মুদ্রিত সংস্করণ
রংপুর ব্যুরো
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাসায় হামলা নিয়ে গত শনিবার মধ্যরাতে আড়াই ঘণ্টাব্যাপী সেনাবাহিনী কর্তৃক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বিএনপি নেতাদের জেরা করার বিষয় নিয়ে সেনাবাহিনীর প্রতি বিভিন্ন প্রশ্ন রেখে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন এনসিপি উত্তর আঞ্চলীয় মুখ্যসংগঠক সারজিস আলম। রংপুর ও আওয়ামী লীগের বি-টিম জাতীয় পার্টি ইস্যু! শিরোনামে ওই স্ট্যাটাসে ২০ মিনিটে ৮ হাজার লাইক, ১০০০ কমেন্ট এবং ১০৬টি শেয়ার হয়েছে।
গতকাল রোববার বিকেল ৫:৫৫ মিনিটে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পোস্টে সারজিস আলম লেখেন, ‘৩ দিন আগে রংপুরে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনীত অবৈধ নির্বাচনের একাধিকবারের অবৈধ মেয়র মোস্তফা আবার মেয়র পদে ফিরে আসার জন্য আওয়ামী লীগের পোষ্য বি-টিম জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদেরকে সাথে নিয়ে রংপুর শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে!’
এরপর তিনি লেখেন, ‘ আওয়ামী লীগ ও ভারতের সাথে নেগোসিয়েশন করে সাময়িক বিরোধিতার ভান ধরে বিরোধী দলের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেছে জাতীয় পার্টি। এমনকি বিএনপি-জামায়াত যখন প্রহসনের অবৈধ নির্বাচন থেকে দূরে থেকেছে, হাজারো অন্যায়, জুলুম, অত্যাচার সহ্য করেছে, তখন এ জাতীয় পার্টি বিরোধী দল সেজে আওয়ামী লীগকে সরকারি দলের বৈধতা দেয়ার অপচেষ্টা করেছে! সব সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেছে!’ সারজিস আলম লেখেন, ‘২ দিন আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের রংপুরে গিয়ে আবার স্থানীয় জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদেরকে সাথে নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা শুরু করেছে!’
সারজিস লেখেন,‘অতঃপর যখন রংপুরের ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য একসাথে জিএম কাদের ও জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে অহিংস বিক্ষোভ মিছিল করে তখন জাতীয় পার্টি সন্ত্রাসীরা সেই বিক্ষোভ মিছিলে প্রথম হামলা চালায়! এরপর জি এম কাদেরের বাড়িতে একটি বাইক পোড়ানোর ঘটনা দেখা যায়।’
এরপর সেনাবাহিনীর ভূমিকা প্রসঙ্গে সারজিস লেখেন, ‘এ বাইক পোড়ানোর মব বা ভ্যান্ডালিজমকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে রংপুরের সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্টদেরকে খুঁজতে নয় মাসের সর্বোচ্চ বড় অপারেশনের জন্য মাঠে নামে! মহানগর বিএনপির সভাপতি, সেক্রেটারি এবং জেলা ও মহানগরের বৈষম্যবিরোধীর আহ্বায়ককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করা হতেই পারে এটা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।’
সারজিস আলম সেনাবাহিনীকে প্রশ্ন করে লেখেন, ‘কিন্তু যে ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে সর্বশেষ এ ঘটনা ঘটেছে সেই ঘটনাগুলোর কারণ কিংবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে না খুঁজে সর্বশেষ বিষয় নিয়ে আদিখ্যেতা দেখানো শুরু হয়। জিএম কাদেরের বাড়ির পুরনো বাইক আর সামান্য আগুন নিয়ে যাদের এত চিন্তা, তারা বিগত ৯ মাসে আওয়ামী সন্ত্রাসী খুনিদেরকে ধরতে কয়টা অভিযান চালিয়েছে? কতজনকে গ্রেফতার করেছে?’
সারজিস আলম আরো প্রশ্ন করে লেখেন, ‘যে মোস্তফা একাধিক অবৈধ নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়ে তার পরিবারের সদস্য ও সাঙ্গপাঙ্গদেরকে নিয়ে রংপুরে লুটপাট চালিয়েছে, কোটি টাকা দুর্নীতির আখড়া বানিয়েছে, সিটি করপোরেশনকে ডাকাতির ক্ষেত্র বানিয়েছে সেই মেয়র মোস্তফাকে ধরতে কয়দিন অপারেশন চালানো হয়েছে? ৯ মাসে রংপুরের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী দখলদারদের থেকে জনগণের ন্যায্যসম্পদ অর্থ উদ্ধারের জন্য কয়টি অভিযান চালানো হয়েছে?
সারজিস আরো প্রশ্ন করে লেখেন, ‘জাতীয় পার্টির যে সন্ত্রাসীরা অবৈধ মেয়র মোস্তফার নেতৃত্বে প্রথম ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যের বিক্ষোভ মিছিলে হামলা চালিয়েছে, যে জিএম কাদের এলাকায় সন্ত্রাসীদেরকে নিয়ে বৈঠক করে পরিস্থিতিকে উসকে দিয়েছে, তাদেরকে ধরতে কয়টি অভিযান চালানো হয়েছে?’
ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে সেনাবাহিনীর অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি জানিয়ে এরপর সারজিস আলম লেখেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে আমরা এখনো যথেষ্ট সম্মানের জায়গায় রাখি। কিন্তু ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে তাদেরও স্পষ্ট অবস্থান এবং কার্যক্রম আমরা দেখতে চাই। নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের সন্ত্রাসীরা তাদেরই বি-টিম জাতীয় পার্টি রূপে ফিরে আসার চেষ্টা করলে সেই চেষ্টাকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করা হবে।’