স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নয়নে গত কয়েক দশকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে সরকার। হাসপাতাল অবকাঠামো ও শয্যা সংখ্যা সম্প্রসারণের পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে চিকিৎসকের সংখ্যা। সরকারের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবায় বিপুল বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে এসেছে ব্যক্তি খাত। এর ধারাবাহিকতায় দেশের গ্রামীণ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যেও এখন প্রাতিষ্ঠানিক চিকিৎসা গ্রহণের হার বেড়েছে। বেড়েছে স্বাস্থ্যসেবা খাতে মাথাপিছু ব্যয়ের পরিমাণও। ১৯৯৭ সালেও দেশে স্বাস্থ্যসেবায় বার্ষিক মাথাপিছু ব্যয় ছিল ৯ ডলার। সেখান থেকে বেড়ে এখন তা ৫৪ ডলারের সমপরিমাণে উঠে দাঁড়িয়েছে বলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
দেশের স্বাস্থ্য সেবার আওতা ও পরিধি সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে এর মান ও সেবা নিয়ে রোগীদের অভিযোগের মাত্রাও এখন বেড়েছে। রোগীদের আস্থার সংকটে ভুগছে দেশের স্বাস্থ্য খাত। প্রতি বছর চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাড়ি দিচ্ছেন বিপুলসংখ্যক রোগী। বহু গুণ বেশি অর্থ ব্যয় করেই সেখান থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে সাত লাখ বাংলাদেশী। প্রতি বছর এসব রোগী বিদেশে ব্যয় করছেন ৩৫০ কোটি ডলার। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীদের বার্ষিক মাথাপিছু গড় ব্যয় এখন ৫ হাজার ডলার।
দেশের বাইরে চিকিৎসা গ্রহণে এ বিপুল পরিমাণ ব্যয় এখানকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ওপর আস্থার সংকটকেই সামনে নিয়ে আসছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, দেশে বিগত বছরগুলোয় সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো বেড়েছে। চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি সেবার পরিধিও প্রসারিত হয়েছে। কিন্তু সে অনুপাতে আস্থা তৈরি হয়নি। আবার দেশের সব অঞ্চলে সমানভাবে বিশেষায়িত সেবা পৌঁছেনি। নির্ভুল রোগ নিরীক্ষা, বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগও দীর্ঘদিনের। এসব সংকটের কারণে রোগীদের বড় একটি অংশ চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন বিদেশে। সাধারণ মানুষ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গিয়ে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেলে বেসরকারি হাসপাতালে যায়। যখন সেখানেও প্রয়োজনীয় সেবা মেলে না, তখন যাদের সক্ষমতা রয়েছে তারা বিদেশে চলে যান চিকিৎসার জন্য।
প্রতি বছর দেশের কী পরিমাণ নাগরিক চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে এর কোনো পরিসংখ্যান নেই। বিডার হিসাব অনুযায়ী এ সংখ্যা সাত লাখ। এক্ষেত্রে বিদেশগামী রোগীদের চিকিৎসা সেবার গন্তব্য হিসেবে শীর্ষে থাকা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর। এছাড়া চীন, জাপান, কোরিয়া, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েও অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়া রোগীদের সর্বোচ্চসংখ্যক হলেন ক্যান্সারের রোগী, যা মোট বিদেশগামী রোগীর ২১ শতাংশ। এরপর ১৮ শতাংশ যাচ্ছেন হৃদরোগের চিকিৎসা নিতে। এছাড়া বাকিরা যাচ্ছেন প্রজনন জটিলতা, অর্থোপেডিক চিকিৎসা, গ্যাস্ট্রোঅ্যান্ট্রোলজি, লিভার, কিডনি, চোখ, কান ও স্নায়বিক চিকিৎসার জন্য।
রোগীর চাপ বেশি থাকায় ভারত, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের কয়েকটি হাসপাতাল ঢাকায় তাদের দপ্তরও খুলেছে। নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে এসব অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের মাধ্যমে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া রোগীদের সিংহভাগই এদেশে বিভিন্ন হাসপাতাল ও চিকিৎসকের কাছে আগে চিকিৎসা নিয়েছেন। কেউ কেউ কয়েক বছর ধরে চিকিৎসা নিয়েও কোনো নিরাময় পাননি। কোনো কোনো রোগীর অবস্থা আবার সংকটাপন্ন। কেউ সঠিক চিকিৎসার অভাবের কথা বলেন আবার কেউ আস্থার অভাবের কথা বলেন। বিশেষ করে ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনি, স্নায়বিক, চক্ষু, আলসারসহ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগের চিকিৎসার জন্য রোগীরা তাদের কাছে আসছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘শুরুতেই