ড. আব্দুল লতিফ মাসুম: ঘটনার সূত্রপাত ২৮ অক্টোবর ২০২৩। এদিন ছিল বিএনপির মহাসমাবেশ। প্রায় দু’বছর ধরে প্রবল আন্দোলনের প্রান্তসীমায় পৌঁছেছিল দলটি। এই দীর্ঘ সময়ে বিএনপি নেতৃত্ব সংযম, সহিষ্ণুতা ও ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছে। এমনিতে বাংলাদেশের অস্থিরতার দুর্নাম রয়েছে। তার উপর দেড় দশক ধরে আওয়ামী লীগের হামলা-মামলা-গুম-খুন-অন্যায়-অত্যাচারে জর্জরিত দেশের কোটি কোটি মানুষ। রাজনৈতিক নিপীড়ন, অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্ব, সামাজিক অনাচার ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে বিপর্যস্ত দেশ।
জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া হওয়ায় জনগণের নাভিশ্বাস উঠিয়েছে। ২০০৯ সালের পর থেকে ক্রমাগত শক্তি প্রয়োগের নিষ্ঠুর পন্থায় দেশ শাসন করা হচ্ছে। বিরোধী শক্তিকে নির্মূলের মহড়া প্রথম থেকে শুরু করেছেন ক্ষমতাসীনরা। সুতরাং, সরকারবিরোধী আন্দোলনও থেমে থাকেনি। সব সময় আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন ছিল। বিগত দু’বছরে আন্দোলনটি বিএনপি শীর্ষ নেতৃত্বের কুশলতায় গণতান্ত্রিক পন্থায় নিয়মতান্ত্রিক পথে, শান্তি ও সুশৃঙ্খল ভাবে অগ্রসর হচ্ছিল। ধৈর্যসহ্যের দীর্ঘ অনুশীলনের পর আন্দোলন সফল হবে- এটি ছিল প্রত্যাশা। সে আশায় গুড়েবালি দিয়ে প্রতিপক্ষ শঠতা, ভাঁওতা, ভণ্ডামি, প্রতারণা, মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আন্দোলনের অনিবার্য বিজয় ব্যর্থ করে দেয়। ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ পণ্ড করে দেয় সরকার। কাঁদানে গ্যাসের ঝাঁজালো গন্ধ ও মুহুর্মুহু সাউন্ড গ্রেনেডের আক্রমণে রক্তাক্ত হয়ে ওঠে মহাসমাবেশ। নিহত হন যুবদলের এক নেতা ও এক পুলিশ সদস্য। আহত হন বিএনপির সহস্রাধিক নেতাকর্মী। আক্রান্ত হয় প্রধান বিচারপতির বাসভবন ও পুলিশ হাসপাতাল। অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এত দীর্ঘকাল শান্তিপূর্ণভাবে যে আন্দোলন পরিচালিত হয়ে আসছিল, অবশেষে তারা আন্দোলনকে ভায়োলেন্সে রূপান্তরিত করে নস্যাৎ করে দেবে, তা কি বিশ্বাসযোগ্য? রাজনীতি-বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করে বলেন, এটি ছিল সরকারের ‘মাস্টারপ্ল্যানের’ পরিকল্পিত বাস্তবায়ন। মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ নেতারা লাঠি হাতে বিএনপির মহাসমাবেশ প্রতিহতের যে ঘোষণা দিয়েছিলেন তার বাস্তবায়ন করা হয়েছে। রাজনীতি অভিজ্ঞরা মন্তব্য করেন, সরাসরি আক্রমণ না করে বিএনপির মহাসমাবেশে তাদের কর্মীবেশে এসব অপকর্ম করিয়েছেন আওয়ামী লীগের লোকেরা। সুলতানা কামাল বলেন, ‘জনমনে যে ভীতি ছিল সেটি সত্য হলো’। বিএনপিকে নির্মূলের অজুহাত হিসেবে পুলিশ হত্যার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। মহাসমাবেশের পূর্বাপর যে সব তথ্য বেরিয়েছে তাতে এর প্রমাণ মিলবে।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে মামলা ও গ্রেফতারের প্রামাণ্য খবরগুলো দেখা যেতে পারে। ২৯ অক্টোবর থেকে ৮ নভেম্বর অর্থাৎ এই ১১ দিনের চিত্র নিম্নরূপ :
৩০ অক্টোবর : বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষ ও পুলিশ সদস্য নিহতের ঘটনায় ২৮টি মামলা হয়েছে। একাধিক মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আসামি করা হয়েছে। দলের শীর্ষস্থানীয় বেশির ভাগ নেতাকে কোনো না কোনো মামলায় আসামি দেখানো হয়েছে। মির্জা ফখরুল ছাড়া আসামির তালিকায় রয়েছেন- মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, রুহুল কবির রিজভী, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বরকত উল্লাহ বুলু, জয়নাল আবেদিন ফারুক, জয়নাল আবেদিন, আহম্মেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, শামসুজ্জামান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শাহজাহান ওমর, মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ অনেকে।
২৯ অক্টোবর বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালের দিন ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় দলটির নেতাদের বাসায় বাসায় হানা দেয় পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে দেড় সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে। এর মধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে অসুস্থতা সত্ত্বেও আটক করে পুলিশ। ডিবি অফিসে নেয়ার পর তাকে কারাগারে পাঠানোর ব্যাপারে দ্বৈধতা ও দীর্ঘসূত্রতা লক্ষ করা যায়। মনে করা হয়, বৈশ্বিক চাপ বৃদ্ধি পায়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, অবশেষে শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে তাকে জেলে যেতে হয়।
