হয় তার হাতে সময় খুব কম, তাকে বঙ্গভবন ত্যাগ করতে হবে। এ সময় তিনি জাতির উদ্দেশ্য একটি ভাষন দেয়ার ইচ্ছার কথা জানান। কিন্তু কর্মকর্তারা জানান লাখ লাখ লোক বঙ্গভবনের পাশে অবস্থান করছে, তার হাতে সময় নেই। এরপর তাকে মোটর গাড়িতে করে বঙ্গভবনের পাশে পরিকল্পনা কমিশন অফিসে আনা হয়। সেখান থেকে রাস্তার অপরপাশে পুরানো তেজগাঁওয়ে পুরানো বিমান বন্দরে এয়ারফোর্সের একটি হেলিকপ্টারে করে উড়াল দেন। শেখ হাসিনা গনভবন ত্যাগ করার আগে একটি ভাষণ রেকর্ড করে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সে সুযোগ পাননি। প্রাথমিকভাবে শেখ হাসিনার ভারতের আগরতলায় যাওয়ার কথা রয়েছে বলে বিবিসি জানতে পেরেছে। তবে কোনো কোনো গনমাধ্যমে জানানো হয়, তাকে পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত দিয়ে ভারতে গেছেন।

২.
ভারতের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা বলেছে, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারটি ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার উদ্দেশে উড়িয়ে নিয়ে যান এয়ার কমোডর আব্বাস। তিনি ১০১ স্কোয়াড্রনের সদস্য। এরপর তিনি দিল্লি যান; তার শেষ গন্তব্য লন্ডন। একটি সূত্রের বরাতে দৈনিকটি লিখেছে, তার আগে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর তরফে প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে সময় বেঁধে দেওয়া হয় পদত্যাগ করার জন্য। তাকে ৪৫ মিনিট সময় দেওয়া হয় বলে জানায় ওই সূত্র। তবে অন্য সূত্রের বরাতে আনন্দবাজার বলেছে, পুরো বিষয়টি হয়েছে সেনাবাহিনী এবং দিল্লির সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে। তারপরই হাসিনা ইস্তফা দিয়েছেন।

একটি সূত্র আনন্দবাজারকে বলেছে, বিমান পাঠানোর জন্য হাসিনা নয়াদিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু তাকে উদ্ধারের জন্য ভারত থেকে বাংলাদেশে বিমান পাঠানো হবে না বলে জানিয়ে দেয় নয়াদিল্লি। ভারতের তরফে জানানো হয়, বাংলাদেশের আকাশসীমায় ভারত কোনো বিমান পাঠাতে পারবে না। তাকে জানানো হয়, আগে ভারতের কোথাও পৌঁছাতে হবে; সেখান থেকে তাকে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। কপ্টারে ঢাকা থেকে দিল্লি পর্যন্ত যাওয়া যায় না। এ-ক্ষেত্রে তার নিকটবর্তী অবতরণ স্থান ছিল ত্রিপুরার আগরতলা বিমানবন্দর।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শেখ হাসিনার ক্ষমতা ত্যাগের বিষয়টি ধীরে ধীরে পরিষ্কার হতে থাকে। সরকারি চাটুকারিতার বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে সংবাদমাধ্যমগুলো। সারাদেশের মানুষের চোখ ছিল সংবাদ চ্যানেল এবং নিউজ পোর্টালগুলোর আপডেটের দিকে। ছাত্র-জনতার মিছিলে আচ্ছন্ন ঢাকাকে সারাদেশের মানুষ অনেক দিন পর মনভরে দেখার সুযোগ পেয়েছে। সরকারি চাপের মধ্যেও যারা নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেছে, সেসব সংবাদমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানাতে থাকে ছাত্র-জনতা। যেসব সংবাদমাধ্যম বাছ-বিচারহীনভাবে সরকারি দলের পক্ষপাতিত্ব করেছে, তারাও দীর্ঘদিনের অনুশীলন ভেঙে ছাত্র-জনতার উল্লাস সরাসরি সম্প্রচার করে।

