সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশী বিলিয়নেয়ার বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীর শিল্পপ্রেম

bonikbarta.net 12 June 2023

বণিক বার্তা ডেস্ক


মুহাম্মদ আজিজ খান ও তার পেছনে শাহাবুদ্দিন আহমেদের আঁকা একটি চিত্রকর্ম ছবি: সিএনএ/কেলভিন চিয়া


মুহাম্মদ আজিজ খান বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠাতা। দেশের সবচেয়ে সফল ব্যবসায়ীদের একজন তিনি। পাশাপাশি আরো একটি পরিচয় আছে। শিল্পকলা সম্পর্কে সমঝদার মানুষ তিনি।

মুহাম্মদ আজিজ খান বিচক্ষণ মানুষ। সিঙ্গাপুরে তার অফিসে বসে প্রথম যে বিষয়টি নিয়ে আলাপ হয়, সেটি হলো প্রযুক্তির উদ্ভাবন। চ্যাটজিপিটি প্রসঙ্গে রসিকতা করলেন তিনি, ‘বেশ কৌতূহলবশেই চ্যাটজিপিটিকে একটা প্রশ্ন করেছিলাম, কীভাবে জীবনে সফল হওয়া যায়? প্রশ্নটা প্রায়ই তরুণরা আমাকে জিজ্ঞাসা করে। চ্যাটজিপিটি আমাকে সে জবাবটাই দিল, যেটা আমি গত ১০-১৫ বছর ধরে দিয়ে আসছি—প্রচুর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়।’

আজিজ খানের ব্যক্তিগত শিল্প সংগ্রহ বেশুমার। অফিস ভবনের প্রতি কক্ষের দেয়ালে তার ছাপ স্পষ্ট। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছেন তিনি। প্রতিষ্ঠা করেছেন দেশের প্রথম ও বৃহত্তম বেসরকারি বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠান, সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল। কোম্পানিটির প্রধান কার্যালয় সিঙ্গাপুর। মূল প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপের কর্মপরিধি বিস্তৃত নানা দিকে। জ্বালানি আর বিদ্যুৎ খাতের বাইরে রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিপিং, বাণিজ্য, আবাসন ও বন্দরও। একটা শিল্পকর্মের দিকে চোখ পড়তে না পড়তেই আটকে গেলাম। চিত্রকর্মটি বাংলাদেশী শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের আঁকা, নাম ঘোড়দৌড়। ছবিতে একজন ব্যক্তি ঘোড়াকে ধরে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। খান ব্যাখ্যা করে দিলেন, ‘শিল্পীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এখানে ঘোড়া হলো সময় আর আরোহী ব্যক্তিটি হলো মানুষের আকাঙ্ক্ষা। মানুষ সব সময়ই সময়কে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। কিন্তু কখনই সফলতার মুখ দেখে না। কারণ তাকে ধরার চেয়েও দ্রুতগতিতে সামনে এগিয়ে যায় সময়।’

ডেস্কের ঠিক ওপরেই রয়েছে সিঙ্গাপুরের শতবর্ষী চিত্রকর লিম জে ফেংয়ের চিত্রকর্ম। আজিজ খান ব্যাখ্যা করলেন, ‘পেইন্টিংয়ে চল্লিশ বছর আগের পুরনো সিঙ্গাপুরকে তুলে ধরা হয়েছে। চিত্রকর্মে ঠাঁই পাওয়া এ নৌকাগুলোই বর্তমানে সিঙ্গাপুরকে পরিণত করেছে অন্যতম বন্দরনগরীতে।’ শিল্পকর্ম তার জন্য এক ধরনের অনুপ্রেরণা। অফিস থেকে ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ আধুনিক সিঙ্গাপুর দেখা যায়। যেন মনে করিয়ে দেয় ছোট শহরটি কতটুকুই না বদলে গেছে।

