আশুলিয়া, মাধবদী ও চান্দিনায় সামিট পাওয়ার লিমিটেডের তিনটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ আবারও পাঁচ বছর করে বাড়িয়েছে সরকার। গতকাল সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে মেয়াদ বৃদ্ধির এই প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এতে ১৫ বছরের জন্য লাইসেন্স দেয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র তিনটি ২৫ বছর করে চলবে। এর আগে ২০১৮ সালে এ তিন বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ পাঁচ বছর করে বাড়ানো হয়েছিল।
গতকাল সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিসভার সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগের সচিব মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের বলেন, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তিনটির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ ২০২৩ সালের ২১ নভেম্বর শেষ হয়ে গিয়েছিল। ২২ নভেম্বর থেকে আগামী পাঁচ বছরের জন্য কেন্দ্র তিনটির চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। নতুন চুক্তির আওতায় বিদ্যুৎ কিনতে ইউনিটপ্রতি ৭ পয়সা করে সাশ্রয় হবে।
তিনি জানান, আশুলিয়া, মাধবদী ও চান্দিনায় ১০ (+১০%) মেগাওয়াট করে গ্যাসভিত্তিক তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধি এবং ট্যারিফ প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্পন্সর কোম্পানি সামিট পাওয়ার লিমিটেডের সঙ্গে সরকারের ১৫ বছর চুক্তির মেয়াদ ২০১৮ সালের ৩১ আগস্ট উত্তীর্ণ হয়। পরবর্তী সময় আরও পাঁচ বছর বৃদ্ধি করা হয়। তার মেয়াদ ২০২৩ সালের ২১ নভেম্বরে শেষ হয়। তবে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে দ্বিতীয়বার আরও পাঁচ বছর মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বাপবিউবো) সুপারিশ করে।
মাহমুদুল হোসাইন খান জানান, বাপবিবো এবং নেগোসিয়েশন কমিটি কর্তৃক স্পন্সর কোম্পানির সঙ্গে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশকৃত চুক্তির শর্ত চূড়ান্ত করে। এর ভিত্তিতে তিনটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ ২০২৩ সালের ২২ নভেম্বর থেকে পাঁচ বছর বৃদ্ধির জন্য ‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’ ভিত্তিতে সংশোধিত চুক্তি সম্পাদনের প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সামিট পাওয়ার লিমিটেডের সঙ্গে সংশোধিত চুক্তির ট্যারিফ হবে কিলোওয়াট ঘণ্টা পাঁচ টাকা ৮২ পয়সা।
তিনি আরও জানান, বর্ধিত মেয়াদে (পাঁচ বছরে) স্পন্সর কোম্পানিকে ৫৪৬ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। বর্ণিত প্রস্তাবে ট্যারিফ আগের তুলনায় হ্রাস পাওয়ায় বিদ্যুৎ কেনায় বর্ধিত মেয়াদে প্রায় ছয় কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয় সাশ্রয় হবে।
এর বাইরে ক্রয় কমিটির বৈঠকে ইস্টার্ন রিফাইনারির বাস্তবায়নাধীন এসপিএম বা সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিংয়ের জন্য টেস্টিং ও কমিশনিংয়ের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে ‘যথাযথ শক্তির’ টাগবোট সংগ্রহ, পাইলটিং এবং আনুষঙ্গিক সেবার জন্য ইপিসি ঠিকাদার চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে সাপ্লিমেন্টারি চুক্তি করার প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে খরচ ধরা হয়েছে ৬২ কোটি ৮৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। পাশাপাশি রেলের দুটি প্যাকেজের চুক্তিমূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়।
সচিব বলেন, ‘খুলনা থেকে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ (৩য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউডি-১-এর পূর্ত কাজের তৃতীয় ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউডি-১-এর নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে মেসার্স ইরকন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, ইন্ডিয়া। প্রকল্পে এর ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ২৭৮ কোটি ৬৫ লাখ ৫২ হাজার ৯০৭ টাকা। চুক্তি অনুসারে কাজ চলমান অবস্থায় কিছু আইটেম হ্রাস/বৃদ্ধি হওয়ায় তৃতীয় ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৭০ কোটি ২৩ লাখ ৯২ হাজার ১৫১ টাকা ব্যয় বৃদ্ধি হয়েছে। ক্রয় কমিটি এ প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে।
এদিন অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে কক্সবাজার জেলার মহেশখালীতে ৬০০ এমএমসিএফডি ক্ষমতার তৃতীয় এফএসআরইউ প্রকল্পে ঠিকাদার কোম্পানির নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। আগে চুক্তি হয়েছিল সামিট অয়েল অ্যান্ড শিপিং কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে। এখন এর নাম পরিবর্তন করে হবে সামিট এলএনজি টার্মিনাল কোম্পানি টু।
সচিব বলেন, এই ধরনের কোম্পানিকে এসপিভি বা স্পেশাল পারপাস ভেহিক্যাল কোম্পানি বলে। এই কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় আগের কোম্পানির লোকজনই থাকছে। নামটা শুধু পরিবর্তন হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী সেটাই ক্রয় কমিটিকে অবহিত করা হয়েছে।
আরেকটি প্রস্তাবে সিঙ্গাপুরের কোম্পানি গানভর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে স্বল্পমেয়াদি প্রক্রিয়ায় এলএনজি সরবরাহের প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। চলতি ২০২৪ ও ২০২৫ সালের জন্য এই চুক্তি করা হবে। এছাড়া ভারতের ন্যাশনাল কোঅপারিটিভ এক্সপোর্টস লিমিটেডের কাছ থেকে টিসিবির মাধ্যমে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির একটি প্রস্তাবেও অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
share biz
