- ইকতেদার আহমেদ
- ০৯ নভেম্বর ২০২০
১৯৭০ সালের পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ পরবর্তী শাসনক্ষমতা না পাওয়ার পরিণামে যে অসহযোগ আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটেছিল তা অবশেষে মুক্তি বা স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ লাভ করে। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া সত্ত্বেও আওয়ামী লীগকে শাসনক্ষমতা না দেয়ার কারণে ধর্মীয় জাতিসত্তার ভিত্তিতে সৃষ্ট পাকিস্তানের অখণ্ডতা ধরে রাখা যায়নি। পাকিস্তান রাষ্ট্রটি সৃষ্টির অতীত ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ যখন বিভাজন হয়, তখন ভারতবর্ষের লোকসংখ্যা ছিল ৩৩ কোটি, যার মধ্যে ১০ কোটি ছিল মুসলমান এবং অবশিষ্ট ২৩ কোটির বৃহদাংশ হিন্দু ও একটি ক্ষুদ্রাংশ খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর অন্তর্ভ্ক্তু। ব্রিটিশ ভারতে উপমহাদেশের স্বাধীনতার জন্য যে দু’টি দল সর্বাধিক সোচ্চার ছিল তার একটি হলো কংগ্রেস এবং অপরটি মুসলিম লীগ। সৃষ্টিলগ্ন থেকেই কংগ্রেস সম্পর্কে সাধারণ্যে ধারণা ছিল এ দলটি হিন্দুদের স্বার্থ সংরক্ষণে অধিক সচেষ্ট। অপর দিকে মুসলিম লীগ সম্পর্কে ধারণা ছিল মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার জন্য দলটির জন্ম হয়েছে। কংগ্রেস প্রথম থেকেই হিন্দু-মুসলিম সমন্বয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি করে আসছিল। কংগ্রেসের জন্মের ২০ বছর পর মুসলিম লীগের জন্ম হয় এবং মুসলিম লীগের জন্ম পরবর্তী এ দলটি ভারতবর্ষের যেসব প্রদেশে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সেসব প্রদেশ সমন্বয়ে পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের দাবি তোলে।
মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ দ্বি-জাতিতত্ত্ব উদ্ভাবনপূর্বক হিন্দু ও মুসিলম দু’টি পৃথক জাতিসত্তা এটি প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হলেও এ কথাটি নিশ্চিতভাবে বলা যায় ব্রিটিশদের ডমিনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব কংগ্রেস কর্তৃক গৃহীত হলে মুসলিম লীগের পক্ষে তা থেকে দূরে থাকা কঠিন হতো। কেবিনেট মিশনের যুক্তরাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব ভেস্তে গেলে সিদ্ধান্ত হয় হিন্দু ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ সমন্বয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামক দু’টি পৃথক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হবে। সে সময় ভারতবর্ষের ছয়টি প্রদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। এ ছয়টি প্রদেশ হলো পাঞ্জাব, সিন্ধু, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত, বেলুচিস্তান, জম্মু ও কাশ্মির এবং বাংলা।
হিন্দু নেতারা প্রভাবিত কংগ্রেস ভারতবর্ষ বিভাজনে সম্মত হলেও এর সাথে শর্ত দিয়ে দাবি তোলে বাংলা ও পাঞ্জাবকে বিভাজন করতে হবে এবং ব্রিটিশ শাসনের অধীন ভারতবর্ষের স্বাধীন রাজ্যগুলোকে রাজার ইচ্ছানুযায়ী ভারত বা পাকিস্তান যেকোনো দেশে যোগদানের ক্ষমতা দিতে হবে। সে সময় জম্মু ও কাশ্মিরের লোকসংখ্যার অধিকাংশ ছিল মুসলমান এবং অপর দিকে জুনাগড় ও মানভেদর এবং হায়দরাবাদের জনসংখ্যার বেশির ভাগ ছিল হিন্দু। এ রাজ্যগুলো মুসলিম শাসক দ্বারা শাসিত হলেও প্রথমোক্ত রাজ্যের রাজা ভারতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ব্যাপারে বাসনা ব্যক্ত করে। অপর দিকে শেষোক্ত দু’টি রাজ্যের রাজা পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ব্যাপারে ইচ্ছা ব্যক্ত করে। প্রথমোক্ত রাজ্যটির সাথে পাকিস্তানের স্থলসীমানা থাকলেও শেষোক্ত দু’টি রাজ্য চতুর্দিকে ভারত দ্বারা বেষ্টিত ছিল। ভারতবর্ষের স্বাধীনতার এক বছরের মাথায় ভারত জোরপূর্বক শেষোক্ত দু’টি রাজ্য দখল করে নেয় এবং প্রথমোক্ত রাজ্যটির এক-তৃতীয়াংশ বর্তমানে পাকিস্তানের এবং দু’তৃতীয়াংশ ভারতের দখলে।
