মাহমুদুর রহমান 15 August 2021
বড় ভারাক্রান্ত মনে অনেকদিন পর আবার বাংলা লিখতে বসলাম। লিখতে খুব কষ্ট হচ্ছে। একে চোখে ছানি। তার ওপর বন্ধু হারানোর বেদনায় সামনে সব কিছু ঝাপসা। লন্ডন থেকে অলিউল্লাহ নোমান এইমাত্র জানালো অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রহিম আজ পিজি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। ২০০৯ সাল থেকে তিনি দিল্লির নির্দেশে কাশিমপুর কারাগারে আটক ছিলেন।শেখ হাসিনারও ব্যক্তিগত ক্রোধ ছিল এই অসীম সাহসী, খাঁটি দেশপ্রেমিক, মুক্তিযোদ্ধাটির ওপর। ১৯৯৬ সালে ভারত এবং হাসিনার দালাল সেনাপ্রধান জেনারেল নাসিমের সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য যে কজন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা সেদিন লড়াই করেছিলেন তার মধ্যে রহিম ছিলেন অন্যতম। দিল্লি এবং হাসিনার সেই ব্যর্থতার আক্রোশের কারণেই আজ রহিমকে বন্দী অবস্থায় পৃথিবী থেকে চলে যেতে হোল। মহান আল্লাহ্তায়ালার কাছে কায়মনোবাক্যে মিনতি জানাই তিনি যেন এই ধার্মিক মানুষটাকে উত্তম পুরস্কার দান করেন।
রহিম বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সহপাঠী ছিল। সকল সহপাঠীর সংগে বন্ধুত্ব হয় না। রহিম আমার পরম বন্ধুও ছিল। কাশিমপুর কারাগারে রহিম আর আমি বছরের পর বছর একসাথে জেলও খেটেছি। বড় আশা ছিল দিল্লির নিয়ন্ত্রণমুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে আবারও আমাদের দেখা হবে। মাফ করে দিস রহিম। স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের লড়াইএ আমরা হেরে গেলাম। তোকেও একাকী চলে যেতে হোল। জীবনের অন্তিম মুহূর্তে প্রিয়তমা স্ত্রী এবং পরম স্নেহের পুত্র-কন্যার মুখ দেখে যেতে পারলি না। জেনারেল রহিমের এই পরিণতির জন্য কাকে ধিক্কার দেব? যে সেনাবাহিনী অর্থ-সম্পদের মোহে নির্লজ্জভাবে দিল্লির পদলেহন করছে তাদেরকে, নাকি বাংলাদেশের ভীরু, কাপুরুষ সেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান জনগোষ্ঠীকে যারা হিন্দুত্ববাদী ভারতের গোলামীর জিঞ্জির সানন্দে, বিনা প্রতিবাদে সর্বাঙ্গে পেঁচিয়ে রেখেছে? আফগানিস্তানের জনগণের দেশপ্রেম এবং সাহস কি আপনাদের একটুও অনুপ্রাণিত করে না? সেখানকার লড়াকু মানুষ বিগত দুইশ বছরে একটি নয়, তিন তিনটি পরাশক্তিকে হারিয়েছে। ১৮৪২ সালে তারা তৎকালীন সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী পরাশক্তি ব্রিটেনকে শোচনীয়ভাবে হারিয়েছিল। অথচ সম্পূর্ণ ভারত তখন সেই ব্রিটিশদেরই পদানত। ১৯৮৯ সালে আফগানদের কাছে যুদ্ধে হেরেই সোভিয়ত ইউনিয়ন ভেঙে গিয়েছিল। আর এখন ২০২১ সালে মার্কিনীদের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে লক্ষ লক্ষ আফগান নারী, পুরুষ, শিশুদের হত্যা করেও পরাজয়ের কালিমা নিয়ে কাবুল থেকে পালাচ্ছে। দেশটির দালাল প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়ে কান্নাকাটি করে রক্ষা পেতে চাচ্ছে। এই বিজয় এবং মুক্তি বিনা রক্তপাতে আসে নাই। আফগানিস্তানের আলেমরাও কিন্তু যুদ্ধ করেছে, বাংলাদেশের আলেমদের মত শুধু ওয়াজ করে দায়িত্ব শেষ করে নাই।
বাংলাদেশের কথিত ‘বীর বাঙালি’ হাসিনার পুলিশ দেখলেই নিমেষে হাওয়া হয়ে যান। আরে ভাই, একবার দল বেঁধে রাস্তায় নেমে দেখুনই না। হাসিনার পুলিশরা তো আর আমেরিকান কিংবা ব্রিটিশ অথবা রাশিয়ান না। তারা তো আপনাদের মতই ভিতু বাঙালি মুসলমান অথবা হিন্দু। পুলিশের পোশাক খুলে, বন্দুক ফেলে পালাতে লাখখানেক সাহসী মানুষের রাস্তায় প্রতিরোধই যথেষ্ট। নাকি সতেরো কোটি জনসংখ্যার দেশে এক লাখ সাহসী মানুষও নেই।
রহিম আমি জানি না এই কাপুরুষ এবং মীর জাফরদের দেশে তোর যোগ্য সন্মান আমরা কোনদিন দিতে পারব কিনা। তবে তোর এই নির্বাসিত বন্ধু তোকে কখনও ভুলবে না। আমার কাছে তুই একজন প্রকৃত শহীদ। ঘুমিয়ে থাকো বন্ধু। আমরা তোমার পিছনেই আসছি।