যুদ্ধ থেকে স্বোপার্জিত সফলতা

জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯৫৪ সালে। বেড়ে উঠেছেন নিজ দেশের অস্থির সময়ে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি তরুণ। ১৯৭১ সালের সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়েই ছড়িয়ে পড়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন। তার সর্বশেষ পরিণতি ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। আজিজ খান সে সময়ের স্মৃতিচারণ করেছেন, ‘যুদ্ধের সময় আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। কীভাবে মানুষ ঠাণ্ডা মাথায় অপর মানুষকে হত্যা করতে পারে? নিজের চোখে দেখেছি কীভাবে বন্ধু ও প্রতিবেশীকে কেবল ভিন্ন ভাষা এবং ভিন্ন দেশের হওয়ার কারণে গুলি করে হত্যা করা হলো।’ একবার গাড়ি চালাতে বের হয়ে পরপর দুটি গুলির শিকার হয়েছেন খান। সে কথাও তুলে ধরেছেন, ‘মিলিটারিরা গাড়িটা নিজেদের ব্যবহারের জন্য নিয়ে যেতে চেয়েছিল। আমি চেয়েছিলাম দ্রুত চালাতে। কিন্তু তারা গাড়িতে গুলি করে। ফলে আমি গাড়ি থামাই।’ খান চেয়েছিলেন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে। পিতার গ্রেফতার হওয়া ও মিলিটারির দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার জেরে তা হয়ে ওঠেনি। ‘যুদ্ধে বেঁচে থাকার মধ্য দিয়ে মানুষ শান্তিকামী হওয়ার শিক্ষা অর্জন করে। আমার বিশ্বাস আমি সেটা করতে পেরেছিলাম। কঠোর পরিশ্রম ছাড়াও ভালো স্কুলে পড়াশোনা করার সুবিধা পেয়েছি। বাবা-মা ভালো পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছিলেন। শৈশব ছিল দারুণ। এখন বাকি ছয় ভাই উচ্চশিক্ষিত ও ভালো মানুষ। খেলোয়াড় হিসেবেও ভালো ছিলাম। ব্যাটমিন্টন ও টেবিল টেনিস খেলতাম। চ্যাম্পিয়ন ছিলাম ১০০ মিটার দৌড়ে।’

খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। যুদ্ধের অভিজ্ঞতাই তার ভেতরে দেশকে নতুন করে গড়ে তোলার প্রেরণা তৈরি করে। ফলে মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি ব্যবসার দিকে মনোনিবেশ করেন। এক বন্ধুর সঙ্গে কাজ করার সুবাদে ভ্রমণ করেন সিঙ্গাপুর। বন্ধু তখন বাংলাদেশে প্লাস্টিক আমদানি করেন পাইকারিভাবে। তিনি নিজেও সার রফতানি শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে একটা কারখানা কিনে পলিভিনাইল ক্লোরাইডের জুতা তৈরি শুরু করেন। ব্যবসা পরিচালনার পথে খানকে বিভিন্ন বন্দরে অপেক্ষা করতে হতো। তার প্রধান কারণ ছিল বিদ্যুতের সংকট। বিষয়টি তাকে কয়েক দফা ভুগিয়েছে। ফলে এক সময় তিনি কর্তৃপক্ষকে জানালেন, ‘আমাকে একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করতে দিন। যাতে করে জাহাজকে আর বন্দরে অপেক্ষা করে থাকতে না হয়।’ ১৯৯৭ সালে খান প্রতিষ্ঠা করেন সামিট পাওয়ার। দেশের সর্ববৃহৎ স্বাধীন বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠান, যা বাংলাদেশের মোট বেসরকারি সক্ষমতার ১৯ শতাংশ ও সার্বিক সক্ষমতার ৮ শতাংশ সরবরাহ করে। মোট ১৮টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালিত হয় তার অধীনে। খান তার কোম্পানির কার্যালয় সিঙ্গাপুরে স্থানান্তর করেন ২০১৬ সালে। যদিও তিনি ১৯৮৮ সাল থেকেই সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা। গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ব্যবসায়ী হিসেবে নাম পোক্ত করেছেন। জনহিতৈষী হিসেবে রয়েছে সুনাম। বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক কল্যাণে তিনি উদারহস্ত। ২০২২ সালের ফোর্বস ম্যাগাজিনে সিঙ্গাপুরের ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় খানের অবস্থান ছিল ৪২তম, সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৩০ কোটি ডলার। ব্যবসার আলাপ একপাশে সরিয়ে রাখলে তিনি তিন কন্যার পিতা, রয়েছে পাঁচজন নাতি-নাতনি। অফিসে বিভিন্ন শিল্পকর্মের বাইরেও নাতির ছবিও ঝোলানো।

শিল্প মানুষের আত্মার প্রতিচ্ছবি

কলেজে থাকতেই খান শিল্পের সঙ্গে পরিচিত হন। বিশেষ করে যখন বাংলাদেশী চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিনের পুত্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়। খান হাসতে হাসতে স্মরণ করলেন সে কথা, ‘আমি তখন কলেজে পড়ি। মাঝে মাঝে তাদের বাসায় বেড়াতে যেতাম। স্কুলের পাশে থাকায় দুপুরে ফ্রিতে কিছু খাওয়ার জন্য। আমি তার বাবাকে কাজ করতে দেখতাম চিত্রকর্মে। অভিভূত হতাম। তার সঙ্গে বসে থাকতাম। জিজ্ঞাসা করতাম চিত্রকর্ম সম্পর্কে। তার ছেলে অবশ্য পাশে বসে ছবি নিয়ে আগ্রহভরে জিজ্ঞাসা করত না।’

