সিলেট বিএনপির সমাবেশের টুকিটাকি

  • এ টি এম তুরাব, সিলেট ব্যুরো
  •  ১৯ নভেম্বর ২০২২, ২১:০০, আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২২, ২২:৪০
সিলেট বিএনপির গণসমাবেশ। – ছবি : সংগৃহীত

সিলেট বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠ লোকে লোকারণ্য ছিল। শুধু আলিয়া মাদরাসা মাঠ নয়, চারদিকের রাস্তায়ও হাজার হাজার মানুষ অবস্থান নেন। বিভাগীয় গণসমাবেশ নিয়ে নয়া দিগন্তের এ টুকিটাকি।

মঞ্চের পাশে সাইফুর-ইলিয়াসের ছবি : গণসমাবেশের মঞ্চের পাশেই বাঁশ দিয়ে অস্থায়ীভাবে সাঁটানো হয়েছে সাবেক অর্ধমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ও নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর ছবি। নেতাকর্মীরা বলেন, সিলেটে বিএনপির রাজনীতিতে তারকা হিসেবে খ্যাত এ দু‘নেতাকে এভাবে গণসমাবেশে স্মরণ করার বিষয়টি প্রশংসনীয়। বিএনপি যে তাদের মতো নেতার অবদান ভুলে যায়নি, এটা তারই প্রমাণ।

সেলফি তুলতে ঠেলাঠেলি : সমাবেশে অংশ নিতে ঢাকা থেকে আসা দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনের সাথে সেলফি তুলতে নেতাকর্মীরা জটলা করতে দেখা যায়। ছবি তুলতে অনেকে মঞ্চে উঠতে চান।

ধর্মঘটে ভোগান্তি : সিলেটে বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে পরিবহন ধর্মঘটে সকাল থেকে নগরে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ ছিল। এতে নগরের সাধারণ মানুষসহ সমাবেশে আসা নেতাকর্মীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। সড়কে অল্প কিছু অটোরিকশা ও রিকশা চলাচল করলেও অন্য দিনের তুলনায় ভাড়া বেশি নেয়া হচ্ছে বলে সাধারণ যাত্রীরা অভিযোগ করছেন।

দিনভর ছিল হরতালের আবহ : সিলেটে বিএনপির গণসমাবেশ ও পরিবহন ধর্মঘটের প্রভাবে সিলেট নগরজুড়ে দিনভর অনেকটা হরতালের আবহ বিরাজ করেছি। নগরের সড়কগুলোতে যানচলাচল ছিল না বললেই চলে। বরং সড়কগুলো ছিল পথচারীদের দখলে। যারা জরুরি প্রয়োজনে বেরিয়েছিলেন তারা গন্তব্যে ছুটছেন। আর বাকিরা ছিলেন আলিয়া মাদরাসামুখী। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নগরের ব্যস্ততম আম্বরখানা, জিন্দাবাজার, বারুতখানা, রিকাবীবাজার, কোর্টপয়েন্ট, বন্দরবাজার, সোবহানীঘাটসহ দক্ষিণ সুরমা এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

মিছিলের নগরী : সমাবেশে যোগদিতে নগরের বিভিন্ন স্থান থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করা হয়। এ সময় মিছিল আর স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে বিভাগীয় গণসমাবেশস্থল সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠসহ আশপাশ এলাকা। সকাল থেকে নগরের মদিনা মার্কেট, বাগবাড়ি, সুবিদবাজার, লামাবাজার, উপশহর, সোবহানীঘাট, নাইওরপুল, কুমারপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় খণ্ড খণ্ড মিছিল করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। ব্যান্ড বাজিয়ে ও হাতে ধানের ছড়া নিয়ে অনেককে মিছিলে অংশ নিতে দেখা গেছে। এ সময় অনেক নেতাকর্মী নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীন আগামী জাতীয় নির্বাচনের দাবিও স্লোগান দিয়ে জানান। দেখা গেছে মিছিলে অংশগ্রহণকারী অনেকে বিভিন্ন নেতার ছবিসংবলিত টি-শার্ট পরে এসেছেন। কোনো কোনো মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের মাথায় ছিল নেতাদের সৌজন্যে পাওয়া রংবেরঙের ক্যাপ।

