স্থিতিশীলতা ফিরছে পোশাক শিল্প অঞ্চলে

mzamin

facebook sharing button
whatsapp sharing button

গত বছরের ৫ই আগস্টের পর ঢাকার অদূরে আশুলিয়া সহ বেশিরভাগ পোশাক শিল্প অঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। এতে উদ্যোক্তাদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। পাশাপাশি চিন্তিত হয়ে পড়েন স্বনামধন্য পোশাক ব্র্যান্ড ও ক্রেতারা। তবে বর্তমানে সংকট কাটিয়ে স্থিতিশীলতা ফিরছে পোশাক শিল্প অঞ্চলে। এ ছাড়া রপ্তানি আয় প্রবৃদ্ধিও অব্যাহত রয়েছে।

শিল্পসংশ্লিষ্টরা বলেন, গত বছর পট পরিবর্তনের পর আশুলিয়া এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। স্পেন, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র সহ বড় ব্র্যান্ডগুলো বিশেষভাবে সতর্ক হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার পদক্ষেপ নেয়ার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। মাঝে সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতে ক্রেতারা দেশের অন্যান্য শিল্প অঞ্চলের কারখানায় উৎপাদন স্থানান্তর করেছে। এতে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পেরেছে তারা। গত বছর একটানা শ্রমিক আন্দোলনের পর সরবরাহ চেইনের ঝুঁকি কমাতে এই পদক্ষেপ নেয় তারা।
কারখানা মালিকরা বলছেন, আশুলিয়া আপাতত ২০২৫-২৬ সালের বসন্ত-গ্রীষ্ম মৌসুমের জন্য চীন থেকে স্থানান্তরিত হয়ে আসা বাড়তি অর্ডার সামলাচ্ছে। এতে তাৎক্ষণিকভাবে বড় ব্র্যান্ডগুলোর ফাঁকা জায়গা পূরণে সাহায্য হওয়ায় এ অঞ্চলের ওপর নির্ভরতা কিছুটা কমেছে।

এসএম সোর্সিং-এর সিইও মির্জা শামস মাহমুদ বলেন, ক্রেতারা ইতিমধ্যেই এই অঞ্চলের ঝুঁকি নিরূপণ করে তাদের অর্ডার পুনর্বিন্যাসের জন্য একটি ম্যাপ তৈরি করেছে। তবে কম দামি ও ডিসকাউন্টে পণ্য নেয়া ক্রেতারা মূল্য বিবেচনায় তাদের অর্ডার কমাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন তিনি। তবে এরপরও এ এলাকা পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়ায়নি বলে সতর্ক করেছেন শিল্প নেতারা। তারা বলেন, আশুলিয়া ফের ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করতে পারবে কি না তা স্পষ্ট হবে মার্চের পর, রপ্তানিকারকরা যখন ২০২৬ সালের শরৎকালীন ছুটির মৌসুমের জন্য অর্ডার নিতে শুরু করবে। ক্রেতাদের ফিরিয়ে আনতে শিল্প নেতারা শিল্প অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ওপর জোর দিচ্ছেন। কিছু কারখানা পূর্ণ উৎপাদন সক্ষমতা বজায় রাখতে সাবকন্ট্রাক্টিং-এর ওপর নির্ভর করছে। তবে স্বনামধন্য ক্রেতাদের জন্য সাবকন্ট্রাক্টিংয়ের ক্ষেত্রে আগাম অনুমোদন নিতে হয়।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) তথ্যমতে, আশুলিয়ায় ৪০০’রও বেশি রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় প্রায় ১০ লাখ কর্মী কাজ করেন। দেশের বার্ষিক রপ্তানি আয়ে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার অবদান রাখে এ অঞ্চলের কারখানাগুলো।
কারখানা মালিকরা বলেন, আশুলিয়ার পর সাভার-জিরানী এলাকাও শ্রমিক অসন্তোষের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। প্রধান সড়কের পাশের কারখানাগুলো হয়ে ওঠে ঝুঁকিপূর্ণ। এই অঞ্চলে থাকা বেক্সিমকো গ্রুপের ইউনিট বন্ধ হওয়ায় প্রায় ৪০ হাজার কর্মী বেকার হয়ে পড়ে। বর্তমানে কারখানাগুলো ফের চালু করার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপের দাবি জানাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।

গত বছর একটি কারখানা ৮৫ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। আশুলিয়ার এই কারখানাটি বছরে ২২ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করতো। তবে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে প্রায় ৪৫ দিন উৎপাদন বিঘ্নিত হওয়ায় গত বছর তাদের রপ্তানি ৪.৫ মিলিয়ন ডলার কমেছে। এরপর প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে দাঁড়িয়ে এখন পূর্ণ সক্ষমতায় চলছে। আশুলিয়া থেকে অর্ডার সরে যাওয়া সত্ত্বেও কারখানাটি স্থিতিশীল অবস্থানে রয়েছে। এর কারণ এখানে ডিসকাউন্ট রিটেইলারদের জন্য প্রচারণামূলক পণ্য উৎপাদন করা হয়। আর শিল্প অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা যদি স্থিতিশীল হয়, তবে পুরো খাতে ব্যবসার প্রবৃদ্ধি দেখা যেতে পারে।
আশুলিয়া থেকে অর্ডার স্থানান্তর
পোশাক রপ্তানিকারকরা জানান, আশুলিয়ার কারখানাগুলোর জন্য নির্ধারিত অনেক অর্ডার এখন গাজীপুর, চট্টগ্রামসহ যেসব অঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম, সেখানকার কারখানায় সরানো হচ্ছে।
একজন শীর্ষস্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারক বলেন, একটি স্বনামধন্য মার্কিন ব্র্যান্ড ইতিমধ্যেই আমাদের জানিয়েছে, তারা আশুলিয়াভিত্তিক কারখানায় উৎপাদন চালিয়ে যেতে চায় না। তারা তাদের পণ্য ওই গ্রুপেরই অন্য একটি অঞ্চলের কারখানায় উৎপাদনের অনুরোধ করেছে।

বিজিএমইএ’র সাবেক সহ-সভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী উদ্বেগের কথা জানিয়ে বলেন, আশুলিয়াভিত্তিক কারখানাগুলোর অস্থিতিশীলতা সময়মতো উৎপাদন এবং শিপমেন্টের লিড টাইম বজায় রাখতে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। ফলে ক্রেতারা চট্টগ্রামের কারখানাগুলোকে বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করছে।
টিএডি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশিকুর রহমান তুহিন সরকারের হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে এবং ব্যবসা ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হলে সরকারকে রপ্তানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান বের করতে হবে।

ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে: গত বছরের শেষ চার মাস সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বড় প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে গত বছরের ডিসেম্বরে রপ্তানি করেছে ৫৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। এটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় ১৮.৩৬ শতাংশ বেশি। যদিও গত নভেম্বরে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি বেড়েছিল ৪১ শতাংশ। এভাবেই এক বছরের ব্যবধানে তৈরি পোশাকের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। সার্বিকভাবে ২০২৪ সালে অবশ্য তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি হয়নি, তবে ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। সব মিলিয়ে গত বছর বাংলাদেশ থেকে ৭৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা এর আগের ২০২৩ সালের তুলনায় ০.৭৫ শতাংশ বেশি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ওই বছর রপ্তানি ২৫ শতাংশ কমে ৭২৯ কোটি ডলারে নেমেছিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here