ভারতবর্ষ বিভাজনের পূর্ববর্তী বছর বাংলা ও পাঞ্জাবে যে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা হয় তাতে প্রায় ছয় লক্ষ হিন্দু-মুসলিমের প্রাণহানি ঘটে। এ দাঙ্গার জন্য কংগ্রেস ও মুসলিম নেতারা যতটুকু না দায়ী তার চেয়ে ব্রিটিশদের দায় কোনো অংশে কম নয়। বাংলা ও পাঞ্জাবকে ভাগ করে পশ্চিমবাংলা ও পূর্বপাঞ্জাব পৃথক প্রদেশের মর্যাদায় ভারতের অন্তর্ভুক্ত হলেও সামগ্রিকভাবে প্রদেশ দু’টি যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল এবং এ দু’টি প্রদেশ বিভাজনের কারণে মুসলমানদের অংশে জনসংখ্যানুপাতে ভূমির পরিমাণের যে হ্রাস ঘটেছিল তা লাঘবে ব্রিটিশদের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
পূর্বপাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত সিলেট জেলা ভারতবর্ষ বিভাজন পূর্ববর্তী আসামের অংশ ছিল এবং গণভোটে সিলেট পূর্ব-পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হলেও মুসলিম জনসংখ্যা অধ্যুষিত করিমগঞ্জ মহকুমা যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতিরেকেই ভারতের অংশে দিয়ে দেয়া হয়। বাংলা বিভাজনের কারণে পূর্ব-বাংলার অর্থনৈতিক সাম্ভাব্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিলেও ব্রিটিশরা তা নিরসনে উদ্যোগী হয়নি। পশ্চিমবাংলার অন্তর্ভুক্ত পশ্চিম-দিনাজপুর, মালদাহ ও মুর্শিদাবাদ এ তিনটি জেলা ব্যাপকভাবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। এ তিনটি জেলা পূর্বপাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার ক্ষতি হিসেবে ব্রিটিশদের উচিত ছিল ভারতের বর্তমান মিজোরাম, মনিপুর, আগরতলা ও মেঘালয় সমন্বয়ে পূর্ববাংলার সীমানা নির্ধারণ।
ধর্মীয় জাতিসত্তার ভিত্তিতে সৃষ্ট পাকিস্তান তার রজতজয়ন্তীতে পদার্পণের আগেই বিভক্ত হয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির অভ্যুদ্বয় ঘটায়। পূর্বপাকিস্তানে মুক্তি ও স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন এর সপক্ষের নেতারাসহ অনেক ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক-জনতা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। এ সংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল এ দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্পদ্রায়। তারা সেখানে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল। ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক-জনতার একটি অংশ ভারত থেকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র প্রাপ্ত হয়ে এ দেশে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত হয়।