সেনা প্রধানের বক্তব্য 

৩.
বেলা ৪টার দিকে জাতির উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন সেনাপ্রধান। শেখ হাসিনার পদত্যাগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এখন রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল চলছে। একটি অন্তবর্তী সরকার গঠন করা হবে। সব হত্যার বিচার করা হবে। সেনাবাহিনীর ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, আমরা রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। সবাই শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখবেন। আপনারা আমার ওপর আস্থা রাখবেন, আমরা একসঙ্গে কাজ করব। মারামারি-সংঘাত করে আমরা কিছু পাব না। সংঘাত থেকে বিরত থাকতে হবে। সবাই মিলে সুন্দর দেশ গড়ব। কোন্ কোন্ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে- সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, জামায়াতের আমির, বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা, জাতীয় পার্টির নেতারা, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও জোনায়েদ সাকি বৈঠকে ছিলেন। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। আওয়ামী লীগের কেউ বৈঠকে ছিলেন কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, না, আওয়ামী লীগের কেউ ছিলেন না। তিনি শিগগির ছাত্র ও শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বলে জানান। জেনারেল ওয়াকার জানান, আমরা এখন বঙ্গবভনে যাব। সেখানে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হবে। দুই-একদিনের মধ্যে একটি অন্তর্বর্তী সরকার হবে বলেও জানান তিনি।

দেশে জরুরি অবস্থা জারি হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, অবস্থা স্বাভাবিক হলে কারফিউ তুলে নেওয়া হবে। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন নিয়ে বঙ্গভবনে শীর্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধানের আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, জামায়াতে ইসলামির আমির ডা. শফিকুর রহমান, হেফাজত নেতা আল্লামা মামুনুল হক, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ক্ষোভের বহি:প্রকাশ 

৪.
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের সময় রাজধানীতে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারীরা বিভিন্নভাবে তাদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটান। গনভবন , সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে বিক্ষুদ্ধ হাজার হাজার মানুষ। সেখান থেকে অনেককে জিনিসপত্র নিয়ে যেতে দেখা যায়। রাজধানী বিভিন্ন স্থানে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার ছবি ও মুর্তি ভেঙ্গে ফেলা হয়। শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার খবরে মোদি ও হাসিনার সর্ম্পক নিয়ে নানা ধরনের শ্লোগান দেয় সাধারন মানুষ।

রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার কার্যালয়ে আগুন দেন তারা। আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলা কার্যালয়েও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বিক্ষুব্ধ জনতা রাজধানীর ধানমন্ডিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় হামলা ও ভাঙচুর করেন। ফটক ভেঙে হাজারো আন্দোলনকারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় ঢুকে পড়েন। বাড়ির ভেতর থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। ভেতরে ব্যাপক ভাঙচুর হয়েছে। এরপর সংসদ ভবনে ঢুকে ভাংচুর চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। ধানম-ির সুধাসদনেও আগুন দেওয়া হয়।

হেয়ার রোডে প্রধান বিচারপতির বাসভবনেও ভাঙচুর চালান বিক্ষোভকারীরা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের কার্যালয়গুলোতে হামলা চলছিল। ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করা ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিকলীগের নেতাকর্মীদের খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন আন্দোলনকারীরা। সরকার পতনের পর অনেক নেতাকর্মী গা ঢাকা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। কয়েকদিন আগে থেকেই দেশ ছেড়ে পালাচ্ছিলেন সিনিয়র নেতারা। সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম ৬ ঘণ্টার জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

বিদায়ের আগে গনহত্যা 

৫.
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, দেশে আজকে যা ঘটল, এটাই হওয়ার কথা ছিল। গণ-অভ্যুত্থান কখনও ঠেকানো যায় না। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন সহজেই সমাধান করা যেত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জেদের কারণে এত মানুষ মারা গেল। নির্বাচন বিশ্লেষক ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তা এম সাখাওয়াত হোসেন সোমবার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, গণমাধ্যমে প্রাণহানির যে চিত্র উঠে এসেছে, বাস্তবে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি। আরও কত মরদেহ কোথায় পড়ে আছে, কত গণকবর হয়েছে, কতগুলো নিরীহ মানুষের প্রাণ ঝরেছে! হাসিনা তো পালিয়ে গেলেন। এখন এর জবাব দেবে কে?

