স্টেটসম্যান জিয়াউর রহমান

  • ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ
  •  ৩০ মে ২০২২, ১৯:৩৬

স্টেটসম্যান জিয়াউর রহমান। – ছবি : সংগৃহীত

সাধারণ রাষ্ট্রনায়কদের সাথে স্টেটসম্যানদের সূ² অথচ বিশাল একটা পার্থক্য করা হয়ে থাকে। স্টেটসম্যানরা বর্তমান ভবিষ্যৎ উভয় কালেই বিচরণ করেন অনায়াসে। সরল বাংলায় তাদের বলা যায় ভবিষ্যতদ্রষ্টা, স্বপ্নদ্রষ্টা। তারা জাতির অনাগত ভবিষ্যতের স্বচ্ছ ছবি এঁকে বর্তমানকে সাজাতে থাকেন। পৃথিবীর ইতিহাসে স্বল্পসংখ্যক মানুষই পেরেছেন জাতির আশা-আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে স্টেটসম্যান হওয়ার গৌরব অর্জন করতে। তাদের ছোঁয়ায় ঘুমন্ত, হতাশাগ্রস্ত, সমস্যাপীড়িত জাতি জেগে ওঠে, নতুন উদ্যমে শুরু হয় সব কিছু। শত সমস্যা মোকাবেলা করে জাতি তখন এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পায়। এক কথায় জাতিকে এই মহান ব্যক্তিরা স্বপ্ন দেখাতে পারেন। যে স্বপ্ন বুকে ধারণ করে সব বাধা অতিক্রম করে একটি জাতি এগিয়ে যায় সম্মুখপানে।

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ক্ষণজন্মা সেসব স্টেটসম্যানেরই একজন ছিলেন এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ নানা দিক থেকে বিপর্যস্ত, তলাবিহীন ঝুড়ি আখ্যাপ্রাপ্ত একটি সদ্য স্বাধীন দেশের জন্য আশীর্বাদ হয়েই তিনি এসেছিলেন। আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার স্টেটসম্যান মাহাথির মোহাম্মদের কয়েক বছর আগেই ‘বাংলাদেশের মাহাথির’ শহীদ জিয়ার আবির্ভাব ঘটেছিল। স্টেটসম্যানসুলভ দূরদৃষ্টি নিয়ে তিনি এঁকে ফেলেছিলেন এ দেশের উন্নয়নের রূপকল্প। সমগ্র জাতির প্রাণে সৃষ্টি করেছিলেন এক অন্য রকম স্পন্দন। জাতি গঠনের এক মহাপরিকল্পনা নিয়ে নেমে পড়েছিলেন। রাষ্ট্রের এমন কোনো সেক্টর ছিল না যেটাতে তিনি তরঙ্গ সৃষ্টি করতে পারেননি। তিনি শুরু করেছিলেন জাতিকে স্বাবলম্বী করার বাস্তবসম্মত কার্যক্রম। ‘আদর্শ গ্রাম’ তৈরির এক সূদুরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত উন্নয়নের সুষম সুফল পৌঁছে দিতে তিনি আপামর জনতার দ্বারে দ্বারে ছুটলেন। বিপুল জনসংখ্যায় হতাশ বা আশাহত না হয়ে জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করার বাস্তবসম্মত উদ্যোগ গ্রহণ করলেন। টপ টু বটম সবাইকে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে এলেন। নিজের রাজনৈতিক সহকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ বেকার যুবক শ্রেণী পর্যন্ত সবাইকেই নিজ নিজ ক্ষেত্র ও পর্যায়ে প্রশিক্ষণ নিতে হবে, তার পর পথচলা- এ নীতি কার্যকর হলো। এর ফলে দেশের প্রতিটি সেক্টরে ইতিবাচক ফল লাভ তো ঘটেই, উপরন্তু বিদেশে দক্ষ জনশক্তি রফতানির মাধ্যমে সুনাম অর্জন করে বিপুল এক সম্ভাবনার দ্বারও উন্মোচন করা সম্ভবপর হয়েছিল। দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির এ অত্যাধুনিক পদ্ধতি শহীদ জিয়া আজ থেকে তিন দশক আগেই কার্যকর করে তার দূরদৃষ্টির যথাযথ প্রমাণ রেখে গেছেন।

