পুলিশ ও এনডিসিতে অতিরিক্ত সামরিক এবং বেসামরিক ভারতীয় উপদেষ্টা আনার প্রস্তাব
নিজস্ব প্রতিনিধি
গত এক যুগেরও বেশি সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পুলিশে ভারতপন্থীদের আধিপত্য বিস্তার লাভ করেছে। এই দুই বাহিনীসহ প্রশাসনে ভারতপন্থিদের প্রভাবের বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট। সবাই নিজেদের মধ্যে এনিয়ে আলোচনা করলেও প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ। অবশ্য বাংলাদেশের বাইরে বসবাসকারী সাবেক কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা এরই মধ্যে ভারতীয়করণ নিয়ে মুখ খুলেছেন। তবে, প্রবাসে থাকা সেনা কর্মকর্তাদের বক্তব্যে সেনাবাহিনী ও পুলিশে ভারতের আধিপত্যের কথা উঠে আসলেও শেখ হাসিনার সরকার তাতে বিশেষ পাত্তা দিচ্ছে না। উল্টা বরং অতি সম্প্রতি ভারতপন্থি হিসাবে পরিচিত সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ এবং গুম, খুনের দায়ে অভিযুক্ত ব্রিগেডিয়ার জিয়াউল আহসানসহ ১১৬ জন সেনাবাহিনীর সদস্যকে পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।
অবসরে যাওয়া সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমান সেনাপ্রধান সরাসরি ভারতের সমর্থন পেয়েই এই পদে আসীন হয়েছেন। সেনাপ্রধানকে তিনি ‘ট্র্যাশ’ বলেও অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে গত একযুগে ভারতীয়করণ বেড়েছে। সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ভারতপন্থী সেনা কর্মকর্তাদেরই পদায়ন করা হচ্ছে। এমনকি সীমান্ত রক্ষায় নিয়োজিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর গুরুত্বপূর্ণ পদ গুলোতে ভারতপন্থি ও আওয়ামী লীগের কট্টর সমর্থক সেনা কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হচ্ছে । এসব সেনা কর্মকর্তাদের ভারতের সুপারিশেই সেসব জায়গায় বসানো হয় বলে জানান অবসরপ্রাপ্ত ওই কর্মকর্তা।
২০০১ সালে রৌমারি সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এর সাথে বিলুপ্ত হওয়া বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর)-এর (বর্তমানে বিজিবি) গুলি বিনিময়ের উদাহরণ টেনে এই কর্মকর্তা বলেন, সেই বছরের এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে বিডিআর ও ভারতের বিএসএফ এর মধ্যে রীতিমত যুদ্ধ হয়। ক্ষণস্থায়ী এই যুদ্ধের ঘটনায় ব্যাপক হতাহতের মুখোমুখি হয়েছিলো ভারতের বাহিনী। বলা হয়ে থাকে বিএসএফ-এর পোশাক পড়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশের রৌমারিতে বিডিআর ক্যাম্প দখলের জন্য আক্রমণ চালিয়েছিল। কিন্তু ওই যুদ্ধে বিডিআর অসীম সাহসিকতার সাথে মোকাবেলা করে বিএসএফকে। সেই বছর ১৫ এবং ১৬ এপ্রিল সিলেট সীমান্তে পদুয়ায় এবং ১৮ এপ্রিল কুড়িগ্রামের রৌমারী এবং ১৯ এপ্রিল ফের পদুয়া সীমান্তে অনুষ্ঠিত যুদ্ধে আক্রমণকারী ভারতীয় বিএসএফ সোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। এই তিনটি যুদ্ধেই বাংলাদেশের তৎকালীন বিডিআরের সেনারা বিজয় অর্জন করেন। অথচ এখন বিএসএফ পাখির মতো গুলি কওে বাংলাদেশীদেও হত্যা করলেও বিজিবিকে নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। উল্টো ভারতীয় হিন্দুদেও রাখিবন্ধন উৎসবে যোগ দিয়ে ভারতীয় মেয়েদর হাত থেকে রাখি পরে তাদের ভাই বনে যান বিজিবি সদস্যরা।
ভারতের প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এমন নতজানু অবস্থানের মাঝেই এই বাহিনীকে ভারতীয়করণ নিয়ে নতুন এক গুঞ্জন উঠেছে ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে ও বাইরে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মিলিটারি স্টাফ কলেজে চিফ ইনস্ট্রাকর (সিআই) পদে ভারত তাদের দেশের সেনাকে পদায়ন করার তদবির করছে।
এছাড়া ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজেও (এনডিসি) একজন করে ভারতীয় সেনা অফিসার পদায়ন করার তদবির করছে ভারত। যদিও নিরপেক্ষ সোর্স থেকে এ তথ্যের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
এই সূত্রের খবরে আরো জানা গেছে, মিলিটারি স্টাফ কলেজে চিফ ইনস্ট্রাকর (সিআই) পদে সাধারণত একজন বৃটিশ মিলিটারী অফিসার থাকেন। সেই জায়গায় নিজেদের আধিপত্য চাচ্ছে ভারত। স্টাফ কলেজে এবং এনডিসিতে ট্রেনিং এডভাইজার নাম দিয়ে তারা ভারতীয় সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে আসার প্রস্তাব দিয়েছে।
এছাড়া, এনডিসিতে অতিরিক্ত সামরিক এবং বেসামরিক উপদেষ্টা ভারত থেকে আনার প্রস্তাবও দিয়েছে আধিপত্যবাদী এই দেশটি।
সূত্রের খবরে বলা হয়, ভারতের এমন প্রস্তাবের খবর ছড়িয়ে পড়লে ভারতীয়করণের উদ্যোগের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর কিছু অফিসারদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
সেনা সূত্রের খবরে বলা হয়, বর্তমান লেফটেনেন্ট জেনারেলরা বিদায় নিলে যারা নতুন প্রমোশন পাবেন, তাদেরকে রাজী করিয়ে এসব জায়গায় ভারতীয় সেনা কর্মকর্তাদের এডভাইজার হিসেবে আনার প্রস্তাব দেয়া হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশেও বেসামরিক এডভাইজার দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত- এমন খবর রয়েছে এখন পুলিশ বাহিনীতে।
সূত্রের খবরে বলা হয়, বর্তমান পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের ভারতের প্রতি নজিরবিহীন সমর্থন রয়েছে। ফলে তিনি ভারতের প্রস্তাব বাস্তবায়নে তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সামরিক বিশ্লেষক বলেন, বাংলাদেশের এই দুই বাহিনীতে ভারতের এমন কূট পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সরাসরি হস্তপক্ষেপে ভারতের কোনো বাধা থাকবে না। দেশের সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তা সম্পুর্ণভাবে ভারতের অধীনে চলে যাবে।