তিনি বলেন, ১৫ বছর মানুষ ভোট দিতে পারেনি। দিনের পর দিন ভোট চুরি হয়েছে। এখন দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। শেখ হাসিনার বোঝা উচিত ছিল, তিনি ও তার দল কতটা অজনপ্রিয়। সাখাওয়াত বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের ওপর হাজার হাজার গুলি ছোড়া হয়েছে। হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে। এর আগে আমরা সবাই এইচ এম এরশাদকে স্বৈরাচার বলেছি। তখন মাত্র ছয়জন মানুষ মারা যাওয়ায় তাকে স্বৈরশাসক বলছি। কিন্তু গত ১৫ বছরে কত মানুষের প্রাণহানি হয়েছে!

২০০৯ সালে পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা মারা গেছেন। এখন এর জবাব দেবে কে? ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত বলেন, যাকে জাতির পিতা বলা হয়, তার পরিবারের সদস্যদের এত করুণ পরিণতি কেন হবে? তার এমন পরিণতি আমাদের দেখতে হলো। এসব হয়েছে, তার দম্ভ ও অহমিকার কারণে। এই যে গণভবন লুটপাট হচ্ছে, ভাঙচুর হচ্ছে- এজন্য জনগণকে দোষ দেবেন কীভাবে? তিনি বলেন, এরশাদের চেয়ে শেখ হাসিনা ১০০ গুণ বেশি খারাপভাবে বিদায় নিয়েছেন। এরশাদ পালিয়ে যাননি। হাসিনা পালিয়ে গেছেন। তিনি পালিয়ে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছেন। তার হিংসা, দম্ভ, অহংকার দলটাকে ধ্বংস করল।

রোববার ছিল আন্দোলনের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী দিন। সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচির প্রথম দিনে সরকার-সমর্থক নেতা-কর্মী ও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে রাজধানী ঢাকাসহ ২০টি জেলা-মহানগরে অন্তত ১০২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলায় পুলিশের ১৩ সদস্য এবং কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জে হাইওয়ে থানার এক পুলিশ সদস্য নিহত হন। এদিন দেশের অন্তত ৫০টি জেলায় সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটে। বেশিরভাগ জায়গায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে মূলত সংঘর্ষে জড়ান আওয়ামী লীগ ও দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন ঘিরে রাজধানী ছিল সারা দেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন। দিনভর ঢাকা ছিল বিক্ষোভ আর সংঘর্ষের নগরী। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা শহরের চিত্রও ছিল অনেকটা একই। নিহতদের মধ্যে বিস্তারিত নাম-পরিচয় জানা গেছে ৪৩ জনের। তাদের মধ্যে আছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ জন, পুলিশের ১৪ জন, শিক্ষার্থী ৯ জন, সাংবাদিক ১ জন ও বিএনপির ১ জন।

৬.
শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি ঘিরে রোববার দেশের অন্তত ৩৮টি জেলায় জনপ্রতিনিধিদের বাসাবাড়ি, আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও থানাসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে কমপক্ষে ১৩টি স্থানে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতাদের বাসভবন ও নিজস্ব কার্যালয় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। চাঁদপুর শহরে সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনির বাসায়, বরিশালে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বাসা, দিনাজপুরে জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিমের বাসভবনে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁওসহ ১৫টি থানা, ১টি রেঞ্জ কার্যালয়, ৪টি জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং ২টি পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালানো হয়েছে বলে পুলিশ সদর দপ্তরের বার্তায় জানানো হয়েছে। এসব ঘটনায় পুলিশের তিন শতাধিক সদস্য আহত হয়েছেন। অপর দিকে বিজিবি সদর দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, গতকালের সংঘাত-সংঘর্ষে বিজিবির অন্তত ৫৭ সদস্য আহত হয়েছেন।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ১ জুলাই শিক্ষার্থীদের লাগাতার এই আন্দোলন শুরু হয়। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। এর পরদিন থেকে এই আন্দোলন ঘিরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, সংঘর্ষ, সহিংসতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। মাঝে কয়েকদিন পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত ছিল। একপর্যায়ে গত শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতার এক জমায়েত থেকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। এই দাবিতে রোববার শুরু হয় তাদের সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন। ১ জুলাই থেকে এ-পর্যন্ত ৪ শতাধিক মানুষের প্রাণহানির খবর দিয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।