তার আরেকটি বিস্ময়কর পরিকল্পনা ছিল ‘খাল খনন প্রকল্প’। শুকনো মৌসুমে পানি ধরে রাখা আর বন্যার সময় তলিয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচার কি মোক্ষম ব্যবস্থার কথাই না তিনি চিন্তা করেছিলেন আজ থেকে ৩০ বছর আগে। দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো- সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে পরিত্যক্ত এ প্রকল্পটির প্রয়োজনীয়তার কথা আজ আমাদের বিশেষজ্ঞরা স্বীকার করছেন। এর মাধ্যমে এক দিকে যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছিল, তেমনি এক সুদূরপ্রসারী ফলাফলের কথাও ভাবা হয়েছিল। এ প্রকল্পের কারণে আজ বরেন্দ্র ভ‚মি সবুজ শ্যামল জনপদে পরিণত। অন্য দিকে অল্প বৃষ্টি বা ঢলেই বন্যার হাত থেকে বাঁচার জন্য এ কর্মসূচি আবারো শুরু করার পরামর্শ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞজনরা।

শহীদ জিয়ার অসামান্য অবদান হলো দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা। এ ক্ষেত্রেই তার অন্তর্দৃষ্টি অবাক করার মতো। ক্ষুদ্র নৃতাত্তি¡ক জনগোষ্ঠী থেকে শুরু করে সবার জন্য মর্যাদাকর একটি জাতীয় পরিচিতি নিশ্চিত করে ‘বাংলাদেশী’ জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে তিনি দেশকে ঐক্যবদ্ধ করে ফেললেন। ‘তোরা সবাই বাঙালি হয়ে যা’ জাতীয় অমর্যাদাকর, উসকানিমূলক বক্তব্যের আলোকে গৃহীত পদক্ষেপের মাধ্যমে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছিল তিনি তা মেরামতের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সবচেয়ে বড় যে কাজটি তিনি করেছিলেন তা হলো ৯০ শতাংশ মানুষের চিন্তা-চেতনা ধারণ করে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি প্রণয়ন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করে ইসলামের মূল শিক্ষা তাওহিদ বা একত্ববাদকে তিনি ‘আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ নামে রাষ্ট্রীয় মূলনীতির অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। ধর্মহীনতার প্রতীক বিভ্রান্তিকর মতবাদ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও সমাজতন্ত্রকে তিনি ছুড়ে ফেলে দেন। এ পদক্ষেপের মাধ্যমে তার যে দূরদর্শিতা পরিলক্ষিত হয়েছে তা এক কথায় অভূতপূর্ব ও অসাধারণ। এর মধ্য দিয়ে তিনি এ দেশের আবহমান ঐতিহ্যকে যেমনভাবে তুলে ধরতে পেরেছিলেন তেমনি সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যবোধ সৃষ্টি করতেও সক্ষম হন। এর ফলে মুসলিম বিশ্ব নতুনভাবে বাংলাদেশকে নিয়ে ভাবনা শুরু করে, তারা এক নতুন জাতিসত্তার সন্ধান পায়।

শহীদ জিয়া উপলব্ধি করেছিলেন বাংলাদেশীদের মেধার অভাব নেই, প্রয়োজন শুধু যথাযথ পরিচর্যার। তিনি দেশের বুদ্ধিজীবী-পণ্ডিতদের আন্তরিকতার সাথে সম্পৃক্ত করলেন রাষ্ট্র পরিচালনার নানা কর্মকাণ্ডে। এ ক্ষেত্রে কে কোনো মতের তা তিনি দেখেননি। দেশের প্রতি তাদের যে দায়িত্ববোধ আছে তার আলোকে তারা দেশকে যা দিতে পারেন তার সমন্বয় সাধন এবং সে আলোকে জাতীয় উন্নয়নের পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন এটিই ছিল তার লক্ষ্য। এ জন্যই তার পরামর্শকদের মধ্যে যেমন ছিলেন আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত ব্যক্তিত্ব সদ্যপ্রয়াত মনীষী মোজাফফর আহমদ তেমনি ছিলেন বরেণ্য কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ সৈয়দ আলী আহসান।

