সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তার আশা

সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তার আশা.

সরকারের সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে নতুন করে অন্তত সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে আইএমএফ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার এবং বিশ্বব্যাংক থেকে দেড় বিলিয়ন ডলার আসতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে ২১ থেকে ২৬ অক্টোবর বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভায় অর্থায়নের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। এ সভায় যোগ দিতে আগামীকাল সোমবার ঢাকা ছাড়ছে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিনিধি দলটি নতুন অর্থায়ন পদ্ধতি এবং সংস্কারের শর্ত নিয়ে আলোচনা করতে মূল অনুষ্ঠানের ফাঁকে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের বহুপক্ষীয় বিনিয়োগ গ্যারান্টি এজেন্সি (এমআইজিএ), ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি), অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কানট্রিজ (ওপেক) ও আরও কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে নানা ইস্যুতে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবে।
প্রতিনিধি দলে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ সচিব, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিবসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা থাকছেন। আগামী ২৯ অক্টোবর অর্থ উপদেষ্টার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সরকারের সংস্কার কার্যক্রমকে সমর্থন জানিয়ে প্রয়োজনীয় তহবিল সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সমকালকে বলেন, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবির কাছ থেকে ব্যাংকিং এবং অন্যান্য খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য সংস্কারের কার্যক্রমের জন্য আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় ৩ বিলিয়ন তহবিল ডলার বাজেট সহায়তা আসতে পারে। ঋণদাতারা এ জন্য বেশ কয়েকটি শর্ত আরোপ করতে পারে। এর মধ্যে থাকতে পারে রাজস্ব, সরকারি ব্যয় এবং তথ্য সংক্রান্ত কিছু বিষয়।
গত বছরের জানুয়ারিতে অনুমোদন হওয়া ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ছাড়াও আইএমএফের একটি পৃথক কর্মসূচির আওতায় ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন হতে পারে। আগের অনুমোদন হওয়া ঋণ মোট সাত কিস্তিতে আগামী ২০২৬ সাল পর্যন্ত দেওয়ার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে তিন কিস্তির ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। নতুন ঋণ কী শর্তে কয় কিস্তিতে দেওয়া হবে, সে রূপরেখা বার্ষিক সভার ফাঁকে বৈঠকে চূড়ান্ত হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ডিসেম্বরে আইএমএফ বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষে এ বছর আইএমএফের দুটি কর্মসূচির অধীনে দেড় বিলিয়নের বেশি পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী সরকার। নতুন তহবিলের জন্য সংস্কারের শর্ত নির্ধারণ এবং বিদ্যমান ঋণ কর্মসূচি পর্যালোচনা করতে নভেম্বরে আইএমএফের একটি মিশনের ঢাকা সফরের সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশ্বব্যাংক চলতি অর্থবছরে নতুন করে দেড় বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দেবে বলে আশা করছে সরকার। এর মধ্যে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এক বিলিয়ন পাওয়ার কথা রয়েছে। বিশ্বব্যাংক অর্থনৈতিক সুশাসন ও সংস্কার কর্মসূচি জোরদার করতে ৭৫ কোটি ডলার দেবে। আরও ২৫ কোটি ডলার অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দেওয়া হবে।

এডিবি থেকে সরকার চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার আশা করছে। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং সুশাসন জোরদার করার জন্য একটি কর্মসূচির জন্য ডিসেম্বরের মধ্যে ৬৫ কোটি ডলার পাওয়া যাবে। অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংকিং খাতের জন্য এডিবির কাছে ১ বিলিয়ন ডলার এবং জ্বালানি খাতে আরও ১ বিলিয়ন ডলার চেয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাতে ১ বিলিয়ন ডলার পাওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
জানা গেছে, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ ঋণের শর্তগুলোর মধ্যে রাজস্ব সংগ্রহ প্রশাসন থেকে করনীতি আলাদা করার বিষয়টি থাকতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে ঋণদাতারা বিষয়টি উত্থাপন করলেও এনবিআরের আগ্রহের অভাবে তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। তা ছাড়া বর্তমান একাধিক ভ্যাট হারকে অভিন্ন হারে নির্ধারণ, রাজস্ব বাড়ানো এবং একটি আধুনিক ইলেকট্রনিক ভ্যাট ব্যবস্থা চালু করার শর্তও নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এ ছাড়া ভর্তুকি ব্যয় কমিয়ে আনতে কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়া, বিবিএসের স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনভাবে তথ্য প্রকাশের ক্ষমতার বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে।

samakal