সায়মা ওয়াজেদকে ছুটিতে পাঠিয়েছে ডব্লিউএইচও: হেলথ পলিসি ওয়াচ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ের (এসইএআরও) পরিচালক সায়মা ওয়াজেদকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার (১১ জুলাই) থেকে কার্যকর হয়েছে এই ছুটি। এর চার মাস আগে দুর্নীতি, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দুটি মামলা করে।

ডব্লিউএইচওর এক সংক্ষিপ্ত অভ্যন্তরীণ ই–মেইলে সংস্থাটির মহাপরিচালক তেদরোস আধানম গেব্রেয়াসুস এ তথ্য জানান।

ই–মেইলে ডব্লিউএইচওর প্রধান উল্লেখ করেন, সায়মা ওয়াজেদ ছুটিতে থাকবেন এবং তাঁর জায়গায় সহকারী মহাপরিচালক ক্যাথারিনা বেম ‘ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বেম আগামী মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) ভারতের নয়াদিল্লিতে এসইএআরও কার্যালয়ে যোগ দেবেন বলেও জানান তিনি।

জাতিসংঘের দিল্লির একটি সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে প্রাথমিকভাবে চার মাসের ছুটি দেওয়া হয়েছে।

এ বছরের মে মাসে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলির সময় বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুসকে সায়মা ওয়াজেদের ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অস্বস্তির কথা জানান।

আজ শনিবার সকালে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে প্রথম আলোকে জানানো হয়েছে, তারা শুনেছে, সায়মা ওয়াজেদকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তবে এ বিষয়ে তারা কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি বা অন্য কোনো নির্দেশনা পায়নি।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ। জনরোষের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী ভারতে চলে যান হাসিনা।

অভিযোগ আছে, এসইএআরওর আঞ্চলিক পরিচালক পদে সায়মার নিয়োগ পাওয়ার জন্য তাঁর মা হাসিনা নিজের প্রভাব খাটিয়েছেন। এর পর থেকেই সায়মাকে ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়। গত বছরের জানুয়ারিতে ওই দায়িত্ব পান সায়মা।

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই সায়মার নিয়োগ নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুদক চলতি বছরের জানুয়ারিতে তদন্ত শুরু করে। এ খবর হেলথ পলিসি ওয়াচ আগেই জানিয়েছিল।

দুদকের দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, সায়মা ওয়াজেদ আঞ্চলিক পরিচালক হওয়ার প্রচার চালানোর সময় নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। এটি বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪৬৮ ধারা (প্রতারণার উদ্দেশ্যে জালিয়াতি) ও ৪৭১ ধারার (জাল দলিল ব্যবহার) লঙ্ঘন।

দুদকের অভিযোগে আরও বলা হয়, সায়মা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) একটি অনারারি পদে রয়েছেন বলে দাবি করেন, যা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করেছে। সায়মা এ দাবি ডব্লিউএইচওতে নিজের অবস্থান মজবুত করতে ব্যবহার করেন বলে অভিযোগে জানান দুদকের উপপরিচালক আখতারুল ইসলাম।

সায়মার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, সূচনা ফাউন্ডেশনের প্রধান হিসেবে তিনি নিজের ক্ষমতা ও প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রতিষ্ঠানটির জন্য প্রায় ২ দশমিক ৮ মিলিয়ন (প্রায় ২৮ লাখ) ডলার সংগ্রহ করেছেন। তবে এ অর্থ কীভাবে খরচ হয়েছে, সে বিষয়ে মামলায় বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়নি।

এসব ঘটনায় সায়মার বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় (প্রতারণা ও অসৎভাবে অর্থ বা সম্পত্তি হস্তান্তর) জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

এসব অভিযোগ ওঠার পর থেকে সায়মা ওয়াজেদ ডব্লিউএইচওর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোয় নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করতে পারছেন না। এ ছাড়া দেশে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছেন আদালত।

Source: Prothom Alo

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here