সহিংসতার আশঙ্কা আওয়ামী লীগে
০১ ফেব্রুয়ারি ২০২০
নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যেই সহিংস ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্র্থীদের সাথে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে। এই স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থীরাও ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সাথেই জড়িত বলে জানা যায়। দলে তাদেরও রয়েছে পদ-পদবি এবং এদের মধ্যে অনেক রয়েছেন যারা পারিবারিকভাবেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। শীর্ষ সারির কোনো-না-কোনো নেতার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে তাদের।
গতকালও স্বতন্ত্র এক প্রার্থীর ওপর আক্রমণ করেছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্র্থী। ঢাকা মহানগর উত্তর সিটির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থী প্রকৌশলী সারওয়ারের ওপর গতকাল জুমার নামাজের শেষে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। সারওয়ার জানান, তার ওপর হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সফিউল্লাহ সফির লোকজন। তার ক্যাডার খোকনের নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয়। তিনি রহিম মেটাল মসজিদে নামাজ শেষে যখন বের হচ্ছিলেন তখনই ধর ধর বলে দুর্বৃত্তরা তার ওপর হামলা চালায়। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে আজ নির্বাচনের দিনেও সহিংস ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এখানে তেজগাঁও পলিটেকনিকসহ বেশ কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ নির্বাচনী কেন্দ্র রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়। সারওয়ার জানান, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। দীর্ঘ দিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। এরশাদের সময় এবং বিএনপির সময় দু’বার তিনি নির্বাচিত কমিশনার ছিলেন। এখন নিজ দলের লোকজনের হাতে মার খেতে হচ্ছে তাকে।
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের দুটো ওয়ার্ডে প্রায় প্রতিদিনই সহিংস ঘটনা ঘটে আসছে। সহিংসতা হচ্ছে ক্ষমতাসীনদেরই দুই গ্রুপে। এক গ্রুপ দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছে। অপর দল মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করছে। আজকে নির্বাচনের দিন ওই এলাকায় তুমুল সংঘর্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। স্থানীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের ধাওয়ায় স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা অনেকেই এলাকাছাড়া। অথচ তারাও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তারা আজ এলাকায় এসে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার চেষ্টা করবেন। মাঠে থাকতে চাইবেন।
মোহাম্মদপুরেও একটি ওয়ার্ডে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে সেখানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী রতনের কর্মী-সমর্থকরা বেশি মার খেয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়। প্রতিপক্ষ স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে সিনিয়র এক নেতা কাজ করায় কোণঠাস আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্র্থীর লোকজন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মুর্তাজাকে পুলিশ গতকাল ব্যাপক হয়রানি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মুর্তাজার পক্ষের লোকজন অভিযোগ করেছেন, সরকার সমর্থক প্রার্থীর একটা অপকৌশল এটি। ভয় দেখানো হচ্ছে পুলিশ দিয়ে। ওই কেন্দ্রেও আজ সহিংতার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।
মহানগর দক্ষিণ ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুস সবুর খান ও তার সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে সরকার সমর্থিত প্রার্থী মাহমুদুল হাসান পলিনের লোকজনের বিরুদ্ধে। সবুর খানও স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কোনো কোনো এলাকায় বেলা ১১টার মধ্যে বড় ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে, যাতে সাধারণ ভোটাররা ভয়ে কেন্দ্রে না যায়। তবে সাধারণ ভোটারদের নিরাপত্তার বিষয়ে কথা বলেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার। তিনি বলেছেন, ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে পুলিশ। আর নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় সে দিকটিও দেখবে পুলিশ।
মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেছেন, কোনো সহিংস ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে অনুষ্ঠিত হয় সে বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে।