সাইবার নিরাপত্তা আইনের সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই

logo

প্রস্তাবিত আইনে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে ৩ থেকে ৬ মাসের জেল

স্টাফ রিপোর্টার

৮ আগস্ট ২০২৩, মঙ্গলবার

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম বদলে সাইবার সিকিউরিটি আইন করতে যাচ্ছে সরকার। মানহানিকর তথ্য প্রকাশ ও প্রচারের অপরাধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে থাকা কারাদণ্ডের বিধান বাতিল করে নতুন আইনে শুধু জরিমানার বিধান রাখা হচ্ছে। মানহানির মামলায় দণ্ডিত হয়ে কেউ জরিমানার অর্থ পরিশোধ না করতে পারলে তখন ৩ থেকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া যাবে। মানহানির জন্য সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হচ্ছে এই আইনে। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। পরে আইনমন্ত্রী সচিবালয়ে তার দপ্তরে এ সংক্রান্ত ব্রিফ করেন। নতুন নামে প্রস্তাবিত আইনে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের অনেক ধারাই থাকবে বলে আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন। প্রস্তাবিত আইনের বিষয়ে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব ধারা রাখার কথা বলা হচ্ছে এবং যে শাস্তির প্রস্তাব করা হচ্ছে তা মনে হচ্ছে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের সঙ্গে প্রস্তাবিত আইনের মৌলিক কোনো তফাৎ নেই। প্রস্তাবিত আইনে ভোগান্তি খুব একটা কমবে না। যদিও আগের আইন বাতিল করে নতুন আইন প্রস্তাব করার সিদ্ধান্তকে সতর্ক সাধুবাদ জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

বিজ্ঞাপন

তারা নতুন আইনটি যাতে আগের আইনের প্রতিচ্ছবি না হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন। নতুন আইনটি চূড়ান্ত করার আগে অংশীজনের মতামত নেয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

 

ওদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সচিবালয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এর নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে। এর নতুন নাম হবে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট। একই সঙ্গে আইনের অনেকগুলো ধারায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
আইনমন্ত্রী বলেন, ২৯ ধারা সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করা হয়েছে। শুধু শাস্তি হবে জরিমানা, সেই জরিমানা অনাদায়ে ৩ থেকে ৬ মাসের কারাদণ্ড থাকবে। সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে। কারাদণ্ড উঠিয়ে দিয়ে শুধু সাজা রাখা হয়েছে। দেওয়ানি আইনে যদি মানুষ ক্ষতিপূরণ চায় সেখানে কিন্তু ক্ষতিপূরণের কোনো লিমিট নেই। ১০০ কোটি টাকাও ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে।

সেইসব ক্যালকুলেশনে অনধিক ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে। সর্বনিম্ন যেকোনো পরিমাণ জরিমানা করা যাবে। এক টাকাও জরিমানা করা যাবে কিন্তু ২৫ লাখ এক টাকা জরিমানা করা যাবে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারায় বলা আছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে Penal Code (Act XLV of ১৮৬০) এর  section ৪৯৯ এ বর্ণিত মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেন, তজ্জন্য তিনি অনধিক ৩ (তিন) বছর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লাখ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন, তাহা হইলে ওই ব্যক্তি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসরের কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১০ (দশ) লাখ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৮ ধারায় সাজা পাঁচ বছরের কারাদণ্ড থেকে কমিয়ে নতুন আইনে দুই বছর করা হচ্ছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, এটা আগে অ-জামিনযোগ্য ছিল, সেটিকে জামিনযোগ্য করা হচ্ছে। ২৮ ধারায় বলা আছে, (১) যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করার বা উস্কানি দেয়ার অভিপ্রায়ে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা প্রচার করেন বা করান, যা ধর্মীয় অনুভূতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর আঘাত করে, তাহলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে। এই অপরাধে তাকে অনধিক ৫ (পাঁচ) বছরের কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১০ (দশ) লাখ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। যদি কোনো ব্যক্তি ওই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন, তাহলে তিনি অনধিক ১০ (দশ) বছরের কারাদণ্ডে, বা অনধিক ২০ (বিশ) লাখ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। সংসদের আগামী সেপ্টেম্বর মাসের অধিবেশনে সাইবার সিকিউরিটি আইন পাস করা হবে বলে জানান আইনমন্ত্রী।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ব্যাপক সমালোচিত ৫৭সহ কয়েকটি ধারা বাতিল করে নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হলেও পুরনো আইনের বাতিল হওয়া ধারাগুলো নতুন আইনে রেখে দেয়ায় এর অপপ্রয়োগের শঙ্কা ছিল উদ্বেগের কেন্দ্রে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার লেখক মুশতাক আহমেদ ২০২১ সালে কারাগারে মারা যাওয়ার পর ওই আইন বাতিলের দাবিতে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছিল। এরপর আইনের ‘অপব্যবহার’ বন্ধে আইনমন্ত্রীর আশ্বাসের মধ্যেও সংবাদকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার থেমে থাকেনি। মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করে এমন সংগঠনগুলো আইনটি বাতিল বা সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছে। বিভিন্ন পক্ষের দাবি এবং চাপের কারণে আইনটি সংশোধনের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল আগেই।