নয়া দিগন্ত অনলাইন
সুন্দরবনের কোথাও আর দস্যুতা করতে দেয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেন, ‘সুন্দরবনের জলে, স্থলে, বনে কোথাও আর দস্যুতা করতে দেয়া হবে না। দস্যুতা রোধে র্যাবের স্থায়ী ক্যাম্প নির্মাণ করা হবে। প্রয়োজনে কোস্টগার্ডসহ অন্য বাহিনীকে আরো শক্তিশালী করা হবে।’
সোমবার দুপুরে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে আয়োজিত দস্যুমুক্ত সুন্দরবন দিবসের তৃতীয় বর্ষপূর্তি ও আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সাবেক দস্যুদের পুনর্বাসন সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
দস্যুতা ছেড়ে যারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন তাদের নামে থাকা ধর্ষণ ও খুনের মামলা ছাড়া অন্য সব মামলা পর্যায়ক্রমে তুলে নেয়ার আশ্বাস দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সাবেক দস্যুদের পুনর্বাসন করা হয়েছ। যদি কেউ আবার বিপথে যান, তবে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীও বসে থাকবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমি এখানে (রামপালে) এসে শুনতে পেয়েছি, কেউ কেউ আবার বিপথে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, কিন্তু বিশ্বাস করিনি। আমি জানি, আপনারা কষ্ট করছেন। আপনাদের জীবিকার জন্য সরকার আপনাদের পাশে আছে, আমরা আপনাদের ভুলিনি।’
মন্ত্রী বলেন, সুন্দরবন অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এখানে মাছ ও মধু আহরণ করা হয়। এগুলোকে টার্গেট করে গড়ে ওঠে জলদস্যু-বনদস্যু বাহিনী। সুন্দরবন দস্যুমুক্ত করা হয়েছে, এটাকে ধরে রাখতে হবে। এ ধারা অব্যাহত এবং সুসংহত রাখতে সেখানে র্যাবের একটি স্থায়ী ক্যাম্প করা হবে। এখানে ডাকাতি হতে দেয়া হবে না। সুন্দরবনে এখন শান্তি প্রবাহমান। এখানে আগে জেলে-মৌয়ালদের আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করাসহ নানা ধরণের অপরাধ করা হতো।
আসাদুজ্জামান বলেন, আত্মসমর্পণকারী দস্যু ও তাদের পরিবারের কথা চিন্তা করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা যেন স্বভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন, সেজন্য নগদ অর্থ, ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, নৌকা ও জাল দেয়া হয়েছে। তবে, মনে রাখতে হবে এখানেই শেষ নয়। যাদের পুনর্বাসনের আওতায় আনা হয়েছে, তাদের বিষয়ে নিবিড় নজরদারিও থাকবে। তারা যদি পুনরায় একই ধরনের অপরাধ করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, যেসব দস্যু আত্মসমর্পণ করেছেন তাদের মামলাগুলো কীভাবে প্রত্যাহার করা যায় সে জন্য পাবলিক প্রসিকিউটিরসহ সংশ্লিষ্ট দফতর বা বিভাগের সাথে আমরা কাজ করছি। আশ করছি শিগগিরই মামলা তুলে নেয়া বা প্রত্যাহার করা যাবে।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে যেমন সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক নির্মূলের কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ঠিক তেমনই সুন্দরবনকে নিরাপদ রাখতে সব ধরনের কর্মকাণ্ডও অব্যাহত রাখা হবে।
দস্যুমুক্ত সুন্দরবনের তৃতীয় বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা ৩২টি জলদস্যু বাহিনীর ৩২৮ সদস্যকে ১০২টি ঘর, ৯০টি মুদি দোকান (মালামালসহ), ১২টি জাল ও মাছ ধরার নৌকা, আটটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা এবং ২২৮টি গবাদিপশু (বাছুরসহ) হস্তান্তর করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। এই বনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে রয়েছে উপকূলবাসীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের জীবন-জীবিকা। জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে ২০১৮ সালের আগে তাদের বড় আতঙ্কের নাম ছিল সুন্দরবনের জলদস্যু-বনদুস্য।
২০১৬ সালের ৩১ মে থেকে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর পর্যন্ত সুন্দরবনের ৩২টি বাহিনীর ৩২৮ জন দস্যু স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দিয়ে আত্নসমর্পণ করে। এসময় তারা ৪৬২টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২২ হাজার ৫০৪ রাউন্ড গোলাবারুদ জমা দেয়।
২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করেন। সেই হিসেবে ১ নভেম্বর ছিল দস্যুমুক্ত সুন্দরবনের তৃতীয় বর্ষপূর্তি।
র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো: শামসুল হক টুকু, সদস্য পীর ফজলুর রহমান, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ, র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল কে এম আজাদ প্রমুখ।
সূত্র : ইউএনবি