সীমান্ত থমথমে আসছে গুলির শব্দও

মিয়ানমারে চলমান সংঘাতে সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি এখনো থমথমে। মিয়ানমার থেকে  সারা দিনই ভেসে আসছে মুহুর্মুহু গুলির শব্দ। বাংলাদেশে আসা মর্টারশেল উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছে। গুলিতে কোনো হতাহতের খবর না আসলেও একটি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসব কারণে আতঙ্কে রয়েছেন সীমান্তঘেঁষা মানুষ। ইতিমধ্যে অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন। যারা সীমান্তে অবস্থান করছেন তাদের কেউ ভয়ে ঘর হতে বের হচ্ছেন না। শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছেন না। বন্ধ রয়েছে চাষাবাদ। সবখানেই থমথমে পরিস্থিতি। আতঙ্ক বিরাজ করছে পুরো সীমান্ত এলাকায়।

মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের চলতে থাকা অভ্যন্তরীণ সংঘাতের মধ্যে গতকাল কক্সবাজারের উখিয়ার থাইংখালীর রহমতের বিল এলাকায় অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। লাশটি আগের দিন রাত থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত মাটিতে পড়েছিল। রাতে উদ্ধার না করা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে সীমান্তে সংঘাত চলছিল। বিজিবি’র পরামর্শে অন্ধকারে লাশটি উদ্ধার না করে পরদিন দিনের বেলায় উদ্ধার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই লাশ উদ্ধার করা হয় গতকাল দুপুরে। এদিকে ওই এলাকা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশের সীমান্তে আরেকটি লাশ পড়ে আছে বলেও জানায় পুলিশ। তবে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেই লাশটি উদ্ধার করা কিংবা পরিচয় শনাক্তের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

মিয়ানমার থেকে আগের দিন রাতেও বিছিন্নভাবে গোলাগুলি ও মর্টারশেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। ভোরে কিছুটা সময় বন্ধ ছিল গোলাগুলি। সকাল ১০টার পর থেকেই সীমান্ত এলাকায় মুহুর্মুহু গুলির শব্দ ভেসে আসে। দুপুরে ১টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসার পর গুলিবর্ষণ বাড়তে থাকে। সঙ্গে ভেসে আসে মর্টারশেল বিস্ফোরণের শব্দ। বিকাল ৩টায় পুলিশ উখিয়া ৩৪ পালংখালী বিওপি থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়। থেমে থেমে অবিরত চলতে থাকা গুলি আর মর্টারশেলের শব্দে আতঙ্কে ছিলেন সীমান্ত এলাকার আশপাশের বাসিন্দারা। সীমান্তের উত্তেজনাকর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজিবি’র পাহারা জোরদার রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতাও বাড়ানো হয়।

দুপুরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি তুমব্রু সীমান্ত এলাকা থেকে অক্ষত অবস্থায় মিয়ানমার থেকে ছোড়া  একটি আগ্নেয়াস্ত্র (আরপিজি-৭) উদ্ধার করে বডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি। তুমব্রু সীমান্তের ৩৪ নাম্বার পিলার থেকে এই আগ্নেয়াস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়রা জানিয়েছে, জমি থেকে এক নারী সেটি হাতে নিয়ে আসে। খবর পেয়ে আগ্নেয়াস্ত্রটি উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে রেখে দেয় বিজিবি। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাজেয়া বেগম বলেন, সকালে আমি তুমব্রু সীমান্তের পাশে ধানের জমিতে কাজ করতে গিয়েছিলাম। তখন সীমান্তঘেঁষে ৩৪ নাম্বার পিলারের স্থানে এটি দেখতে পেয়ে বাড়িতে নিয়ে আসি। ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, রাজেয়া নামে এক নারী অবিস্ফোরিত আরপিজি (৭) আগ্নেয়াস্ত্র হাতে করে নিয়ে এসেছিল। বিজিবি খবর পেয়ে তা উদ্ধার করেছে। এনিয়ে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি অবিস্ফোরিত আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে বিজিবি। এই আগ্নেয়াস্ত্রগুলো বিজিপি সদস্যরা পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় ফেলে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ি তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ (আইসি) মাহাফুজ ইমতিয়াজ ভূঁইয়া বলেন, ঘুমধুম ইউনিয়নের নয়াপাড়া এলাকায় পাওয়া অবিস্ফোরিত মর্টারশেলটি বিজিবি উদ্ধার করে নিয়ে গেছে।

কয়েকদিন ধরেই অস্থিরতা তৈরি হয় বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্ত এলাকায়। তবে সেই অস্থিরতা কিছুটা কমেছে। এতে স্থানীয় কেউ কেউ নিরাপদ আশ্রয় থেকে নিজ বাড়িতে ফিরে এসেছেন। তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গোলাগুলির শব্দ এখন কিছুটা কমেছে। কিন্তু তারপরও তাদের মধ্যে ভয় কাজ করছে। মাঝেমধ্যে মর্টারশেল উদ্ধারের ঘটনায় ভীত হচ্ছেন তারা। স্থানীয় এক বাসিন্দা মানবজমিনকে বলেন, এখানে লাগাতার গুলির শব্দ হচ্ছে। বৃষ্টি পড়ার মতো গুলি হচ্ছে। বাংলাদেশেও অনেক গুলি পড়ছে। অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা চাষাবাদ করতে যেতে পারছি না। ঘরবাড়ির মানুষ সরে বিভিন্ন জায়গায় চলে গেছে। আমরা খুব আতঙ্কে আছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীরা যাচ্ছে না। মাদ্রাসায় বিদায় অনুষ্ঠান হবে সেখানে ছাত্রছাত্রী পাচ্ছি না। সাইফুল ইসলাম বলেন, তিন-চারদিন ধরে এখানে যে গোলাগুলি হচ্ছে তা জীবনেও দেখি নাই। ধানক্ষেতে মর্টারশেল পড়ে মাটি গর্ত হয়ে গিয়েছে। রাতেও গোলাগুলি হয়েছে। সকালেও গোলাগুলি হয়েছে। আমরা আতঙ্কে আছি। রাতে ঘুম হচ্ছে না। শিশুরা ভয়ে কান্না করছে।

manabzamin