অভিযুক্তদের হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় পুরো পরিবার
- শরীফ চৌধুরী, চাঁদপুর
- ২৪ জুন ২০২০
অভিযুক্তরা হচ্ছেন একই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী মৃত ইয়াকুব গাজীর ছেলে সেলিম গাজী, ভুদাই গাজীর ছেলে বাবুল গাজী, শোবহান মল্লিকের ছেলে ফিরোজ মল্লিক, জাহাঙ্গীর প্রধানের ছেলে মোস্তফা প্রধানিয়া, শফী প্রধানিয়ার ছেলে সবুজ প্রধানিয়া ও শরফত আলী গাজীর ছেলে ফয়সাল গাজী সহ ৭/৮জন। মুখোশপড়া ছিলো আরো দু’জন।
শেষ পর্যন্ত সোমবার রাতে কৌশলে দুর্গম চর থেকে পালিয়ে চাঁদপুর শহরে পৌঁছে পরিবারটি। এ সময় সদর মডেল থানায় গিয়ে পুরো ঘটনা খুলে বলেন তারা। পরে পুলিশের সহযোগিতায় চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের ভর্তি করা হয় ওই গৃহবধূকে।
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী এ ঘটনায় বাদির অভিযোগটি এজহার হিসেবে গন্য করা হয়েছে বলে মডেল থানার ওসি নাসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ধর্ষিতা গৃহবধূর স্বামী আব্বাস বকাউল থানায় মামলা করতে আসলে আসামিপক্ষের লোকজন দলবল নিয়ে থানা প্রাঙ্গণে এসে অবস্থান নেয়। আসামিদের বাঁচাতে কিছু দালালচক্র ধর্ষিতা ও তার স্বামীকে চাপ প্রয়োগ করার চেষ্টা করে। ঘটনার পরে খবর পেয়ে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হযরত আলী থানায় এসে ধর্ষিতা ও তার স্বামীকে সান্ত্বনা দেন কোনো ধরনের ক্ষতি যাতে না হয় ও সব কিছু দেখবে বলে আশ্বস্ত করেন।
নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ জানান, এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী মৃত ইয়াকুব গাজীর ছেলে সেলিম গাজী, ভুদাই গাজীর ছেলে বাবুল গাজী, শোবহান মল্লিকের ছেলে ফিরোজ মল্লিক, জাহাঙ্গীর প্রধানের ছেলে মোস্তফা প্রধানিয়া, শফী প্রধানিয়ার ছেলে সবুজ প্রধানিয়া ও শরফত আলী গাজীর ছেলে ফয়সাল গাজী সহ ৭/৮জন মুখোশ পরে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে। এ সময় তারা তার স্বামী ও তার গলায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে পাশের ঘরে জোরপূর্বক নিয়ে একের পর এক ধর্ষণ করে। এ সময় কয়েকজনের মুখোশ খোলা থাকায় তাদেরকে খুব সহজে চেনা যায়। এ ঘটনার বিচার করে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, লক্ষ্মীরচরে কিছুদিন ধরে গাজী ও বকাউল গোষ্ঠীর মধ্যে আধিপাত্য নিয়ে দ্বন্ধ এবং লুটপাট চলছে। এর মধ্যে এই দুই পক্ষের মারামারিতে গাজী বংশের লোকমান হোসেন একজন মারা যান। আর সেই দ্বন্ধে প্রতিশোধ নিতে গাজী গোষ্ঠীর বখে যাওয়া যুবকরা নিরীহ এই পরিবারের গৃহবধূর ওপর এমন নির্যাতন করেছে।
রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, রাতের আধারে ঘরে ঢুকে যারা গৃহবধূকে গণধর্ষণের এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে তারা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ঘটনার মূল হোতা মেম্বার রনির ছোট ভাই সেলিম গাজী এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে মানুষের গরু, ছাগল চুরি ও বেশ কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে। রনি ও তার ভাই সেলিমের বিরুদ্ধে এর পূর্বে ধর্ষণ মামলা রয়েছে। এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে লোকজন নিয়ে এই ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে তারা। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান এলাকাবাসী।
চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনর্চাজ নাসিম উদ্দিন জানান, গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় অভিযোগকারীরা থানায় এসে অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগটি এজহার হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনাটি আমরা তদন্ত করে দেখছি। যারা জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশের ব্যাপক তৎপরতা চলছে। মামলাটি তদন্ত এবং আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের জন্য সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) হারুনুর রশিদকে দায়িত্বও দেয়া হয়েছে।
চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. সুজাউদৌলা রুবেল জানান, ধর্ষিতার চিকিৎসা ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে। নির্যাতিতার শারীরিক অবস্থা এখন বেশ স্থিতিশীল। তার ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। ধর্ষণের আলামত নিশ্চিত হবে বলেও জানান তিনি।