নবীন প্রজন্মের মেধাগুলো যেন ঝরে না পড়ে, তাদের মধ্যে যেন দেশপ্রেমই সব কিছুর ঊর্ধ্বে স্থান পায়, তাদের মেধা যেন দেশেরই কল্যাণের জন্য নিবেদিত হয় এ জন্য শহীদ জিয়ার কর্মপরিকল্পনা ও উদ্যোগ ছিল ব্যতিক্রমধর্মী। দেশের সেরা মেধাবী সন্তানদের তিনি জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত ও মূল্যায়িত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এ ক্ষেত্রে তার গৃহীত নৌবিহারের কথা স্মরণযোগ্য। দেশের নবীন মেধাবী মুখগুলোকে নিয়ে তিনি ‘হিজবুল বাহার’ এ নৌকা ভ্রমণের ব্যবস্থা করেন। নবীনদের দীক্ষা দিতে সাথে নিয়ে ছিলেন দেশের শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবীদের। এর মাধ্যমে তিনি নবীণ-প্রবীণের মধ্যে এক অন্য রকম সেতুবন্ধন রচনার প্রয়াস পেয়েছিলেন। এরূপ এক নৌবিহারে সমবেতদের উদ্দেশ্যে মধ্য সমুদ্রে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি তোমাদেরকে অন্য কোথাও না নিয়ে এ সমুদ্রে নিয়ে এসেছি সমুদ্রের মতো তোমরা যেন বিশাল হৃদয়ের আর সবার জন্য উদারচিত্ত হতে পারো সে শিক্ষা হাতে কলমে দেয়ার জন্যই…।’ রাষ্ট্রীয় কাজের চরম ব্যস্ততার মধ্যেও সময় বের করা এবং জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধারদের গড়ার জন্য এমন নিখুঁত পরিকল্পনা গ্রহণ একজন স্টেটসম্যানের পক্ষেই শুধু সম্ভব।

দুই. জিয়াউর রহমানের বিচক্ষণ নেতৃত্ব ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কর্মকাণ্ডের পরিধি দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বিস্তর লাভ করেছিল। তার দেশপ্রেম, দেশ গঠনে তার পরিকল্পনা, দক্ষতা, যোগ্যতা তাকে তৃতীয় বিশ্বের এক ‘লড়াকু সৈনিকের’ ইমেজ এনে দিয়েছিল বিশ্বজুড়ে। দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক নানা ইস্যুতে বাংলাদেশের গুরুত্ব প্রথমবারের অনুভ‚ত হতে শুরু করেছিল তার গতিশীল নেতৃত্বের কারণেই। এক দিকে সফল ক‚টনৈতিক পলিসির মাধ্যমে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে সম্পর্ক একটি সম্মানজনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারা অন্য দিকে দেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতির আত্মমর্যাদার ক্ষেত্রে সামান্য অপমান বরদাশত না করার এক সমন্বয়ধর্মী পররাষ্ট্রনীতির প্রণেতা তিনি। দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা জোট-সার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা তিনি। স্নায়ুযুদ্ধের সেই সময়কালটায় অত্যন্ত যোগ্যতার সাথে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করে তিনি বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেন। ইসলামী উম্মাহর সাথে নিবিড় যোগাযোগ স্থাপন তার দক্ষ নেতৃত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছিল। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে তার জনপ্রিয়তা ছিল অবাক করার মতো। মুসলিম বিশ্বের নানামুখী সমস্যা-বিরোধ মেটাতে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।