এ দেশে মুক্তি তথা স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন রাজনৈতিক দলের মধ্যে মুসলিম লীগ ও জামায়াতে ইসলামী দৃঢ়ভাবে পাকিস্তানের অখণ্ডতায় বিশ্বাসী ছিল। সে সময় এ দেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহায়তা করার জন্য রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। ‘রাজাকার’ শব্দটি একটি ফারসি শব্দ এবং এর অর্থ সাহায্যকারী অথবা সহায়তাকারী। রাজাকার বাহিনী পাকিস্তানের বেতনভোগ বাহিনী ছিল এবং তৎকালে পূর্বপাকিস্তানের বিভিন্ন জেলায় নিয়োজিত জেলা প্রশাসকদের রাজাকার বাহিনী গঠনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এ বাহিনীটির মূল দায়িত্ব ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহায়তা এবং সড়ক ও রেল পথসহ সেতু ও উল্লেখযোগ্য স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ। এ বাহিনীটি ছাড়াও আল-শামস ও আল-বদর নামক দু’টি পৃথক বাহিনী গঠন করা হয়েছিল; তবে এ দু’টি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা দলীয় নেতৃত্বের ওপর ন্যস্ত ছিল।
এ কথাটি অনস্বীকার্য যে, পূর্ব-পাকিস্তানের বাঙালিদের মুক্তি তথা স্বাধীনতা সংগ্রাম ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের মাধ্যমে পরিসমাপ্ত না হলে আমাদের মুক্তি তথা স্বাধীনতা সংগ্রাম সুদীর্ঘ কাল ধরে চলত; তবে সে সুদীর্ঘ কালের ব্যাপ্তি কত হতো তা হিসাব করে বলা কঠিন।
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের মাধ্যমে পূর্ব-পাকিস্তানে অবস্থানরত পাকিস্তানের সেনাবাহিনী যুদ্ধে পরাজয় অনিবার্য ভেবে ভারতের সেনাবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করলে স্বাধীনতা-পরবর্তী মুসলিম লীগ ও জামায়াতের যেসব নেতা পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করেছিলেন তাদের কিছু মুক্তিবাহিনী দ্বারা আক্রান্ত হয়ে নিহত হন; তবে বেশির ভাগ কারারুদ্ধ হন। রাজাকার হিসেবে যারা যোগ দিয়েছিলেন এদের অধিকাংশের ক্ষেত্রেই রাজনীতির চেয়ে অর্থনীতির বিষয়টি মুখ্য ছিল। এ রাজাকারদের বেশ কিছু সংখ্যক মুক্তি তথা স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন মুক্তিবাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে বা যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন; তবে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ চলাকালীন ৩-১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন জেলা শহরের মুক্তি ও ভারতের সেনাবাহিনীর কাছে পতন হতে থাকলে পলায়নরত রাজাকারদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অংশ মুক্তিবাহিনীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে নিহত হন। আল-শামস ও আল-বদর বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত অধিকাংশের ক্ষেত্রে একই পরিণতি ঘটেছিল।
১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভাজনের সময় পূর্ববাংলার শতভাগ মুসলমান পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পক্ষে ছিল। তখন স্বাধীনতার সপক্ষের দল মুসলিম লীগ ছাড়া অপর কোন দলের ব্যাপক জনসমর্থন ছিল না। পাকিস্তান সৃষ্টির পর যেসব নেতা আওয়ামী লীগ গঠনে ভূমিকা রেখেছিলেন তাদের কারও ব্যাপারে এ কথা বলার অবকাশ নেই যে, তারা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমির বিরোধী ছিলেন।
মুক্তি তথা স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন এবং স্বাধীনতার অব্যবহিত পর রাজাকারদের প্রতি এ দেশের মানুষের ঘৃণা ছিল এবং এর ফলে রাজাকার হিসেবে যোগদানকারী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খুব কমসংখ্যক মৃত্যু এড়াতে সক্ষম হয়েছিল। মুসলিম লীগ ও জামায়াত নেতাদের প্রায় সবাই পাকিস্তানের অখণ্ডতায় বিশ্বাসী হলেও তাদের মধ্যে মুক্তি তথা স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতার চেয়ে ভারত বিরোধিতার বিষয়টি অধিক প্রবল ছিল।