৩১ অক্টোবর : মহাসমাবেশ ও হরতাল ঘিরে সারা দেশে ৪৪২টি মামলা করা হয়েছে। ঢাকায় দেড় হাজারসহ সারা দেশে ৩২ সহস্রাধিক আসামি করা হয়েছে। রাজধানীতে ৩৭ মামলায় সুনির্দিষ্টভাবে মির্জা ফখরুলসহ এক হাজার ৫৪৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাত আরো পাঁচ সহস্রাধিক আসামি করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সারা দেশের বিএনপির বেশির ভাগ নেতাকর্মী পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আত্মগোপনে রয়েছেন কেন্দ্রের শীর্ষ নেতারা। অব্যাহত আছে গ্রেফতার অভিযান। হজে থাকা অবস্থায় মানুষ পুলিশকে মারধর করে, মারা গেছে, কবরে আছে- এসব লোক এসে নাশকতার পরিকল্পনা করে, এভাবে গল্পকথার কল্পলোককে হার মানায় আওয়ামী সরকার।
১ নভেম্বর : মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেফতারের এক দিন পর বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- মির্জা আব্বাস ও সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। এই দুই নেতা গ্রেফতারের আগের ২৪ ঘণ্টায় বিএনপি-জামায়াতের আরো ১৫৭ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আটকের সংখ্যা এক হাজার ৬৫৪ জন। ঢাকার বাইরে গ্রেফতার হয়েছেন বিরোধী দলের আরো ১৫৭ নেতাকর্মী।
২ নভেম্বর : রাজধানীর শাহজাহানপুর থানায় নাশকতা ও বিষপ্রয়োগ আইনে মামলায় মির্জা আব্বাসকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রাজারবাগে পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ভাঙচুরের মামলায় সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দেন আদালত।
৩ নভেম্বর : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। এর মধ্যে বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনকে আটক করে। আরো আটক করা হয় ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল ইসলামকে। তাকে আট দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। একই সময়ে সারা দেশে বিএনপির আরো ২৩৪ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
৪ নভেম্বর : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনকে ছয় দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। রাজধানীর পল্টন থানার মামলায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মুজিবুর রহমান সরোয়ারকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বিএনপি জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে দলটির তিন শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে নতুন মামলা হয়েছে ১১টি। এতে আসামি করা হয়েছে এক হাজার ৪৫ জনকে। বিএনপি অভিযোগ করেছে, সারা দেশে তাদের ২৯২ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ২৮ ও ২৯ জুলাই থেকে শুক্রবার পর্যন্ত বিএনপির সাত হাজার ৫৩৭ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মোট মামলা হয় পাঁচ শতাধিক।
৫ নভেম্বর : বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলমসহ সারা দেশে আরো ১৭৬ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নতুন করে আরো ছয়টি মামলা হয়েছে। এতে ৫৭৫ জনের বেশি আসামি করা হয়েছে। একই সময় আরো ২৩ জনকে নাশকতা মামলায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
৬ নভেম্বর : তিন কেন্দ্রীয় নেতাসহ সারা দেশে বিএনপির আরো ১২১ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। গ্রেফতার তিন কেন্দ্রীয় নেতা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব:) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান ওমর ও দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবিরা সুলতানা। আগের দিন দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুকে গ্রেফতার করা হয়। আদালত ও পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় অন্তত ৩৬ জন ও ঢাকার বাইরে ১২ জেলায় বিএনপির ৮৫ নেতাকর্মীকে গ্রফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে গত ৯ দিনে সারা দেশে গ্রেফতার হয়েছেন বিএনপির সাত হাজার ৯৫৬ নেতাকর্মী। ঢাকায় গত সাত দিনে আরো ৮৯টি মামলা হয়েছে। ঢাকায় নতুন করে গ্রেফতারকৃত ৩৬ নেতাকর্মীকে আদালতে হাজির করা হয়। তাদের মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ারুজ্জামান ও ছাত্রদলের সহ-সভাপতি নাজমুল আহসানকে আটক করা হলেও আদালতে হাজির করা হয়নি।