ইরাক-ইরান য্দ্ধু নিয়ে তার উদ্যোগ ও ভ‚মিকার কথা এ ক্ষেত্রে উলে­খ করার মতো। এভাবে ওআইসিকে শক্তিশালীকরণ, আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় মুসলিম উম্মাহর যথাযথ অংশগ্রহণ, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন প্রভৃতি ইস্যুতে জিয়ার বলিষ্ঠ ভূমিকা ইতিহাসে তাকে অমর করে রেখেছে। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত একটা স্মৃতির কথা না বলে পারছি না। বছর কয়েক আগে মরক্কো সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চ শিক্ষার্থে সেখানে অবস্থান করছিলাম। সেখানকার ক্যাসাব্লাঙ্কা নগরীর দ্বিতীয় হাসান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য একজন শিক্ষক আমার সুপারভাইজার ছিলেন। প্রথম পরিচয়ে আমি বাংলাদেশী জেনে উৎসাহিত হয়ে তিনি বলেন : ‘জিয়াউর রহমানের দেশের লোক?’ সেই অচেনা পরিবেশে একজন উচ্চশিক্ষিত বিদেশীর মুখে এ কথা শুনে গর্বে মনটা ভরে গিয়েছিল। আমার জন্য আরো চমক অপেক্ষা করছিল তখনো বুঝতে পারিনি। কিছু দিন পর আমার সুপারভাইজার রাজধানী রাবাতেই থাকছি জানতে পেরে একটা এলাকার নাম বলে বললেন, সেখানে গিয়ে এমন কিছু দেখবে, যা তোমাকে পুলকিত করবে। পরের দিনই ছুটলাম কী হতে পারে তা জানার তীব্র আকর্ষণ নিয়ে- সত্যি আমি রীতিমতো বিস্মিত, গর্বিত। মরক্কোর রাজধানী রাবাতের প্রাণকেন্দ্রের একটি এভিনিউয়ের শুরুতে বিরাট করে আরবিতে লেখা “শারি‘আশ-শহীদ জিয়াউর রহমান” (শহীদ জিয়াউর রহমান এভিনিউ)! শুধু মরক্কোতেই নয় সেনেগাল, তুরস্কসহ মুসলিম বিশ্বের আরো কয়েকটি দেশে শহীদ জিয়ার নামে সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। কী অসাধারণ যোগ্যতা নিয়ে তিনি রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বে সমাসীন ছিলেন, যার প্রভাব আন্তর্জাতিক মহলেও ছড়িয়ে পড়েছিল। তৃতীয় বিশ্বের বিশেষ করে মুসলিম জাহানের মজলুম মানুষের কণ্ঠস্বরে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। আধিপত্যবাদ বিরোধী বলয়েও তার প্রভাব ছিল সুস্পষ্ট। ভারতীয় আধিপত্যবাদ মোকাবেলায় তিনি চীনের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের উদ্যোগ নেন এবং এ অঞ্চলের ভ‚-রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে একটি ভারসাম্য আনতে সক্ষম হয়েছিলেন।

শহীদ জিয়ার মূল্যায়ন ইতিহাসের স্বাভাবিক নিয়মেই হবে। কেউ ইচ্ছা করলেই তাকে তার গগনচুম্বী অবস্থান থেকে নামিয়ে আনতে পারবে না। আধিপত্যবাদী, ব্রাহ্মণ্যবাদী শক্তির দোসরদের ‘অন্ধ জিয়া বিরোধিতা’র কারণ সম্ভবত এটাই যে শাহাদতের এত বছর পরেও এ দেশের দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী ও ধর্মীয় মূল্যবোধে আস্থাশীল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রেরণার অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে শহীদ জিয়াই রয়ে গেছেন।

লেখক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, সদস্য সচিব, শত নাগরিক, রাজশাহী।
ইমেইল : masud1978@ru.ac.bd