ছাত্রলীগের শোডাউন : সমাবেশে প্রধান অতিথি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য শেষ হওয়ার সাথে সাথে ছাত্রলীগ মোটরসাইকেল শোডাউন দেয়। ২০ থেকে ২৫টি মোটরসাইকেল নিয়ে শোডাউনটি সমাবেশস্থল চৌহাট্টা এলাকা অতিক্রম করে শোডাউনটি বন্দরবাজার হয়ে খাসদবীর গিয়ে শেষ হয়। এ সময় পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

পকেট চোর : বিএনপির সমাবেশস্থলে কয়েক কর্মী-সমর্থকের মোবাইল ও মানিব্যাগ চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেলা পৌনে ১টার দিকে সমাবেশস্থলের উত্তর প্রান্তে বিএনপির এক কর্মীর পকেট কাটতে গিয়ে পকেটমারকে পাকড়াও করে উপস্থিত জনতা। পরে উত্তম-মধ্যম দিয়ে চোরকে ছেড়ে দেয়া হয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি : বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে নগরের প্রবেশমুখসহ মোড়ে মোড়ে তল্লাশিচৌকি বসিয়েছে পুলিশ। তবে এসব তল্লাশিচৌকি থেকে কাউকে নগরে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়নি। সকাল থেকে নগরের প্রবেশমুখ চণ্ডিপুল, হুমায়ুন রশীদ চত্বরসহ শেখঘাট মোড়, আম্বরখানা মোড়, জিন্দাবাজার মোড়, বারুতখানা মোড়, সমাবেশস্থলের পাশের চৌহাট্টা মোড়ে পুলিশের তল্লাশিচৌকি দেখা গেছে। দায়িত্বরত এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সকাল ৬টা থেকে জিন্দাবাজার পয়েন্টে পুলিশের অন্য সদস্যদের নিয়ে দায়িত্ব পালন করছি। সমাবেশ শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত দায়িত্ব পালনের কথা রয়েছে।

আ‘লীগের কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে : দুই-তিনটা সমাবেশ করে মির্জা ফখরুলের ভাবখানা এমন যে ক্ষমতায় এসেই গেছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, তিনটা সমাবেশ করে ক্ষমতায় চলে গেছি বলে মনে করছি না। আমরা মনে করেছি সমাবেশ করায় আপনাদের কম্পন শুরু হয়ে গেছে, কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে। যে কারণে সমাবেশগুলো বন্ধ করার জন্য আপনারা পরিবহন ধর্মঘট করাচ্ছেন।

পুলিশ রেখে খেলতে আসেন : গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ওবায়েদুল কাদের বলছেন খেলা হবে। কিন্তু দরজা বন্ধ করে ঘরের মধ্যে যে খেলা এটা ছাড়া আর খেলা তিনি জানেন না। বিএনপি আনাড়ি খেলোয়াড়দের সাথে খেলে না। খেলা শিখে আসেন। নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে খেলেন। শেখ হাসিনাও জামানত হারাবেন।

এছাড়া দলটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য কলিম উদ্দিন মিলন বিএনপিও খেলতে চায়’ বলে মন্তব্য করে তিনি বক্তৃতায় বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব কথায় কথায় বলেন, খেলা হবে, খেলা হবে। আমরাও বলতে চাই, খেলা হবে। আপনারা পুলিশকে রেখে খেলতে আসেন। দুই ঘণ্টাও টিকতে পারবেন না। বিএনপি এখনো খেলা শুরু করেনি। বিএনপি খেলতে শুরু করলে দেশে মুজিব কোট পরা কোনো লোক আর থাকবে না।

এখন আর কা-কা করবো না : মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস বক্তৃতায় বলেন,‘এখন আর আমরা কা-কা করবো না। এখন আমরা না না করব। এই না না হচ্ছে এই অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে। এই দল গুম-খুনের রাজনীতি করছে।

ক্ষমতা থেকে টেনে নামানো হবে : বিএনপির কেন্দ্রীয় নেত্রী শাম্মি আক্তার বক্তৃতায় বলেন, ১০ ডিসেম্বর আমরা ঢাকা শহরে আসছি। কোনো ধানাইপানাই চলবে না। ক্ষমতা ছাড়েন। তা না হলে ক্ষমতা থেকে টেনে নামানো হবে।