৭ নভেম্বর : বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা দলের ডাকা অবরোধের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ধরপাকড় হয়েছে। এর মধ্যে শরীয়তপুরে ৭০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে পাঠানো খবরে বলা হয়েছে, গ্রেফতার অভিযান গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় পুলিশ নেতাকর্মীদের তালিকা তৈরি করেছে। সেই অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে গ্রেফতার না করার প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছে পুলিশ। প্রত্যন্ত এলাকায় এ ধরনের গ্রেফতারের বিবরণ পত্র-পত্রিকায় নাম-ধামসহ ছাপা হচ্ছে। এতে প্রমাণিত হয়, তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সর্বত্র ভীতির রাজত্ব কায়েম হয়েছে। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন, সরকার দেশটাকে এখন বৃহৎ কারাগার বানিয়ে ফেলেছে।
৮ নভেম্বর : নাশকতার অভিযোগে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেশের পাঁচ জেলায় আরো ছয়টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের ১১৭ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৬৭ নেতাকর্মীকে। একই সময় ঢাকার বাইরে দলটির ৭৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে আট বছর আগে বাসে আগুন দেয়ার একটি মামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ও সাবেক সংসদ সদস্য আহসান হাবিব আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। ঢাকার সিএমএম আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্র ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ১১ দিনে সারা দেশে সব মিলিয়ে বিএনপির আট হাজার ২৭৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় ঢাকায় গ্রেফতার হয়েছেন দুই হাজার ৪৩৯ নেতাকর্মী। নতুন করে মামলা হয়েছে ১১২টি। সর্বশেষ প্রথম আলোর একটি বিশেষ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানা যায়, কারাগারে বন্দীর সংখ্যা দ্বিগুণ। তাদের থাকতে হচ্ছে গাদাগাদি করে। দেশের কারাগারগুলো আগে থেকে বন্দীতে ঠাসা। ২৮ অক্টোবরের ঘটনার পর কারাবন্দীর সংখ্যা বাড়ছে দ্রুত। কারা অধিদফতরের ৫ নভেম্বর প্রদত্ত হিসাব অনুযায়ী, ৬৮ বন্দী কারাগারে ধারণক্ষমতা ৪৩ হাজারের কম। তাতে রয়েছে ৮৮ হাজার বন্দী। কারাবিধি অনুযায়ী, একজন বন্দীর থাকার জন্য ন্যূনতম ছয় ফুট করে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের জায়গা থাকতে হয়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, বন্দীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এসব পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেশের বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান মন্তব্য করেছেন, ‘দেখে মনে হচ্ছে, সঙ্ঘাত আরো ঘনীভূত হচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘দলের নেতাকর্মীদের বাইরে দেশের জনসাধারণ তো শান্তিপূর্ণ উপায়ে সব বিরোধের সমাধান চায়। সবাই চায় দেশে একটি শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করুক। যে পরিবেশে সবাই খোলামনে ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে মতপ্রকাশ করতে পারবে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারবে। আগামী নির্বাচনে একটি অর্থবহ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে, যেখানে জনগণ নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে। দেশে সেরকম একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করার দায়িত্ব সব রাজনৈতিক দলের। তবে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব তো সরকার ও সরকারি দলের। তারা দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আছে। তাদেরই দূরদর্শিতা দেখাতে হবে। সবাইকে সাথে নিয়ে এই সঙ্কট থেকে উত্তরণের পথ তাদেরই বের করতে হবে।’ এই বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর সাথে দ্বিমত করার কোনো সুযোগ নেই। নির্মম শক্তি প্রয়োগ পৃথিবীর ইতিহাসে কারো জন্য সুখকর হয়নি। এখানেও পরিণতি হবে ভয়াবহ। মনে রাখতে হবে- ‘পাপে পাপ আনে, পুণ্যে আনে সুখ।’ শক্তি প্রয়োগ কখনো সম্মতির বিকল্প হতে পারে না। বিজ্ঞানী নিউটনের আলোচিত তৃতীয় সূত্র বলে- ‘এভরি অ্যাকশন হ্যাজ অ্যান ইকুয়্যাল অ্যান্ড অপজিট রি-অ্যাকশন’। মানে, প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। এটিই প্রকৃতির ধর্ম।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
নয়াদিগন্ত