আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আবু। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল্লাহ আবু প্রথম আলোকে বলেন, তিনজন সাক্ষীর জবানবন্দিতে ইশতিয়াক নামের এক ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে। এ জন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে অধিকতর তদন্ত চেয়ে তিনি আবেদন করেন। আদালত অধিকতর তদন্তের আদেশ দিয়েছেন।
২০১৮ সালের ৪ আগস্ট রাতে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের মোহাম্মদপুর এলাকার বাসায় নৈশভোজে অংশ নেন মার্শা বার্নিকাট। নৈশভোজ শেষে রাত ১১টার দিকে ফেরার পথে সশস্ত্র একদল মোটরসাইকেল আরোহী রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা গাড়িবহরের দিকে এগোনোর সময় তাদের বাধা দেওয়া হলে রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তা দলের দুই সদস্যকে ঘুষি মারে হামলাকারীরা। গাড়িবহর চলে যাওয়ার সময় দুটি গাড়িতে লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বাদী হয়ে মামলা করেন।
মামলাটি তদন্ত করে গত বছরের ৫ মার্চ আদালতে ৯ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। অভিযোগপত্রে বলা হয়, সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের বাসায় নৈশভোজে বার্নিকাট অংশগ্রহণ করেন। সেখানে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রে করা হয়েছে এমন সন্দেহে সেদিন এ হামলার ঘটনা ঘটে। তবে এটাকে পুলিশের পক্ষ থেকে ষড়যন্ত্র বলা ধৃষ্টতা এবং মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন বলে মনে করেন বদিউল আলম।
অভিযোগপত্রের তথ্য বলছে, সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র হওয়ার সন্দেহের জের ধরে সেদিন স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতা নাইমুল হাসানের নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের একটি দল ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়ি ধাওয়া করলে তিনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়, বাড়ির জানালার কাচ ভাঙচুর করা হয়। বদিউল আলম মজুমদার, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।
ওই সময় বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, যোগাযোগ এবং গৃহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। আমার বাড়িতে আমি একটা নৈশভোজের আয়োজন করেছি। এটাকে পুলিশের পক্ষ থেকে ষড়যন্ত্র বলা ধৃষ্টতা এবং মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন। এ ঘটনা থেকে ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে পারত। মার্কিন রাষ্ট্রদূত আহত বা নিহত হতে পারতেন। আমরা হতে পারতাম।’ তিনি বলেছিলেন, লোকজনকে ডেকে এই হামলা করা হয়েছে বলে ইশতিয়াক মাহমুদ নামের এক ব্যক্তি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন। অথচ অভিযোগপত্র থেকে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও প্রহসনের চার্জশিট।