মানুষ দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য যায় না। যখন দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় সেবা পায় না, আবার প্রতারিত হয়; তখনই দেশের বাইরে যায়। দেশে চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভরসার ঘাটতি দীর্ঘদিনের। একই রোগের জন্য একেক চিকিৎসকের কাছে গেলে ব্যবস্থাপত্রের ভিন্নতা থাকে। কেউ নতুন চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি আগের চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র দেখতে চান না। অপ্রয়োজনীয় ওষুধও দেয়া হয়। রোগের নিরীক্ষা বারবার করতে হয়। আবার বিদেশের বহু হাসপাতালের অফিস ও লোকবল বাংলাদেশে রয়েছে, দালাল রয়েছে। তারাও রোগীদের প্রভাবিত করে নিয়ে যাচ্ছে। বিদেশে চিকিৎসার জন্য মোটা অংকের ডলার দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। বিদেশে চিকিৎসার জন্য যে টাকা চলে যাচ্ছে তা দেশে খরচ করতে পারলে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা আরো ভালো হতো। রাষ্ট্র প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলে মানুষ বিদেশে যাবে না।’
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা পিরোজপুরের বেসরকারি চাকরিজীবী আব্দুল আলীমের (ছদ্মনাম) এক ছেলে শিশুর জন্ম হয় তিন মাস আগে। হৃদযন্ত্রে ব্লক নিয়ে শিশুটির জন্ম হয়। এরপর বিভাগীয় বিশেষায়িত হাসপাতাল শেষে রাজধানীর সর্বোচ্চ হাসপাতালে ছেলেকে নিয়ে আসেন আলীম। অস্ত্রোপচারের বিকল্প নেই বলে জানান চিকিৎসকরা। দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের ওপর আস্থা না থাকায় ছেলেকে বিদেশে চিকিৎসা করানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
সিলেটে বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা ইয়াসির আরাফাত (ছদ্মনাম) চলতি বছরের মাঝামাঝিতে জানতে পারেন তার দুটি কিডনিই বিকল হয়েছে। প্রতিস্থাপনের বিকল্প নেই। কিন্তু কিডনি জোগাড় হয়নি তার। দেশে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিশেষায়িত হাসপাতালের চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। কিডনি প্রতিস্থাপনের বিকল্প নেই বলে জানান তারা। এরপর বিদেশে যান আরাফাত। বর্তমানে সেখানকার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ ও জীবনাচার অনুসরণ করছেন তিনি। যতদিন তিনি কিডনি প্রতিস্থাপনের সুযোগ না পাচ্ছেন, ততদিন তিনি এ ব্যবস্থাপত্র মেনেই চলতে পারবেন বলে ধারণা তার।
চলতি বছরের মে মাসে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক জার্নাল ফ্রন্টিয়ার্সে ‘ডিটারমিনেন্টস অব বাংলাদেশী পেশেন্টস ডিসিশন মেকিং প্রসেস অ্যান্ড স্যাটিসফেকশন টুওয়ার্ড মেডিকেল ট্যুরিজম ইন ইন্ডিয়া’ শীর্ষক এক গবেষণাপত্র প্রকাশ হয়। এতে বলা হয়, ভারতের হাসপাতালগুলো বছরে বাংলাদেশী রোগী পায় প্রায় সাড়ে চার লাখ। তবে মেডিকেল ভিসা ছাড়াও অন্যান্য ভিসা নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোর তথ্যও রয়েছে।
ওই গবেষণায়ও রোগীদের বিদেশমুখিতার পেছনে বাড়তি চিকিৎসা ব্যয়, দীর্ঘসূত্রতা, চিকিৎসার সহজলভ্যতার অভাবসহ বিভিন্ন কারণকে দায়ী করা হয়।
গত কয়েক দশকে স্বাস্থ্যসেবা খাতে সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগও ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, নব্বইয়ের দশকে দেশে বেসরকারি হাসপাতাল ছিল ৩৮৪টি। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ গুণেরও বেশিতে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট হাসপাতাল, জেলা বা জেনারেল হাসপাতাল, উপজেলা হাসপাতালসহ (ইউনিয়ন পর্যায় বাদে) বিভিন্ন পর্যায়ের হাসপাতাল রয়েছে ৬৪০টি। এর বাইরেও সরকারের বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অন্যদিকে দেশে নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যাই এখন ৭ হাজার ৮৫৪। দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট শয্যা সংখ্যা ১ লাখ ৭৯ হাজারের বেশি। এর মধ্যে বেসরকারিতেই রয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার শয্যা। আর বেসরকারি রোগ নিরীক্ষা কেন্দ্র আছে প্রায় ১০ হাজার। ব্লাড ব্যাংক আছে ১৮০টি।
