২০১০ সালের ডিসেম্বরে এমভি জাহান মনি নামে প্রথম বাংলাদেশি জাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এরপর চলতি বছরের গত ১২ মার্চ দ্বিতীয় বাংলাদেশি জাহাজ হিসেবে একই পরিণতির মুখোমুখি হয়েছে এমভি আব্দুল্লাহ। এসআর শিপিং লিমিটেডের মূল কোম্পানি কেএসআরএম গ্রুপ উভয় জাহাজের মালিক। অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলা যায়, সোমালি জলদস্যুদের সম্পর্কে শিপিং কোম্পানির পর্যাপ্ত জানাশোনা রয়েছে।
এমভি জাহান মনির বিষয়ে অভিজ্ঞতা থাকার কারণে আমি বিশ্বাস করি, জাহাজের মালিকপক্ষ এই কঠিন পরিস্থিতি উতরানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে সঠিক অবস্থানে রয়েছে।
এ নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ায় কিছু ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ে, এবং আমাদের নিউজ চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত খবরকেও অসত্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ভবিষ্যতের যেকোনো উদ্ধার অভিযান এবং বিদেশি বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্রে জাহাজ মালিকদের সঙ্গে সমন্বয় করা উচিত।
জাহাজের ক্রুরা একটি বার্তা পাঠিয়েছিল যাতে লেখা ছিল: ‘‘এমভি আবদুল্লাহ। সোমালিয়ায় জলদস্যুরা আক্রমণ করেছে, দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। তাদের কাছে বন্দুক আছে। আমাদের উপর হামলা হয়েছে।’’
আসিফুর রহমান নামে একজন ক্রু সদস্য ফেসবুকে পোস্ট করেছেন যে, জাহাজটি ‘‘সোমালিয়ান জলদস্যুদের দ্বারা হামলার শিকার হয়েছে, এবং একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন যেখানে জলদস্যুদের জাহাজে উঠতে দেখা গেছে।
প্রায় ৫০ জনের সোমালি জলদস্যুর একটি দল গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে ২৩ জন ক্রুসহ বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ হাইজ্যাক করে।
অ্যামব্রে নামে একটি সামুদ্রিক নিরাপত্তা সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, একদল সশস্ত্র ব্যক্তি জাহাজটির দখল নিয়েছে। নিরাপত্তা সংস্থাটি দাবি করেছে, ঘটনাটি সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে প্রায় ৬০০ নটিক্যাল মাইল (১ হাজার ১১১ কিলোমিটার) পূর্বে ভারত মহাসাগরে ঘটেছে।
ছিনতাইকারীরা জলদস্যু- এমনটা ধরে নিলে পাঠকদের বিভ্রান্ত করা হবে। তারা সু-প্রশিক্ষিত ন্যাভিগেটর এবং ব্যবসায়িক ব্যক্তি- যারা সামুদ্রিক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বোঝে। তারা খুব দ্রুত এবং নিরাপদ উপায়ে মুক্তিপণ চায়। তারা ঠিকভাবেই জানে টাকার উৎস কোথায়? জাহাজের পি অ্যান্ড আই ক্ষতিপূরণকারী ক্লাবকে (বীমাকারী) জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং আলোচনা শুরু করতে হবে। তবে অবশ্যই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিচালনা করতে হবে।
পান্টল্যান্ড মেরিটাইম পুলিশ ফোর্স (পিএমপিএফ) কিছু ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে- এমন খবরের বিষয়ে আস্থা রাখা নাও যেতে পারে। পিএমপিএফ হলো একটি সুসজ্জিত ইউনিট, যা দক্ষিণ আফ্রিকার আধা-সামরিক ভাড়াটেদের দ্বারা প্রশিক্ষিত এবং যারা ব্যক্তিগতভাবে পান্টল্যান্ডের প্রতিষ্ঠিত সরকারের প্রতি অনুগত, তবে তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক ইস্যু রয়েছে।
এরই মধ্যে জলদস্যুদের সঙ্গে বাংলাদেশি ক্রুদের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এমন স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে আমাদের গণমাধ্যম ও সরকারকে সতর্কতার সঙ্গে অগ্রসর হতে হবে। রমজান মাস হওয়ায় এবং জলদস্যুরা মুসলমান হওয়ায় সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে কিছুটা ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে এবং দেখতে হবে পরবর্তীতে কী হয়।
লেখক যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত একটি মেরিটাইম-সম্পর্কিত ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, বিশ্বব্যাপী যার শাখা রয়েছে। তিনি বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএএএ) সভাপতি।
source : jugantor