সাড়ে ৮০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ, থমকে আছে দুদকের অনুসন্ধান
| আপডেট: ১৬:৩১, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৭
রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের সাড়ে ৮০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান অনেকটাই থমকে আছে। সংশ্লিষ্ট লোকজনের অভিযোগ, অদৃশ্য ইশারায় থমকে আছে ওই অনুসন্ধান।
ওই অভিযোগের সঙ্গে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের শীর্ষ একজন ব্যক্তি, একজন মহাব্যবস্থাপক, একজন ঋণখেলাপিসহ ১৪ জনের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে দুদকের হাতে।
গত বছরের ১ জুন ওই অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে উপপরিচালক মো. সামছুল আলমকে অনুসন্ধান এবং পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে তদারককারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয় কমিশন। কিন্তু এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে আট মাসেরও বেশি।
দুদকের কার্যবিধি অনুযায়ী যেকোনো অনুসন্ধানের কাজ ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে শেষ করতে হয়। তবে তা সম্ভব না হলে আরও ১৫ কার্যদিবস সময় পান অনুসন্ধান কর্মকর্তা। এর পরও অনুসন্ধানের কাজ সম্পন্ন না হলে যথাযোগ্য কারণ দেখিয়ে কমিশন বরাবর আবেদন করতে পারেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা।
দুদকের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জনতা ব্যাংকের ক্ষেত্রে আট মাসের বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও অনুসন্ধান শেষ হয়নি। কমিশনেও সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়নি।
জানা গেছে, অনুসন্ধানের আদেশ পাওয়ার দেড় মাস পর অনুসন্ধান কর্মকর্তা রেকর্ডপত্র চেয়ে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দেন। প্রায় পাঁচ মাস পর জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে ব্যাংকের চেয়ারম্যান শেখ মো. ওয়াহিদুজ্জামানের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টা কথা বলে দুদকের অনুসন্ধান ও তদারককারী কর্মকর্তাসহ চার সদস্যের দল। ওই দিন জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গণমাধ্যমের কর্মীদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। এমনকি ছবি নিতেও বাধা দেন ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মীরা।
দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপপরিচালক সামছুল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেন, অনুসন্ধানটি কিছুটা জটিল। কাগজপত্র পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
অভিযোগের বিস্তারিত:
দুদকে আসা অভিযোগে বলা হয়েছে, ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের শীর্ষ এক কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ৮৫৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে এম এইচ গোল্ডেন জুট মিলস লিমিটেডসহ আটটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ওই শীর্ষ কর্মকর্তার একাধিক বেনামি কাগুজে প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেড, সুপ্রভ মিলঞ্জ স্পিনিং মিলস লিমিটেড, জারা লেবেল অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড, মেসার্স এননটেক্স লিমিটেড, শবমেহের স্পিনিং মিলস লিমিটেড, সুপ্রভ রোটর স্পিনিং লিমিটেড ও শাইনিং নীট টেক্স লিমিটেড।
জনতা ব্যাংকের করপোরেট শাখার গ্রাহক মেসার্স এম এইচ গোল্ডেন জুট মিলস লিমিটেড। মোহাম্মদ ইউছুফ প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। পরিচালক হিসেবে রয়েছেন হুমায়ুন কবির চৌধুরী। দুদকের সূত্র বলছে, এটি ব্যাংকটির শীর্ষ ঋণখেলাপি মো. ইউনুছ বাদলের বেনামি প্রতিষ্ঠান। ২০১৪ সালের ৭ জানুয়ারি এ প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে ৭০ কোটি টাকা হাইপো ঋণ মঞ্জুর করেন ব্যাংকটির ওই শীর্ষ কর্মকর্তা। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান স্থিতি ৮৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা। বন্ধকি সম্পত্তির অতিমূল্যায়ন দেখিয়ে ঋণের নামে ব্যাংক থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে এ অর্থ।
সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন, পরিচালক মো. আবু তালহা। ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর ১৮০ কোটি টাকা সিসি হাইপোর্ট এবং ১৮০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করা হয় জনতা ব্যাংকের করপোরেট শাখা থেকে। বর্তমানে এটির স্থিতি ১৯৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। নামমাত্র সম্পত্তি বন্ধক রেখে এ টাকাও আত্মসাৎ করা হয়। সুপ্রভ মিলাঞ্জ স্পিনিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জালালউদ্দিন, পরিচালক এম আবদুল্লাহ সিদ্দিক। ২০১৪ সালের ১১ মে প্রতিষ্ঠানটির নামে প্রকল্প ঋণ মঞ্জুর হয় ১১৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। জনতা ব্যাংক করপোরেট শাখা থেকে নেওয়া এ ঋণের বর্তমান স্থিতি ১৪২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
জারা লেবেল অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের নামে একই বছরের ২২ জানুয়ারি প্রকল্প ঋণ মঞ্জুর হয় ৫৩ কোটি ২ লাখ টাকা। বর্তমানে এটির স্থিতি ৬২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। কোনো কিস্তি পরিশোধ না করে পুরো টাকাই আত্মসাৎ করা হয়। মেসার্স এননটেক্স নীট টেক্সের নামে ২০১৪ সালের ১৮ এপ্রিল ৯২ কোটি ৯ লাখ টাকা প্রকল্প ঋণ মঞ্জুর হয়। এটির স্থিতি ৯৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। মেসার্স শবমেহের স্পিনিং মিলসের নামে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে ৯১ কোটি ৪৩ লাখ। সুপ্রভ রোটর স্পিনিংয়ের নামে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে ১৮০ কোটি টাকা। মেসার্স শাইনিং নীট টেক্সের প্রকল্প ঋণের নামে হাতিয়ে নেওয়া হয় ৮৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, জনতা ব্যাংকের শীর্ষ ঋণখেলাপি মো. ইউনুছ বাদলের সঙ্গে ব্যাংকের ওই শীর্ষ কর্মকর্তার অবৈধ আর্থিক লেনদেন রয়েছে।
Source:Prothim Alo
Horrir looot !
Chaliey jao.