হাসপাতালে সংখ্যা ও শয্যা বৃদ্ধিকে স্বাস্থ্যসেবার পরিসর ও মান বৃদ্ধির মুখ্য নির্ণয়ক মনে করা যথাযথ নয় বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. আবু জামিল ফয়সাল। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা তৈরি হবে না, ততদিন চিকিৎসার জন্য মানুষের বিদেশমুখিতা ঠেকানো যাবে না। আস্থা সৃষ্টির জায়গায় বড় প্রভাবক হলো চিকিৎসক। আমাদের দেশে রোগীদের প্রতি চিকিৎসকদের মনোযোগ নিয়ে অনেক বিরূপ প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এখানে চিকিৎসকদের সতর্ক ও সেবাদানের পরিপূর্ণ মানসিকতা থাকতে হবে। চিকিৎসকরা ব্যস্ত। তবে মনে রাখতে হবে এ ব্যস্ততা হতে হবে রোগীকেন্দ্রিক। বাংলাদেশে বেশি করে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ দেয়া হয়। ওষুধের অপপ্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। ওষুধ প্রস্তুতকারক ও বাজারজাতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হলো দেশে এখনো সব বিশেষায়িত চিকিৎসার পরিপূর্ণ সুবিধা গড়ে ওঠেনি।’
দেশে রোগী ও চিকিৎসকের মধ্যকার সম্পর্কও বিদেশমুখিতার অন্যতম কারণ বলে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বৈজ্ঞানিক জার্নাল প্রকাশনা সংস্থা উইলিতে প্রকাশিত একটি গবেষণার তথ্য বলছে, প্রায় তিন-চতুর্থাংশ রোগী চিকিৎসকদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন। রোগীরা চিকিৎসা প্রদানে চিকিৎসকের আন্তরিকতার ঘাটতি, পর্যাপ্ত সময় না দেয়া, মানসিক বিষয় বিবেচনা না করা, রোগীর নিজস্ব মতামত ও রোগের বিষয়ে বিস্তারিত না শোনা, ব্যবস্থাপত্র বুঝিয়ে না দেয়া, সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করে বৈষম্যমূলক আচরণ করার মতো বিষয়গুলোর কারণে রোগীদের চিকিৎসক ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার ওপরে আস্থার সংকট দেখা গেছে।
জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, দেশে সরকারি হাসপাতালে অবহেলা ও সংকট বেশি। আর বেসরকারি হাসপাতালগুলোর বাণিজ্যিক মনোভাবের কারণে সেবা নিয়ে তাদের মধ্যে সতর্কতা কম। ফলে আর্থিকভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের বড় একটি অংশ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ওপরে ভরসা করছেন না। বহু রোগী বেসরকারিতে সর্বোচ্চ খরচ করেও ভালো সেবা পাচ্ছেন না। অব্যবস্থাপনা ও জবাবদিহিতার অভাবে সঠিক সেবা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে চিকিৎসার ক্ষেত্রে বেড়েছে ব্যক্তির নিজস্ব খরচও (আউট অব পকেট পেমেন্ট)। বর্তমানে চিকিৎসা খাতে আউট অব পকেট ব্যয়ের দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষে থাকা দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। এখানকার রোগীদের মোট ব্যয়ের ৭৪ শতাংশ আউট অব পকেট পেমেন্ট।
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, দেশের হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা বছরে সোয়া ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছেন। এ ব্যয়ের ৪৮ শতাংশ সরকারিতে ও ৫২ শতাংশ বেসরকারিতে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. এনামুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের দেশে এখন কিছু রোগ রয়েছে, যার পরিপূর্ণ সেবা একই ছাদের নিচে পাওয়া যায় না। ক্যান্সার চিকিৎসার সুবিধা কম। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সুবিধা কম। তবে সরকার বিভিন্ন পর্যায়ে দক্ষ লোকবল ও বিশেষায়িত সেবা বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিছু সেবা ভালো পর্যায়ে রয়েছে। এটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে কেন মানুষ বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছে তার সঠিক গবেষণা না হলে বলা কঠিন। আর বিদেশে গেলে চিকিৎসা ব্যয় বাড়বেই। একজন রোগীর সঙ্গে অন্য স্বজনরাও বিদেশে যান। দুইদিনের জায়গায় পাঁচদিন থাকতে হয়। চিকিৎসা ব্যয়ের ক্ষেত্রে খরচ দুই প্রকার। একটি সরাসরি আর অন্যটি চিকিৎসা করতে গিয়ে অন্যান্য খরচ। এতে যাতায়াত, থাকা-খাওয়াসহ যাবতীয় খরচ রয়েছে। এছাড়া দেশে চিকিৎসা গ্রহণে আউট অব পকেট এক্সপেন্ডিচার কমানোর জন্য কার্যক্রম চালু রয়েছে। দেশের মানুষের বাড়তি ব্যয়ের প্রায় ৬৪ শতাংশই যায় ওষুধে। ওষুধের ব্যবহার যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার পরামর্শ রয়েছে। একই সঙ্গে চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র পর্যালোচনার জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি করারও পরামর্শ রয়েছে।’