বর্তমানে খানের কাছে জয়নুল আবেদিনের বেশকিছু চিত্রকর্ম রয়েছে। সবচেয়ে দুর্দান্ত কাজটি হচ্ছে বিদ্রোহী ষাঁড়। জলরঙে আঁকা ছবিটিতে একটা গরু খুঁটি থেকে পালানোর চেষ্টা করছে। তিনি বুঝিয়ে দেন ‘এটা দুর্দান্ত এক চিত্রকর্ম। কারণ এটা প্রতিনিধিত্ব করে আমাদের ভেতরে বসবাস করা স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে। তা যতটাই কঠিন হোক।’ আরো একটি চিত্রকর্ম নজরে পড়ে। জয়নুলের সেরা কর্ম ‘গুণটানা’। যেখানে একদল ব্যক্তিকে দেখা যায় কাঁধে মাছ ধরার জাল ধরা অবস্থায়। প্রতীকায়িত হয় বাংলাদেশের জেলে সম্প্রদায়ের কঠোর পরিশ্রম। খান সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল গ্যালারিতে ধার দেবেন চিত্রকর্ম। তিনি বিশ্বাস করেন, ‘শিল্প একজন মানুষের আত্মার প্রতিচ্ছবি। মানুষের সারা জীবনের কাজ। আমার নিজস্ব শিল্পকর্ম হয়েছে। তা হলো যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো আমি স্থাপন করেছি।’

শিল্পকে কোনো কোনো সংগ্রাহক সম্পদ হিসেবে গণ্য করেন। কিন্তু খান কোনো শিল্পকর্মই বিক্রি করেননি। ‘আমার শিল্পকর্মগুলো বিক্রির জন্য নয়। তিনি বিশ্বাস করেন, কোনো বিশেষ শিল্পীকে বাছাই করাটা স্পর্ধার পর্যায়েই পড়ে। তাদের শিল্পকর্মের দ্বারা অনুপ্রাণিত হওয়াই উত্তম। কম পরিচিত শিল্পীদের প্রতি তার আলাদা দরদ আছে। তিনি শিল্পের সফর শুরু করেছেন এমন শিল্পীদের সহযোগিতার মাধ্যমে, যাদের চিত্রকর্ম কেউ ক্রয় করে না। তিনি বলেন, ‘মানুষের উচিত চিত্রকর্ম ক্রয় করা। তাতে করে শিল্পীরা বাঁচতে পারবে ও বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাবে। আমি মাস্টারপিস কেনার কারণেই কেবল সংগ্রাহক হিসেবে পরিচিত হইনি, হয়েছি এ শিল্পীদের সহযোগিতা করার মাধ্যমে।’

খান এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শিক্ষার্থীদের শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে হাজির হন। তাদের চিত্রকর্ম কিনে নিয়ে উৎসাহ দেন। তার বিশ্বাস, মূল্যবান শিল্পকর্মগুলো তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠিত শিল্পী হওয়ার প্রয়োজন নেই। তার বদলে মূল্যবান চিত্রকর্ম হয়ে ওঠার জন্য যেটা প্রয়োজন, তা হলো শিল্প যেন তার সঙ্গে কথা বলতে পারে। তার সংগ্রহের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আছে এক মাস্ক পরিহিত নার্সের ভাস্কর্য। মহামারীকালে তৈরি। নির্মাণ করেছেন সিঙ্গাপুরের পুরস্কার বিজয়ী শেফ লিয়ং চে ইয়েং। রেস্তোরাঁর সঙ্গে জড়িত হলেও সিরামিক্স নিয়ে লিয়ংয়ের আগ্রহ ও অভিজ্ঞতা দারুণ। খান বলেন, ‘আমি এ ভাস্কর্যটি কিনেছি, কারণ এটি কভিড-১৯ মহামারীর সময় সিঙ্গাপুরের অবস্থাকে প্রতিবিম্বিত করে।’