বঙ্গভঙ্গ এবং পূর্ববাংলার পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তি- এ দু’টির পেছনে ছিল ধর্মীয় জাতিসত্তা। আর এ ধর্মীয় জাতিসত্তার মধ্যে লুকায়িত ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ। পশ্চিম-বাংলার নেতৃস্থানীয় হিন্দুদের বিরোধিতার কারণেই বঙ্গভঙ্গের রদ হয়েছিল এবং সে রদের সহানুভূতির বহিঃপ্রকাশে পূর্ববাংলার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এনে দিলেও এর বাস্তবায়ন নেতৃস্থানীয় হিন্দুদের তীব্র বাধার মধ্যে পড়ে। যে দর্শনের ভিত্তিতে বঙ্গভঙ্গ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং পূর্ববাংলা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল সে দর্শন পাকিস্তানের অখণ্ডতা অক্ষুণœ রাখতে পারেনি। তাই প্রশ্ন এসে যায় একই দর্শন ভারতের অখণ্ডতা রক্ষার ক্ষেত্রে কতদিন সহায়ক হবে?
মুক্তি তথা স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন মুসলিম লীগ ও জামায়াত দলগতভাবে পাকিস্তানের অখণ্ডতার পক্ষে অবস্থান নিলেও তারা যতটুকু না স্বাধীনতাবিরোধী ছিল এর চেয়ে অনেক বেশি ভারতবিরোধী ছিল। আর লাহোর প্রস্তাবের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে এক বা একাধিক রাষ্ট্র গঠিত হবে এ বাস্তবতা মেনে নিলে তারা বাংলাদেশ বিরোধী ছিলেন এমনটি ভাবার অবকাশ সীমিত।
এ কথাটি সত্য, ধর্মীয় জাতিসত্তা তাদের হিন্দুত্ববাদে বিশ্বাসী ভারত তথা হিন্দুস্থানের অনুগামী হতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল কিন্তু তা দ্বারা কি এ কথা বলার অবকাশ সৃষ্টি হয় তারা পাকিস্তানের অখণ্ডতা অক্ষুণœ রেখে পূর্ব-পাকিস্তান তথা পূর্ববাংলার স্বায়ত্তশাসনের বিরোধী ছিলেন?
মুক্তি তথা স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন সাহায্যকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে যারা রাজাকার হিসেবে এ দেশের মানুষের প্রতি অত্যাচার ও নিষ্পেষণ করেছিলেন স্বাধীনতার অব্যবহিত পর তাদের মধ্যে যারা জীবিত ছিল জনরোষে এদের সবার মৃত্যু ঘটে। এরূপ রাজাকার ছাড়া অন্য যাদের আজ রাজাকার বলে অভিহিত করা হয় স্বাধীনতার অব্যবহিত পর স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তকরণ প্রভৃতি অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা হয়েছিল কি?
লাহোর প্রস্তাবের অনুগামী হিসেবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় যারা অবদান রেখেছিলেন তাদের এবং তাদের অনেক উত্তরসূরির ভূমিকাকে বাংলাদেশের মুক্তি তথা স্বাধীনতা সংগ্রাম বিষয়ে একটি শ্রেণী ও গোষ্ঠী রাজাকারের ভূমিকা হিসেবে চিহ্নিত করতে সচেষ্ট। কিন্তু প্রশ্ন প্রকৃতই তারা রাজাকার হয়ে থাকলে মুক্তি তথা স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত যে তিনজন বিচারাধীন অবস্থায় অন্তরীণ থাকাকালীন মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের নামাজে জানাজায় কেন এত বিপুল জনসমাগম? আর এ বিপুল জনসমাগম তাদের রাজাকার হিসেবে গণ্য করা, মুক্তি তথা স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি ভাবার ক্ষেত্রে অন্তরায় নয় কি?
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
E-mail: [email protected]