সাধারণত শিল্প সংগ্রাহকরা গ্যালারি তৈরি করে নিজেদের সংগ্রহ প্রদর্শন করেন। কিন্তু খান তার চেয়েও অর্থবাচক কিছু তৈরি করার কাজ করছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম ভাস্কর্য পার্ক তৈরি করেছেন। গাজীপুরে সামিট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চত্বরে সেটি অবস্থিত। পাঁচ একর জমির ওপর ১৯টি ভাস্কর্য তৈরি করেছেন বাংলাদেশের বিখ্যাত স্থপতি হামিদুজ্জামান খান। যাদের সিংহভাগই তৈরি হয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিত্যক্ত অংশ থেকে। খান দাবি করেছেন, ‘হামিদুজ্জামান আমার বন্ধু ছিল। যখন যে আমাদের বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ঘুরতে আসে ও যাওয়ার সময় কিছু পরিত্যক্ত অংশ নিয়ে যেতে চায় কাজের জন্য। আমি তাকে আমার এখানে ভাস্কর্য পার্ক তৈরি করতে বলি। সে প্রস্তাবটি গ্রহণ করে।’ স্মৃতি একাত্তর নামে ভাস্কর্যটিতে তুলে ধরা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ। একটা রিকশায় তার চালকের মৃতদেহ। কোনো আরোহী নেই। একটা ইস্পাতের পাখি টাওয়ারের ওপর বসে আছে। যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে, শান্তির প্রয়োজন। ‘ভাস্কর্যগুলো তৈরি হয়েছে পরিত্যক্ত অংশ থেকে। যেখানে অন্যরা কিছুই দেখে না, সেখানে একজন শিল্পী কত কিছু দেখে ফেলেন।’

ঘর যখন আর্ট গ্যালারি

সংগ্রহের একটা বড় অংশ তার আট বছরের নাতির আঁকা। খুব আবেগপূর্ণ ও গুরুত্বের সঙ্গে চিহ্নিত করেছেন তিনি। ছবিগুলো সিঙ্গাপুরের বাসভবনের ডাইনিং রুমে সাজানো হয়েছে। খান বলেন, ‘আমার নাতি আমাকে বলে, নানা, এটা রঙিন মুরগির বাচ্চা। সে নাকি পিকাসোর দ্বারা প্রভাবিত। সে যে পিকাসোর দ্বারা অনুপ্রাণিত, সে বিষয়টি আমাকেও অনুপ্রাণিত করে।’ খান প্রায়ই তার অতিথিদের কাছে নাতির চিত্রকর্ম সম্পর্কে মতামত জানতে চান। ‘আমি প্রথমেই তাদের জানাই না যে, চিত্রকর্মগুলো আমার নাতির দ্বারা তৈরি। তারা চিত্রকর্মের দিকে তাকায়। বিস্মিত হয়। তারপর বলে এটা খুব শক্তিশালী শিল্পকর্ম।’—খান হেসে ওঠেন। সিঙ্গাপুরে খানের বাসা যেন একটা গ্যালারি। প্রতিটি দেয়ালে রয়েছে চিত্রকর্ম। প্রতি কোনায় রাখা ভাস্কর্য। বাসায় আসা অতিথিদের ওপর ভিত্তি করে শিল্পকর্মগুলো স্থানান্তরিত হয়। স্থানান্তরিত হয় জুম মিটিংয়ের সময় ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরির সময়ও।

তার বাসায় আমি একটা পেইন্টিং দেখে মোহিত হই। চিত্রকর্মটি বীরেন সোমের। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানুষের দুর্ভোগকে ফুটিয়ে তুলে ধরা হয়েছে সেখানে, পাশাপাশি রয়েছে স্বাধীনতার আনন্দ। চিত্রকর্মটির পাশে রাখা লিম জে ফেঙের চিত্রকর্ম। বাদ যায়নি সিঙ্গাপুরীয় চিত্রকলার পথিকৃৎ চেন ওয়েন সির চিত্রকর্ম। চেন সিঙ্গাপুরের ৫০ ডলার নোটের নকশা করেছেন। খানের দাবি, যে শিল্প পছন্দ করেন, কাজকে পছন্দ করেন ও মানুষের শিল্পের প্রতি প্রচেষ্টাকে কদর করেন, তারা তার সংগ্রহের প্রশংসা করবেন। চলে আসার সময় হয়। তার আগে আমি খানকে তার সংগ্রহশালাকে তিনটি শব্দে ব্যাখ্যা করতে বলি। তিনি বললেন, ‘আমি সত্যিই সন্তুষ্ট।’ তারপর একটু থেমে বললেন, এটাই তিন শব্দ। সত্যিই কোনো কিছু খানকে এতটা আনন্দিত করেনি, যতটা আনন্দিত এক ঐতিহাসিক তাৎপর্যময় সংগ্রাহক হিসেবে। সঙ্গে শিল্পীদের সহযোগিতা করার ব্যাপার তো রয়েছেই।

(সিএনএ ডিজিটালে মূল প্রতিবেদনটি লিখেছেন সিঙ্গাপুরভিত্তিক সাংবাদিক মেলিসা স্টুয়ার্ট)